মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

দাম বৃদ্ধিতে সোনার বাজারে ক্রেতা কম

জিন্নাতুন নূর

দাম বৃদ্ধিতে সোনার বাজারে ক্রেতা কম

সামনেই বিয়ের মৌসুম। হিসাব অনুযায়ী বিয়েতে বর-কনের অলঙ্কার তৈরির ক্রয়াদেশ নিয়ে ক্রেতাদের এখন ছুটে যাওয়ার কথা স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের কাছে। কিন্তু রাজধানীর স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, সোনার বাজার এখন ‘ক্রেতাশূন্য’। খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ সোনার অলঙ্কার কিনছেন না বা তৈরি করছেন না। কারণ গত কয়েক মাস ধরেই সোনার বাজারে অস্থিরতা কাজ করছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে সোনার দাম। আর এই মূল্যবান ধাতুটির লাগাতার দাম বৃদ্ধিতে বাজারে বিরাজ করছে দুরবস্থা। ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ধারাবাহিক দাম বৃদ্ধির কারণে গত বছরের বিয়ের মৌসুমের তুলনায় এবার সোনার ব্যবসা ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমে গেছে। দেশে গত দুই মাসে মোট ছয় দফায় সোনার দাম বৃদ্ধি পায়। শুধু চলতি আগস্টেই সোনার দাম চারবার বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে প্রতি গ্রামের দাম দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৮৩২ টাকা। সর্বশেষ গত ২৭ আগস্ট ভালো মানের সোনার দাম বৃদ্ধি পেয়ে ভরিপ্রতি হয় ৫৮ হাজার ২৮ টাকা। ২০১২ সালের পর এই দাম এখন পর্যন্ত দেশের বাজারে সোনার সর্বোচ্চ দাম। ২০১২ সালে প্রতি ভরি সোনার দাম ৬০ হাজার টাকা ছাড়িয়েছিল।

সোনার বাজারের এই অস্থিরতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ব্যবসায়। স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা জানান, সোনার দাম লাগাতার বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবসায় বিরাট প্রভাব পড়েছে। এমনকি খুব শিগগিরই সোনার দাম আবারও বৃদ্ধি পেতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন তারা। ব্যবসায়ীরা আরও জানান, সোনার দাম অব্যাহত বৃদ্ধি পাওয়ায় বিয়ের গহনার জন্য যে ক্রেতারা আগে ১০ ভরি গহনা কিনবেন বলে ঠিক করেছিলেন, তারা এখন ৫ ভরি গহনা দিয়েই কাজ সারছেন। বাকিটা গোল্ড প্লেটেড গহনা দিয়ে পূরণ করা হচ্ছে। গতকাল রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ দোকানই ক্রেতাশূন্য। দুই-একজন যারা ছিলেন তারাও সোনার দাম সম্পর্কে খোঁজ ও নকশা যাচাই-বাছাই করছিলেন। ওই মার্কেটে মেয়ের বিয়ের গহনা কিনতে এসেছিলেন পুরান ঢাকার রমিজ শেখ। কথা হলে তিনি জানান, সোনার দাম যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে মেয়ের বিয়ের জন্য যে পরিমাণ গহনা দিবেন বলে ভেবেছিলেন তা কমিয়ে আনতে হবে।

সোনার দাম বৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতাকে দায়ী করেন। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরানের ওপর হামলার হুমকি, বিশ্বব্যাপী ডলারের লাগাতার দরপতন এবং বিশ্ব শেয়ারবাজারে দরপতনের জন্য সোনার দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে আজকালের মধ্যে সোনার দাম আবারও বৃদ্ধি পেতে পারে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সাধারণ সম্পাদক এবং ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সোনার দাম বৃদ্ধির ফলে চলতি বিয়ের মৌসুমে এখনো ক্রেতার কাছ থেকে তেমন সাড়া পাইনি। সাধারণত শীতের আগে এ সময়টায় বিয়ে উৎসবকে কেন্দ্র করে ক্রেতারা সোনার বাজার ঘুরে অফঙ্কার তৈরির যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করেন এবং গহনা তৈরির অর্ডার দেন। কিন্তু সোনার লাগাতার দাম বৃদ্ধির কারণে এই মৌসুমে ব্যবসা ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমে গেছে। ক্রেতারা অপেক্ষায় আছেন কখন আবার সোনার দাম কমবে। কিন্তু অবস্থা দেখে আশঙ্কা করছি শিগগিরই সোনার দাম আবার বৃদ্ধি পাবে। 

বাংলাদেশে বৈধভাবে সোনা আমদানি না হওয়ায় ব্যাগেজ রুলসের আওতায় বিদেশ থেকে আসা সোনা ও স্থানীয় বুলিয়ন মার্কেটের মাধ্যমে সোনার চাহিদা পূরণ হয়। আর বাজুস আন্তর্জাতিক বাজারদরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশে সোনার দাম নির্ধারণ করে। ব্যবসায়ীরা জানান, যদি সোনা সরাসরি আমদানি করা যেত তাহলে বর্তমান দরের চেয়ে ভরিতে ছয় হাজার টাকা কম হতো। সাধারণত দেশীয় ব্যবসায়ীরা স্থানীয় বুলিয়নদের কাছ থেকে যে দামে কেনেন সে দামেই সোনা বিক্রি করেন। তবে ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ¯¦র্ণ ব্যবসায়ীদের ডিলারশিপ দেওয়া হলে সোনার মূল্য কিছুটা কমবে।

সর্বশেষ খবর