বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভেসে এলো সাত লাশ

কক্সবাজার প্রতিনিধি

পাঁচ দিন আগে সাগরে ট্রলার ডুবির পর গতকাল কক্সবাজার শহরের সমুদ্র উপকূলের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে মাছ ধরা ট্রলারসহ সাতজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ওই ট্রলারের মাঝিসহ দুজনকে জীবিত পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আরও আট জেলে নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে।

গতকাল ভোর ৫টা থেকে সকাল ১০টার মধ্যে সাত দেহ পাওয়া গেছে। কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের এএসপি ফখরুল করিম জানান, গতকাল ভোর সাড়ে ৪টার দিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে ভাঙাচোরা একটি মাছ ধরার ট্রলার ভেসে আসার খবর পাওয়া যায়। পরে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে প্রথমে ট্রলারটির আশপাশে চারটি মরদেহ ভাসমান অবস্থায় এবং পরে সকাল ৮টার দিকে আরও দুটি মরদেহ ট্রলারের পাটাতনের ওপর পাওয়া যায়। দুই ঘণ্টা পর সকাল ১০টার দিকে লাবণী পয়েন্টে আরও একটি মরদেহ পাওয়া যায়। অন্যদিকে সকাল ৬টার দিকে সৈকতের ডায়াবেটিস হাসপাতাল পয়েন্ট থেকে একজন ও নাজিরার টেক থেকে একজন জেলেকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেন লাইফ গার্ডের উদ্ধার কর্মী ও এলাকাবাসী। লাইফ গার্ডের উদ্ধার কর্মী রশিদ আহমদ জানান, লাবণী পয়েন্টের তীরবর্তি সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় একজনকে উদ্ধার করা হয়। তখন তিনি বেঁচে ছিলেন, জ্ঞান ছিল তার। একইভাবে এলাকাবাসী নাজিরার টেক থেকে একজন উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। জীবিত উদ্ধার করা দুজন হচ্ছেন মনির মাঝি (পিতা মুগুল সর্দার) ও মো. জুয়েল (পিতা ওয়াজ উদ্দিন ফিটার)। দুজনই ভোলার চরফ্যাশনের পূর্ব মাদ্রাজ পাড়ার বাসিন্দা। তাদের মধ্যে মনির মাঝি ওই ট্রলারের মাঝি, আর জুয়েল ট্রলারের মালিকের ছেলে। তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, গত ৪ জুলাই ভোলা চরফ্যাশনের শামরাজ ঘাট থেকে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে তারা সাগরে পাড়ি দেন। তারা মোট ১৭ জন ট্রলারে ছিলেন। ৬ জুলাই ভোরে হঠাৎ ঝড়ো হাওয়া ও উত্তাল ঢেউয়ের কবলে পড়ে ট্রলারটি উল্টে যায়। এরপর কে কোথায় হারিয়ে গেছে তা জানা যায়নি। এ সময় মনির মাঝি ও জুয়েল ট্রলার ধরে রাখেন। সাগরের ঢেউয়ের ধাক্কায় একবার ট্রলার থেকে ছিটকে পড়েন, তারপরও আবার ধরে থাকেন। এভাবে তারা তিন দিন ট্রলার ধরে বাঁচার চেষ্টা করেন। পরে উত্তাল ঢেউয়ের ধাক্কায় ট্রলার থেকে ছিটকে দূরে চলে যান দুজন। তারা সাগরে ভেসে থাকার চেষ্টা করেন। এক সময় সাগরের তীরে পৌঁছলে কক্সবাজারের স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তারা বলেন, হাসপাতালে এসে সাতজন জেলের মৃতদেহ পাওয়ার খবর পাই। তারা জানান, ট্রলারে ফয়জুল্লাহ, জিয়াদ, সেলিম মিস্ত্রি, বেলায়েত, তৌসিফ, জাহাঙ্গীর, মাসুদ, ওলিউল্লাহসহ তারা ১৭ জন ছিলেন। কক্সবাজার মডেল থানার ওসি (তদন্ত) খাইরুজ্জামান জানান, খবর পেয়ে এসব লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এই ঘটনার খবর পেয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এইচ এম মাহফুজুর রহমান সদর হাসপাতালে জীবিত উদ্ধার হওয়া দুই জেলেকে দেখতে যান। তিনি জানান, তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়েছে। আর যারা এখনো নিখোঁজ রয়েছে তাদের সন্ধান করা হচ্ছে। মৃতদেহগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর