শনিবার, ১ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

চোরাপথে ঢুকছে নিম্নমানের চা, হুমকিতে দেশীয় শিল্প

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) গত এপ্রিলে সীমান্ত এলাকা দিয়ে পাচার হয়ে আসা প্রায় ৬ হাজার ৮০০ কেজি নিম্নমানের চা পাতা আটক করেছে। গত বছরের আগস্টে পঞ্চগড় সীমান্তে বিজিবির হাতে ধরা পড়ে পাচার করা আরও প্রায় ১ হাজার কেজি চা পাতা। অভিযোগ উঠেছে, দেশের কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে দেদার পাচার হয়ে ভারতীয় চা পাতা বাংলাদেশে আসছে।

যশোর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, রংপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বৃহত্তর সিলেটের চুনারুঘাটসহ কয়েকটি      সীমান্ত ছাড়াও ফেনীর ছাগলনাইয়া, খাগড়াছড়ির রামগড় সীমান্ত দিয়েও বিপুল পরিমাণ চা পাতা দেশে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে একদিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে হুমকির মুখে পড়েছে দেশীয় চা শিল্প। বাংলাদেশীয় চা সংসদ সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে চোরাপথে বাজারে নিম্নমানের চা পাতা পাচারের এ তথ্য তুলে ধরেছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ১৪ মে পর্যন্ত চট্টগ্রামের চা নিলাম কেন্দ্রে তিনটি নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি নিলামে মারাত্মকভাবে দরপতন হয়েছে। যার ফলে নিলামে উঠানো দেশীয় চা অবিক্রীত রয়েছে। চা সংসদের চেয়ারম্যান এম. শাহ আলম উল্লেখ করেন, ইদানীং লক্ষ্য করা যাচ্ছে বিনা শুল্কে বর্ডার হাটকে কেন্দ্র করে কিছু মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ী অবাধে কম মূল্যের নিম্নমানের চা বাংলাদেশে পাচার করছে। পার্শ্ববর্তী দেশের প্যাকেটজাত ও বস্তাভর্তি খোলা চা অবাধে বিক্রি হচ্ছে। এতে দেশের চায়ের উৎপাদন, ভোগ এবং বাজারজাতকরণে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। 

পাচারকৃত নিম্নমানের কম দামের চা অবাধে বাজারে বিক্রি হওয়ায় দেশে উৎপাদিত চায়ের চাহিদা ও দাম কমে গেছে- এমন অভিযোগ করে চা সংসদ বলছে, বর্ডারহাট ও চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশে পাচার হওয়া নিম্নমানের চা দেশের চা শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। অবাধে নিম্নমানের চা যাতে দেশে অবৈধভাবে ঢুকতে না পারে সে জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে বাণিজ্য সচিবকে উদ্দেশ করা চিঠিতে। বাণিজ্য সচিব মো. মফিজুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে দেশের বাইরে থাকায় এ বিষয়ে তার মন্তব্য জানা যায়নি। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের (এফটিএ বিভাগের) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে চা পাতা পাচারের অভিযোগ উঠলেও বর্ডার হাট দিয়ে চা পাতা পাচারের কোনো অভিযোগ তাদের কাছে আসেনি। আর দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নিয়মের কড়াকড়ির মধ্যে বর্ডারহাটে কেনাবেচা হওয়ায় কোনো ধরনের চোরাচালানি সম্ভব নয় বলেও জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ টি বোর্ডের সচিব কুল প্রদীপ চাকমা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ত্রিপুরা ও মেঘালয় সীমান্ত দিয়ে কিছু চা পাতা বাংলাদেশে পাচারের অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমরা বিজিবি মহাপরিচালককে অনুরোধ জানিয়েছি। টি বোর্ডের এই কর্মকর্তা বলেন, চা পাতা পাচার প্রতিরোধের দায়িত্ব আমাদের নয়, তারপরও আমরা মাঝেমধ্যে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। সম্প্রতি অভিযোগ পাওয়ার পর ঝিনাইদহে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে সেখানকার জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছি। এ ছাড়া মাঝেমধ্যে আমরা ক্রেতা সেজেও দেখি নিলামের বাইরে চা বেচাকেনা হচ্ছে কিনা। এরপরও যদি চা পাতা পাচারের অভিযোগ আসে আমরা খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেব। চা বোর্ডের হিসাবে গত বছর দেশে চা উৎপাদন হয়েছে ৮ কোটি ২১ লাখ কেজি। ২০১৭ সালে চা উৎপাদন হয়েছিল ৭ কোটি ৮৯ লাখ কেজি। গত বছরের চেয়ে উৎপাদন বেড়েছে ৩১ লাখ কেজি বা ৪ শতাংশ। চা উৎপাদনে একধাপ অগ্রগতি হয়েছে বাংলাদেশের। চলতি বছরের শুরুতেই দেশের চা শিল্প নিয়ে খুশির খবর বয়ে আনে লন্ডনভিত্তিক ‘ইন্টারন্যাশনাল টি কমিটি’। তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, চা উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে নবম। এর আগে কয়েক বছর ধরেই দশম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। সংস্থাটির হিসাবে চা উৎপাদনে এখন শীর্ষে চীন, তারপরই ভারতের অবস্থান। এরপর রয়েছে কেনিয়া, শ্রীলঙ্কা, তুরস্ক, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও আর্জেন্টিনা। বাংলাদেশের নিচে আছে জাপান, উগান্ডা, নেপাল, ইরান, মিয়ানমারের মতো দেশগুলো। তবে নিম্নমানের চা পাচারের কারণে দেশের এই উৎপাদন প্রবৃদ্ধি হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন  দেশীয় চা শিল্প সংশ্লিষ্টরা।

সর্বশেষ খবর