২০০৪ সালে ডবলমুরিং নির্বাচন অফিসের অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ পান বাঁশখালীর জয়নাল আবেদীন (৩৫)। তার তথ্যমতে, ২০১৪ সাল থেকে জনপ্রতি ৫০-৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অবৈধ উপায়ে দেওয়া শুরু হয়। নির্বাচন কমিশনের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী যুক্ত থাকলেও মধ্যস্থতা করতেন জয়নাল। আর এ কাজের জন্য তিনিও মোটা অঙ্কের টাকার ভাগ পেতেন। এ পর্যন্ত অন্তত ১ হাজার ৮০০ রোহিঙ্গা নাগরিকের ভুয়া পরিচয়পত্র সরবরাহ করেছেন তিনি। এতে অবৈধভাবে কামিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। জয়নাল গ্রামের বাড়ি বাঁশখালীর পৌর সদরের আশকরিয়া পাড়ায় প্রায় তিন কোটি টাকা খরচ করে নির্মাণ করেছেন পাঁচতলা ভবন। এর বাইরে নগরীতে ফ্ল্যাট ও বাঁশখালীতে রয়েছে নামে-বেনামে কয়েক কানি (স্থানীয় হিসাব) সম্পত্তি। সিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ জানান, আদালতে জয়নাল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নিজের দোষ স্বীকারের পাশাপাশি তাকে যারা সহযোগিতা করতেন, তাদের নামও প্রকাশ করেছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে আমরা আপাতত কারও নাম প্রকাশ করছি না। যাদের নাম পাওয়া গেছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। এ পর্যন্ত ১ হাজার ৮০০ ভুয়া এনআইডি কার্ড তৈরির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জয়নাল তার জবানবন্দিতে রোহিঙ্গাদের ভোটার বানানোর সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ কয়েকটি জেলার নির্বাচন অফিসের বেশ কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামও প্রকাশ করেছেন। আদালত সূত্রে জানা গেছে, অন্তত ১৫ জনের নামের একটি তালিকায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের নির্বাচন কার্যালয়ের কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তা, স্থায়ী ও আউটসোর্সিংয়ের ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া কয়েকজন কর্মচারী ও সাবেক কয়েকজন কর্মীর নামও আছে। ইতিমধ্যে জয়নালসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যরা থানা পর্যায়ের কর্মকর্তার নিচের পদবির বলে জানা গেছে। যারা গ্রেফতার হয়নি তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন পুলিশের কাউন্টার টেররিজমের নজরদারিতে রয়েছে। এদিকে নির্বাচন কমিশনের ঢাকাসহ বিভিন্ন অফিসে জয়নালের অন্তত ১০ জন আত্মীয়-স্বজন বর্তমানে চাকরি করছে। এদের অনেকেরই নিয়োগ হয়েছে জয়নালের তদবিরের কারণে। শনিবার সন্ধ্যায় মহানগর হাকিম আবু ছালেম মো. নোমানের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জয়নাল এমনই তথ্য দেন বলে জানা গেছে। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার ঘটনায় গ্রেফতার নির্বাচন কমিশনের চার কর্মীর মধ্যে বাঁশখালীর জয়নাল আবেদীনের চাকরিই স্থায়ী। রোহিঙ্গাসহ সাধারণ মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) ভুল সংশোধন এবং হারিয়ে যাওয়া পরিচয়পত্র পেতে নির্বাচন কমিশনের কয়েকজন কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীনকে সহযোগিতা করতেন। এসব কর্মকর্তার অনেকে এখন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বদলি হয়ে গেছেন। গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে নির্বাচন কমিশন তাদের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীন ও তার দুই সহযোগীকে আটক করে পুলিশে হস্তান্তর করে। ১৭ সেপ্টেম্বর এদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলা করা হয়। ওই মামলায় আদালতের আদেশে জয়নাল ৩ দিনের পুলিশি হেফাজতে থাকার পর শনিবার স্বীকারোক্তি দেন। গতকাল জয়নালসহ চারজনকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কাউন্টার টেররিজমের হেফাজতে নেওয়া হয়। ফারুকসহ ইসির চার কর্মচারীকে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ : রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি ও তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র সরবরাহের ঘটনায় গ্রেফতার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) চার কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। চারজনের মধ্যে একজন নারীও আছেন। এরা হলেন- চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের কর্মচারী মোস্তফা ফারুক, ইসি কর্মচারী জয়নাল আবেদিন (৩৫) ও তার দুই সহযোগী বিজয় দাশ (২৬) এবং তার বোন সীমা দাশ (২৩)। এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইনে কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা একটি মামলায় ১৯ সেপ্টেম্বর মোস্তফা ফারুককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কাউন্টার টেরোরিজমে ডাকা হয়। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নগরীর মুরাদপুর হামজারবাগের একটি বাসা থেকে দুইটি ল্যাপটপ, ১টি মডেম, ১টি পেনড্রাইভ, ৩টি সিগনেচার প্যাড, আইডি কার্ডের লেমিনেটিং সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে নির্বাচন কমিশনের কর্মচারী জয়নাল আবেদিন ও তার দুই সহযোগী বিজয় দাশ এবং সীমা দাশকে আটক করে পুলিশে দেয় চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কার্যালয়।