এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা-২০১৯-এর ফল গতকাল প্রকাশিত হয়েছে। সারা দেশে ১৩ লাখ ৩৬ হাজার ৬২৯ ছাত্র-ছাত্রী এসব পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে ৯ লাখ ৮৮ হাজার ১৭২ জন পাস করেছে। পরীক্ষায় পাসের হার ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৭ হাজার ২৮৬ জন শিক্ষার্থী। গতকাল সকালে ফল প্রকাশ উপলক্ষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফলাফলের অনুলিপি তুলে দেন। পরে বেলা ১টায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী। গত বছর সারা দেশে ১২ লাখ ৮৮ হাজার ৭৫৭ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮০১ জন পাস করেছিল। গত বছরের চেয়ে এ বছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি পাশের হারও বেড়েছে। বেড়েছে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যাও। গতবারের তুলনায় এবার ১ লাখ ২৯ হাজার ৩৭১ জন বেশি পাস করেছে। গত বছর পাসের হার ছিল ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। গত বছরের চেয়ে এ বছর পাসের হার বেড়েছে ৭ দশমিক ২৯ শতাংশ। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ২৯ হাজার ২৬২ জন শিক্ষার্থী। গতবারের চেয়ে এবার জিপিএ-৫ বেড়েছে ১৮ হাজার ২৪টি। দুপুরে ফল প্রকাশের পর ভালো ফল করা শিক্ষার্থীরা নেচে-গেয়ে উৎসব করে কলেজগুলোতে। ঢাকঢোল পিটিয়ে, বাদ্য বাজিয়ে ফলাফল উদ্্যাপন করে তারা। রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে ১ হাজার ৫৮৯ জন এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ পাস করেছে। কলেজের ১ হাজার ১২২ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। রাজধানীর ডেমরায় শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ৭৯৬ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ পাস করেছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৪২ জন। গত বছর এইচএসসিতেও শতভাগ পাস করে এ প্রতিষ্ঠানটি। কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা বলেন, শিক্ষকদের সঠিক দিকনির্দেশনা আর শিক্ষার্থীদের অধ্যবসায়ে বরাবরই ভালো করছে এ প্রতিষ্ঠান। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় ১ হাজার ৯২৫ জন অংশ নিয়ে ৯৯ দশমিক ৩২ ভাগ পাস করেছে। ৭৭৫ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। মাইলস্টোন কলেজ থেকে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে ২ হাজার ২১১ জন ছাত্র-ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ পাস করেছে। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮৪৮ জন। অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. সহিদুল ইসলাম বলেন, সুন্দর পাঠপরিকল্পনা আর দিকনির্দেশনার ফলে শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করছে। যাত্রাবাড়ীতে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের বিভিন্ন বিভাগ থেকে ১ হাজার ৩২৩ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ পাস করেছে। এদের মধ্যে ২৯৭ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
শতভাগ পাস ৯০৯ কলেজে, ৪১টিতে সবাই ফেল : সারা দেশে ৯০৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সব শিক্ষার্থীই পাস করেছে। ৪১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি। গত বছর এইচএসসি ও সমমানের ৫৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি। গত বছর ৪০০ প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী পাস করেছিল। সেই হিসাবে এবার শতভাগ শিক্ষার্থী ফেল করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে, শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে।
বিদেশ কেন্দ্রে পাসের হার ৯৪.০৭% : বিদেশের আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ২৭০ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ২৫৪ জন। পাসের হার ৯৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২৬ জন। গত বছর বিদেশের কেন্দ্রগুলো থেকে ৯২ দশমিক ২৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল।
পাসে এগিয়ে মেয়েরা, জিপিএ-৫-এ ছেলেরা : এইচএসসি ও সমমানের ফলাফলে পাসের দিক দিয়ে মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। তবে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকে এগিয়ে গেছে ছেলেরা। দেখা গেছে, ৭১ দশমিক ৬৭ শতাংশ ছাত্র ও ৭৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ ছাত্রী পাস করেছে। এ ছাড়া এ বছর ২৪ হাজার ৫৭৬ জন ছাত্র ও ২২ হাজার ৭১০ জন ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে পাঁচ বছর ধরেই এই পরীক্ষায় ছাত্রীরা ধারাবাহিকভাবে ছাত্রদের চেয়ে বেশি পাস করছে।
পাসের ক্ষেত্রে এগিয়ে কুমিল্লা : দেশের আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড। এ বোর্ডে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ। সবচেয়ে পাসের হার কম চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে। এখানে ৬২ দশমিক ১৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। এ ছাড়া ঢাকা বোর্ডে ৭১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, রাজশাহী বোর্ডে ৭৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ, যশোর বোর্ডে ৭৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ, বরিশাল বোর্ডে ৭০ দশমিক ৬৫ শতাংশ, সিলেট বোর্ডে ৬৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ এবং দিনাজপুর বোর্ডে ৭১ দশমিক ৭৮ শতাংশ পাস করেছে।
মাদ্রাসা ও কারিগরি : মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে ৮৬ হাজার ১৩৮ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৭৬ হাজার ২৮১ জন। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ১ লাখ ২৪ হাজার ৩২০ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ১ লাখ ২ হাজার ৭১৫ জন।
পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন শুরু ১৮ জুলাই : এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন ১৮ জুলাই থেকে শুরু হবে। আগামী ২৪ জুলাই পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। টেলিটক মোবাইল অপারেটর থেকে মেসেজ অপশনে গিয়ে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিনটি অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল লিখে স্পেস দিয়ে বিষয় কোড লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, যারা পরীক্ষায় ফেল করেছে তাদের হতাশ হওয়ার কারণ নেই। নব উদ্যমে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে আগামীতে পরীক্ষা দিয়ে সফলকাম হতে হবে।