শনিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

সারা দেশে অবনতি বন্যার

তিনজনের মৃত্যু, বানভাসি মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সারা দেশে অবনতি বন্যার

বন্যায় ডুবে গেছে সিলেটের তেলিখান ইউনিয়নের প্রায় সব রাস্তা (বামে)। প্লাবিত হয়ে গেছে বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কের সাতকানিয়া বাজার -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সারা দেশে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কক্সবাজারের উখিয়ায় মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড়ি ঢলে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। জামালপুরের বকশীগঞ্জে ঢলের পানিতে ডুবে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বিকাল পর্যন্ত নীলফামারীতে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে টাঙ্গাইলের একটি ওয়ার্ড নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গাইবান্ধার বিভিন্ন পয়েন্টে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। জেলার নিম্নাঞ্চলের অসংখ্য গ্রাম, ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নেত্রকোনায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। দেড় শতাধিক স্কুলে পানি ঢুকে পড়ায় পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে। মেঘনার ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের চকবাজার। বিভিন্ন স্থানে বানভাসি মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে। বান্দরবানের বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। পাহাড়ধসের আশঙ্কায় দুই দিনের জন্য সাজেক ভ্রমণ বাতিল ঘোষণা করেছে কটেজ মালিক সমিতি অব সাজেক। সিলেটের সবকটি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- বান্দরবান : পার্বত্য    জেলা বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। জেলা সদর ও লামা উপজেলার ৮০ ভাগ এলাকায় বানের পানি ঢুকে পড়েছে। সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ৮০ থেকে ৯০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ১২৬ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে প্রায় ১০ হাজার মানুষ। পাহাড়ি ঢলে ভেসে গেছে ৫ শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি। বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় ১২৩ প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শহরের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সড়কে পানি উঠায় বান্দরবানের সঙ্গে চতুর্থ দিনের মতো সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। পাহাড়ধসে অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো অধিকাংশ বন্ধ হয়ে গেছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। পাহাড়ধসের আশঙ্কায় ১২-১৩ জুলাই রাঙামাটির সাজেকে পর্যটকদের ভ্রমণ না করার আহ্বান জানিয়েছে কটেজ মালিক সমিতি অব সাজেক।  কক্সবাজার : পাহাড়ি ঢলে উখিয়ায় দুই রোহিঙ্গা শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে ১৪ নম্বর হাকিমপাড়া রোহিঙ্গা শিবির থেকে লাশ দুটি উদ্ধার করা হয়েছে। উখিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নুরুল ইসলাম জানান, নিহতরা হলো –উখিয়ার ১৪ নম্বর হাকিমপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরের ১৬ নম্বর ব্লকের আবদুস সালামের ছেলে আনোয়ার সাদেক (৭) ও তার ভাই আনোয়ার ফয়সাল (৬)। বৃহস্পতিবার সকালে পালংখালী ইউনিয়নের হাকিমপাড়া খেলার মাঠে খেলতে যায় দুই রোহিঙ্গা শিশু। সারা দিন ঘরে না ফেরায় পরিবারের সদস্যরা খুঁজতে বেরিয়ে রাতে ওই এলাকায় পাহাড়ি ঢলে ভাসমান অবস্থায় দুই শিশুকে দেখতে পায়। জামালপুর : জামালপুরের বকশীগঞ্জে পাহাড়ি ঢলে নূর হোসেন (৭০) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। নীলফামারী : পাহাড়ি ঢল আর ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে গত কয়েক দিন থেকে তিস্তা নদীতে বেড়েছে পানির প্রবাহ। শুক্রবার বিকালেও (বেলা ৩টায়) বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় নদীটির ডালিয়া পয়েন্টে।  টাঙ্গাইল : জোয়ারের পানির কারণে যমুনায় দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। ফলে বর্ষার শুরুতেই যমুনার পেটে যাচ্ছে যমুনা তীরবর্তী টাঙ্গাইলের মামুদনগর ইউনিয়নের ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি। গাইবান্ধা : গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে গাইবান্ধার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। জেলা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের বেশকিছু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে গত ১৫ দিনে বিলীন হয়েছে সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দুই শতাধিক বসতভিটা, আবাদি জমি ও গাছপালা। বগুড়া : কয়েক দিনে ভারি বর্ষণ ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানি বাড়তে শুরু করেছে। পানি বাড়ার কারণে চর অঞ্চলের কিছু মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। লালমনিরহাট : ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি দোয়ানি পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নেত্রকোনা : ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার দুর্গাপুর, বারহাট্টা ও কলমাকান্দা উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যার কবলে তিন উপজেলার তিন শতাধিক গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। দেড় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকছে। দক্ষিণ চট্টগ্রাম : টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, আনোয়ারা, পটিয়া, চন্দনাইশ ও বোয়ালখালী উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বানভাসি মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ লক্ষাধিক। এসব উপজেলার সবকটি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সাতকানিয়ার বাজালিয়া মীরেরপাড়া এলাকায় শঙ্খ নদের বাঁধ  ভেঙে তীব্র স্রোতে পানি ঢুকে পড়ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ৩০০ বছরের প্রাচীন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের চকবাজার মেঘনার ভাঙনে ক্রমে বিলীন হতে চলেছে। ইতিমধ্যে বাজারের বিরাট একটি অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। প্রতিদিনই ভাঙনের কবলে রয়েছে এই বাজারটি। সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর ভাঙনে বসতভিটা-ফসলি জমি বিলীন হয়ে নিঃস্ব ও সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছে নদী তীরবর্তী মানুষ। মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে ভাঙনকবলিতরা খোলা আকাশ ও অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে অমানবিক জীবনযাপন করছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর