সোমবার, ৮ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

রামবুটান চাষে সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে রাঙামাটিতে

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

রামবুটান চাষে সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে রাঙামাটিতে

বিদেশি ফল রামবুটান। মালয় ভাষায় এর অর্থ চুল। এ ফলের খোসার উপরিভাগে শত শত চুল দিয়ে আবৃত থাকায় দেখতে অনেকটা কদমফুলের মতো। কাঁচা অবস্থায় সবুজ। পাকলে উজ্জ্বল লাল, কমলা কিংবা হলুদ। দেখতে অনেকটা লিচুর মতো। তবে লিচুর চেয়ে আকারে বড়। ডিম্বাকৃতির, কিছুটা চ্যাপ্টাও। দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, স্বাদেও তেমন মজাদার। রসালো এ ফলের গন্ধও অতুলনীয়। তাই এর নাম রামবুটান। সম্ভাবনাময় এই রামবুটান চাষ ছড়িয়ে পড়ছে রাঙামাটিতে। ফলনও হচ্ছে বাম্পার। চাহিদা বেশি, তাই ভালো দাম পাওয়ায় রামবুটান চাষে আগ্রহী পাহাড়ের অনেক কৃষক। রাঙামাটি রাঙাপানি এলাকার বাসিন্দা সময়ন চাকমা ২০০৭ সালে শখের বসে নিজ বাগানে লাগিয়েছিলেন রামবুটান চারা। সেই চারা বড় হতে সময় লাগে প্রায় ৫ থেকে ৬ বছর। এরপর শুরু হয় ফলন আসা। প্রথমে তেমন ফলন না হলেও বছরের সঙ্গে বাড়তে থাকে উৎপাদন। চলতি বছর তার রামবুটান গাছে বাম্পার ফলন হওয়ায় চমক সৃষ্টি হয়েছে। বিদেশি এ ফল  চাষে এখন সফল তিনি। রামবুটান গাছে সাড়ে পাঁচ থেকে আট হাজার ফল পাওয়া যাচ্ছে। চাহিদা অনেক থাকায় ফল বিক্রি হচ্ছে ব্যাপক। শুধু তাই নয়, তিনি রামবুটানের চাষ ছড়িয়ে দিয়েছেন পাহাড়ের অন্যান্য চাষিদের মধ্যেও। গাছের চারা বিক্রি করে এরই মধ্যে আয় করেছেন লাখ টাকা। সময়ন চাকমা জানান, তার রামবুটান চারা পাহাড়ে এখন সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু পার্বত্য জেলা রাঙামাটি নয়, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের চাষিরা সংগ্রহ করেছে রামবুটান চারা। চলতি বছর প্রতি পিস ৯০ থেকে ১২০ টাকা করে প্রায় লাখ টাকার চারা গাছ বিক্রি করেছেন। পাহাড়ি মাটিতে রামবুটান চাষের ফলন বেশি হওয়ায় চাষাবাদে আগ্রহ বাড়ছে অন্য চাষিদের মাঝেও। রামবুটান ফল কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। সাধারণত মার্চ মাসে রামবুটান গাছে ফুল ফোটা শুরু হয়। এপ্রিল মাসে সবুজ রঙের ফল ধরতে শুরু করে। ফুল ফোটার ৩-৪ মাস পর জুলাই-আগস্ট মাসে ফল পাকে। পুষ্ট হলে সবুজ রঙের ফল হঠাৎ করে লাল,  মেরুন রঙে রূপান্তর হতে থাকে। এ অবস্থা শুরু হওয়ার ১৫-২০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করতে হয়। রামবুটান ফলনে রাঙামাটির আরেক সফল চাষি ডা. উদয় শেকর  দেওয়ান। কয়েক বছর আগে মালয়েশিয়া থেকে নিয়ে আসেন রামবুটান ফলের বীজ। পরীক্ষামূলকভাবে বাড়ির আঙিনায় বীজ রোপণ করলে এই বীজ থেকে গাছ বড় হতে তেমন সময় লাগেনি। বছরখানেকের মধ্যে শুরু হয় ফল উৎপাদন। সে গাছ থেকে বীজ উৎপাদন করে তিনিও রাঙামাটির রাঙাপানি এলাকায় বাগান করেছেন রামবুটানের। আশা করছেন আগামী বছরের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে আসতে পারে তার বাগানে রামবুটানের ফলন। বিদেশি এই ফলের গাছ দেখতে আগ্রহী কৃষকরা আসছেন তার বাগানে। চাষে খরচ কম হওয়ায় চারা সংগ্রহ করে অনেক কৃষক রামবুটান চাষ শুরু করছেন। রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক পবন কুমার চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে রামবুটান চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এখনো এ জেলায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়নি। তাছাড়া সব ধরনের মাটিতে এ ফল চাষ করা যায়। তাই কৃষি কর্মকর্তার রামবুটান চাষ করার জন্য কৃষকদের উ™ভূত করতে কাজ করছে। আশা করি কয়েক বছরের মধ্যে পার্বত্যাঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে রামবুটান চাষ ব্যাপকতা লাভ করবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর