বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার আসামি স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন করেছেন তার আইনজীবীরা। এর আগে বরগুনার আদালতে দুই দফা তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়েছিল। গতকাল জামিন আবেদনটি হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় দাখিল করা হয়েছে বলে জানান মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। আবেদনটির ওপর আজ বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত অবকাশকালীন হাই কোর্ট বেঞ্চে শুনানি হবে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন। গতকাল আদালতে আবেদনটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করে মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা। এ মামলায় মিন্নি চাক্ষুষ সাক্ষী। অথচ মামলার ১২ নম্বর আসামির বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে আসামি করা হয়েছে। অবশ্যই এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা।’ রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেজাউল করিম এ সময় আদালতের কাছে সময়ের আবেদন করে বলেন, ‘এ মামলায় অ্যাটর্নি জেনারেল নিজে শুনানি করবেন। এ জন্য সময় প্রয়োজন।’ এরপর আদালত মঙ্গলবার জামিন আবেদনটি শুনানির জন্য রাখে। শুনানিতে মিন্নির পক্ষে আরেক আইনজীবী ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। কোন যুক্তিতে মিন্নির জামিন চাওয়া হয়েছে জানতে চাইলে জেড আই খান পান্না সাংবাদিকদের বলেন, প্রথমত তিনি একজন নারী এবং তিনি অসুস্থ। এ ছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারায় তার জামিন পাওয়ার অধিকার আছে। আর তিনি এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী। ষড়যন্ত্র করে তাকে গ্রেফতার ও আসামি করা হয়েছে। ২৬ জুন রিফাত শরীফকে বরগুনার রাস্তায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সে সময় স্বামীকে বাঁচাতে মিন্নির চেষ্টার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে আলোচনার সৃষ্টি হয়। পরদিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। এ মামলায় প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল মিন্নিকে। সম্প্রতি মিন্নির শ্বশুর তার ছেলের হত্যাকান্ডে পত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করলে আলোচনা নতুন দিকে মোড় নেয়। ১৬ জুলাই মিন্নিকে বরগুনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। পরদিন আদালতে হাজির করা হলে বিচারক মিন্নিকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। রিমান্ডের তৃতীয় দিন শেষে মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হলে সেখানে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলে পুলিশ জানায়। তবে বরগুনা সরকারি কলেজের এই স্নাতকের ছাত্রী ইতিমধ্যে জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে। নির্যাতন করে পুলিশ এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে বলে পরিবারের কাছে মিন্নি জানিয়েছেন।