শনিবার, ২০ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রবাসে যাওয়ার আগ্রহ হারাচ্ছেন নারী শ্রমিকরা

জিন্নাতুন নূর

প্রবাসে যাওয়ার আগ্রহ হারাচ্ছেন নারী শ্রমিকরা

বিদেশে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে যাওয়ার আগ্রহ কমছে বাংলাদেশের নারী শ্রমিকদের। বিদেশে গৃহকর্তা-গৃহকর্ত্রীর অমানুষিক নির্যাতন এর পেছনে অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া নির্যাতনের শিকার নারীদের পরিণতি দেখে অনেক নারী বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ হারাচ্ছেন। সম্প্রতি বিদেশ থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী দেশে ফেরত এসেছেন। উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে গত ছয় মাসে ৬০ জন নারী শ্রমিকের লাশ দেশে আনা হয়েছে। যার মধ্যে ১৭ জন নারী শ্রমিক আত্মহত্যা করেন। মূলত ২০১৮ সাল থেকেই বিদেশগামী নারী শ্রমিকের সংখ্যা কমছে। যার প্রভাব পড়ে ২০১৯ সালের প্রথম ছয় মাসেও।

এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং (বিএমইটি)-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রবাসে নারীদের কাজ করার পরিসংখ্যান বলছে ২০১২ সালে ৩৭ হাজার ৩০৪ জন দেশের বাইরে গিয়েছিলেন। ২০১৭ সালে এটি তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ২১ হাজার ৯৪০ জনে দাঁড়ায়। এ বছর বাংলাদেশ থেকে রেকর্ড সংখ্যক নারী বিদেশে কাজ করতে যান। কিন্তু বিদেশে যাওয়ার এই হার পরের বছর কমে আসে। রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ (রামরু) ইউনিট এর ‘বাংলাদেশ থেকে শ্রম অভিবাসনের গতি প্রকৃতি ২০১৮’-এর গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১৫ সালে আগের বছরের তুলনায় নারীকর্মীদের বিদেশ যাওয়ার হার ৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। ২০১৬ সালে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৬ শতাংশ। ২০১৭ সালে তা ছিল ১২ শতাংশ কিন্তু ২০১৮ সালে বিদেশগামী নারীকর্মীর সংখ্যা কমে যায়। যা আগের বছরের তুলনায় ১৭ শতাংশ কম। নারী অভিবাসন কমে আসার পেছনে সংস্থাটি বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করে। ২০১৮ সালের মে মাস থেকে নিগ্রহের কারণে বেশ কিছু নারীকর্মী দেশে ফিরে আসতে শুরু করেন। সংবাদ মাধ্যমে এসব নিগ্রহের কারণ জানতে পেরে অনেক নারীকর্মী বিদেশ যেতে নিরুৎসাহ বোধ করেন। পরিসংখ্যান বলছে ২০১৮ সালে সর্বোচ্চ ৭৩ হাজার ৭১৩ জন নারী সৌদি আরবে যান। এরপর যথাক্রমে আরব আমিরাতে ২ হাজার ৪২৭ জন, কুয়েতে ১১৫ জন, ওমানে ১১ হাজার ৩৪ জন, জর্ডানে ৯ হাজার ১০০ জন, কাতারে ৩ হাজার ১৯৬ জন, বাহরাইনে ৫ জন নারী কাজ করতে যান।

রামরুর তথ্যে, নির্যাতনের কারণে গেল বছরের শুরু থেকে আনুমানিক ৮০০ জন নারী শ্রমিক দেশে ফেরেন। সৌদি আরবের সেফ হোমে এখনো অনেক নারী দেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে। শারীরিক নির্যাতনের ছাপ নিয়ে বহু নারীকর্মী দেশে ফিরেছেন। তবে বেশিরভাগ নারীকর্মী অভিযোগ করেন যে তাদের ওপর বাড়ির মহিলা কর্ত্রী শারীরিক অত্যাচার করত। বিদেশে কাজ করতে যাওয়া নারী শ্রমিকদের কয়েকটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নারী শ্রমিক, বিশেষ করে যাদের মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে তারা জানান, গৃহস্থালি কাজের জন্য তাদের ঠিকভাবে খেতে দেওয়া হয় না। এমনকি তাদের পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগও নেই।

রামরুর চেয়ারম্যান ড. তাসনিম সিদ্দিকী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের হার কমে যাওয়ার একটি কারণ হচ্ছে সৌদি আরবে নারী শ্রমিকদের ওপর যে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে তাতে অনেক শ্রমিক বিদেশে যেতে ভয় পাচ্ছে। এ ছাড়া নারী শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোও এখন আগের থেকে বেশি কঠোর। তিনি বলেন, নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গিয়ে যদি নারী শ্রমিকদের সংখ্যা কিছুটা কমেও যায় এতে চিন্তার কোনো কারণ নেই। সরকারকে বরং শুধু গৃহকর্মী হিসেবে নারীদের বিদেশে না পাঠিয়ে নতুন বাজারগুলোতে দক্ষ নারী শ্রমিক কীভাবে পাঠানো যায় সেটি দেখতে হবে।

সর্বশেষ খবর