মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

ত্রিশ কোটি ক্রেতার দিকে নজর বাংলাদেশের

দক্ষিণ আমেরিকার চার দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্য

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বিশ্বকাপ ফুটবলে লাতিন আমেরিকার প্রতিনিধিত্বকারী চারটি দেশ ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে ও প্যারাগুয়ের একটি জোট রয়েছে, যার নাম ‘মারকোসার’। এটি মূলত দক্ষিণ আমেরিকার ওই দেশগুলোর একটি বাণিজ্য জোট, যা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯১ সালে। এ জোটের বার্ষিক জিডিপি ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি। এখানে ক্রেতা বা ভোক্তার সংখ্যার প্রায় ৩০ কোটি। আর এই ৩০ কোটি ক্রেতার বাজার ধরতে এবার মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ। যে অঞ্চলটির ক্রেতাদের ধরতে চাইছে বাংলাদেশ, সেখানে শুল্কহার খুব বেশি। শতকরা প্রায় ১৪ ভাগ শুল্ক দিয়ে পণ্য রপ্তানি করতে হয়। ফলে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানির সুযোগ থাকলেও অতিরিক্ত শুল্কের কারণে ওই অঞ্চলে প্রত্যাশিত রপ্তানি হচ্ছে না। প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে লাতিন আমেরিকার ওই ৩০ কোটি ক্রেতার বাজার ধরবে বাংলাদেশ? সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানিপণ্য তৈরি পোশাকের ওপর উচ্চ হারে আমদানি শুল্ক রয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে। অতিরিক্ত শুল্কের কারণে কয়েক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি। এন্টিডাম্পিংয়ের কারণে পাটপণ্য রপ্তানিও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় সরকার নিয়েছে ভিন্ন কৌশল। সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ‘মারকোসার জোটভুক্ত’ লাতিন আমেরিকার চারটি দেশ আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, উরুগুয়ে ও প্যারাগুয়ের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ওই চারটি দেশকে যদি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে সম্মত করানো যায়, তবে সেখানে বাংলাদেশি পণ্য শূন্য শুল্কে রপ্তানির সুবিধা পাওয়া যাবে। শুল্কহার হ্রাস বা শূন্য করা সম্ভব হলে ওই অঞ্চলে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে। আর এ লক্ষ্যে মারকোসার জোটভুক্ত দেশগুলোর সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে ১৭ আগস্ট ঢাকা ছেড়েছেন।

জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মফিজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘লাতিন আমেরিকার মারকোসার জোটভুক্ত ওই চারটি দেশে প্রায় ৩০ কোটি ক্রেতা রয়েছে। এই বিশাল বাজারের শেয়ার যদি আমরা ধরতে পারি, তবে আমাদের রপ্তানি অনেকাংশে বেড়ে যাবে।’ জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরুর আগেই এর লাভ-ক্ষতির বিষয়টি পর্যালোচনা করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকের পাশাপাশি ট্যারিফ কমিশনকে একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। পরে চলতি বছরের শুরুর দিকে এফটিএ নিয়ে একটি প্রাথমিক সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন বা প্রাইমারি ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় ট্যারিফ কমিশন। ওই রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ মারকোসার রাষ্ট্রে ২০৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। বিপরীতে এসব দেশ থেকে আমদানি করেছে ২ হাজার ৩১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য। মূলত চিনি, ভোজ্য তেল, ভুট্টা, গম ও পশুখাদ্য আমদানি করা হয় ওই সব দেশ থেকে। ট্যারিফ কমিশন হিসাব করে দেখেছে, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করলে বাংলাদেশের আমদানি শুল্ক বাবদ বছরে রাজস্ব ক্ষতি হবে প্রায় ১১ মিলিয়ন ডলার। বিপরীতে যে পরিমাণ রপ্তানি বাড়বে, তাতে লাভ হবে প্রায় ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, হিমায়িত খাদ্য, ওষুধ, টেক্সটাইল ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে। সে জন্য মারকোসার জোটভুক্ত ওই চার দেশের সঙ্গে এফটিএ করার বিষয়ে ইতিবাচক মতামত দেয় ট্যারিফ কমিশন। সংশ্লিষ্টরা জানান, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পর বাংলাদেশ উন্নত দেশগুলোতে শুল্ক সুবিধা পাবে না। তখন রপ্তানি আয় বাড়াতে রপ্তানিপণ্যের বৈচিত্র্যকরণ ও নতুন বাজার অনুসন্ধানের কোনো বিকল্প নেই। সে ক্ষেত্রে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো হতে পারে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময় বাজার।

সর্বশেষ খবর