মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা
ভোলায় সহিংসতা

সেই হ্যাকার এখন কোথায়

মাহবুব মমতাজী

ভোলার বোরহানউদ্দিনে সংঘাতের ঘটনায় আলোচিত বিপ্লব চন্দ্রের ফেসবুক আইডির হ্যাকারকে শনাক্ত করা হয়েছে। ওই হ্যাকার ইসলাম ধর্ম ও মহানবী (সা.) সম্পর্কে কটূক্তি ছড়িয়েছেন বলে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সরকারকে নিশ্চিত করেছে। কিন্তু সেই হ্যাকার এখন কোথায়? আটক না পলাতক। এদিকে গত ২১ অক্টোবর পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল থেকে কামরুল ইসলাম নামে ওই হ্যাকারকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে আটক করা হয় বলে জানা গেছে। তবে তার আটকের বিষয়টি পুলিশের কোনো পক্ষই স্বীকার করেনি।

সূত্র জানায়, গত ২১ অক্টোবর শ্যামপুর থেকে কামরুল ইসলামের আত্মীয় মুজিবুর রহমান নামে একজনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে আটক করা হয়। তখন মুজিবুর তাদের পরিচয় জানতে চান এবং তাদের সঙ্গে যেতে অস্বীকৃতি জানান। তখন আইনশৃঙ্খলা পরিচয়দানকারীরা মুজিবুরকে জানান, তার আত্মীয় কামরুলের স্ত্রী অসুস্থ। তিনি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। জবাবে মুজিবুর বলেন, আমি জানি। তবে আমি আমার সময়মতো দেখতে যাব। তারা আবারও তাকে বলেন, ন্যাশনাল হাসপাতালে ভর্তি আছে তার স্ত্রী সেখানে তাদের সঙ্গে মুজিবুরকে যেতে বলেন। এরপর শ্যামপুর থানার এসআই আলমগীর এসে মুজিবুরকে অভয় দিয়ে তাদের সঙ্গে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলেন। এরপর মুজিবুরকে সঙ্গে নিয়ে ন্যাশনাল হাসপাতাল থেকে কামরুলকে আটক করা হয়। পরে মুজিবুরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে এসআই আলমগীরের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি ওই ঘটনার কিছুই বলতে পারব না। বিষয়টি সম্পর্কে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবগত আছেন।

জানা গেছে, কামরুলের আচরণ ছিল পেশাদার হ্যাকারদের মতোই। তার বাড়ি নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জে। চলাফেরা অত্যন্ত সাদামাটা। বিভিন্ন মানুষের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা দাবি করত। টাকা পাওয়ার পর আইডি ফেরত দিত। মাস তিনেক আগে অন্য একটি মামলায় সে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেফতার হয়েছিল।

এর আগে গত বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ভোলার ঘটনায় ওই হ্যাকারকে দ্রুতই গ্রেফতার করা হবে। গ্রেফতারের পরই তার পরিচয় প্রকাশ করা হবে। এ ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে পুলিশ কাজ করছে।

ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গত ২০ অক্টোবর ভোলার বোরহানউদ্দিনে বিপ্লব চন্দ্রের বিচার দাবিতে ‘তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে  বিক্ষোভ থেকে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে চারজন নিহত হন। আহত হন পুলিশসহ দেড় শতাধিক মানুষ। এর আগে গত ১৮ অক্টোবর বিকাল থেকে বিপ্লব চন্দ্রের নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে ইসলাম ধর্ম ও মহানবী (সা.) সম্পর্কে কটূক্তি করে কয়েকজনের মেসেঞ্জারে বার্তা (মেসেজ) পাঠানো হয়। কয়েকজন এই বার্তার স্ক্রিনশট নিয়ে ফেসবুকে দেয়। একপর্যায়ে সেটি ছড়িয়ে (ভাইরাল) পড়ে এবং বিপ্লব চন্দ্রের শাস্তির দাবি ওঠে। বিভিন্ন মসজিদ থেকে কয়েক দফা বিক্ষোভও দেখানো হয়। ভোলা সরকারি কলেজের ছাত্র বিপ্লব চন্দ্র বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিনি ১৮ অক্টোবর শুক্রবার সন্ধ্যায় তার ফেসবুক আইডি হ্যাকড হয়েছে জানিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরদিন শনিবার সকাল, দুপুর ও বিকালেও বোরহানউদ্দিনের কয়েকটি স্থানে বিপ্লবের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ হয়। এরপর রবিবার ইসলাম ধর্ম ও মহানবী (সা.) সম্পর্কে কটূক্তি ছড়ানোর জেরে সংঘাতের ঘটনা ঘটে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত সরকারের একটি সংস্থা ফেসবুক থেকে পাওয়া তথ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে। ফেসবুক যে ব্যক্তিকে হ্যাকার হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তার নাম ও পরিচয় জানতে পেরেছে তারা। বিপ্লবের ফেসবুক হ্যাকড হওয়ার পরই তার ম্যাসেঞ্জার থেকে ইসলাম ধর্ম ও মহানবী (সা.) সম্পর্কে কটূক্তি ছড়ানো হয়েছিল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর