শনিবার, ১৫ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

মিস্ত্রিপাড়ায় তৈরি হচ্ছে চার লাখ ক্রিকেট ব্যাট

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

মিস্ত্রিপাড়ায় তৈরি হচ্ছে চার লাখ ক্রিকেট ব্যাট

যশোর-খুলনা মহাসড়ক ধরে ১৫ কিলোমিটার গেলেই ডান দিকে পড়ে সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রাম। এই গ্রামেরই মিস্ত্রিপাড়া এখন ব্যাটের গ্রাম। প্রায় তিন যুগ ধরে গ্রামটি এ নামেই পরিচিতি পাচ্ছে। কারণ ক্রিকেট খেলার অন্যতম প্রধান উপকরণ ব্যাট তৈরি করে এই গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছেন।

৩৫ বছর আগের কথা। ১৯৮৪ সালে এই গ্রামেরই বাসিন্দা সঞ্জিত মজুমদার ভারতের পশ্চিমবঙ্গে দিদির বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে কাঠের নানারকম কাজ দেখতে পান। পরে দেশে ফিরে সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু করার কথা চিন্তা করতে থাকেন। ক্রিকেটভক্ত সঞ্জিত এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেন, তিনি ক্রিকেট ব্যাট তৈরি করবেন। ১৯৮৬ সালে ভাইপোকে নিয়ে শুরু করেন ব্যাট তৈরি। প্রথমে শুধু যশোরের বাজারেই তিনি এ ব্যাট বিক্রি করতেন। দামে কম এবং মান ভালো হওযায় ব্যাটের চাহিদা বাড়তে থাকে। যশোর ও আশপাশের এলাকা তো বটেই, উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়তে থাকে এই ব্যাট। সঞ্জিতের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে মিস্ত্রিপাড়ার অনেকেই শুরু করেন ব্যাট তৈরি। এখন আর শুধু মিস্ত্রিপাড়া নয়- আশপাশের মহাজেরপাড়া, বলরামপুর, রুদ্রপুর গ্রামেও গড়ে উঠেছে ৬০-৬৫টি ব্যাট তৈরির কারখানা। এসব কারখানায় বছরে সাত ক্যাটাগারিতে প্রায় চার লাখ পিস ব্যাট তৈরি হচ্ছে। এসব ব্যাটের পাইকারি মূল্য ২০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে।

দীর্ঘদিন ধরে নিজের কারখানায় ব্যাট তৈরি করছেন মিস্ত্রিপাড়ার তরিকুল ইসলাম। তিনি জানান, বছরে তার কারখানায় ১৬ হাজার ব্যাট তৈরি হয়। ভালো মানের একটি ব্যাট তৈরি করতে ৭০-৭৫ টাকার কাঠই লাগে। এরপর আছে শ্রমিকের মজুরি, হাতল, গ্রিপার, স্টিকার, পলিথিনসহ আরও অনেক কিছুর খরচ। তরিকুল জানান, তারা সাধারণত নিম, ছাতিয়ান, কদম, পিউলি, পুয়ো, ডেওয়া প্রভৃতি গাছের কাঠ দিয়ে ব্যাট তৈরি করেন। তিনি বলেন, ‘২০-৩০ বছরের অভিজ্ঞতা হওয়ায় আমরা এখন খুব সহজেই বিশ্বমানের ব্যাট তৈরি করতে পারব। সাকিব, তামিম, কোহলিরা যে ব্যাটে ক্রিকেট খেলেন সেগুলোই উইলো কাঠে তৈরি হয়। যদি বিদেশ থেকে এই উইলো কাঠ আমদানি করা যায়, তাহলে আমরা খুব সহজেই কম খরচে বিশ্বমানের ব্যাট তৈরি করতে পারব, যেগুলো বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।’ ব্যাট তৈরির কারখানাগুলোতে কর্মসংস্থান হয়েছে কয়েকশ শ্রমিকের। একশ ব্যাট তৈরি করে দিলে তারা এক থেকে দেড় হাজার টাকার মজুরি পেয়ে থাকেন। একজন শ্রমিক সপ্তাহে চারশ ব্যাট তৈরি করতে পারেন। এই গ্রামেরই সুবল মজুমদার জানান, তারা টেনিস বলে ক্রিকেট খেলার উপযোগী ব্যাটই কেবল তৈরি করেন। পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন, চৈত্র- বছরের এই চার মাস ব্যাটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। এ সময়ে সব কারখানা সচল থাকে। বছরের অন্য মাসগুলোতে ব্যাট তৈরি করে মজুদ করে রাখেন তারা। এগুলো যশোর ও আশপাশের এলাকার চাহিদা মিটিয়ে বগুড়া, দিনাজপুর, রংপুরসহ দেশের অন্য জেলাতেও বিক্রি হচ্ছে। তারা এখন এই কর্মযজ্ঞের দিকে সরকারের দৃষ্টি চান। কারখানা বড় করতে ও উৎপাদন বাড়াতে সহজ শর্তে ঋণ এবং উইলো কাঠ আমদানির ব্যবস্থা করতে তারা সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা কামনা করছেন। এ ছাড়া তাদের গ্রামের একমাত্র রাস্তাটির অবস্থাও বেহাল। এ রাস্তাটিও পাকা করার জন্য তারা সরকারের কাছে দাবি করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর