সোমবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

থানা হাজতে এফডিসি কর্মকর্তার রহস্যজনক মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা হাজতে আবু বক্কর সিদ্দিক বাবু নামে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) এক কর্মকর্তার মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক। তারা ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে মৃত্যুর পর বাবুর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশের দাবি, বাবু থানার হাজতখানায় গলায় চাদর পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। অপরদিকে, পরিবারের দাবি, বাবুকে পুলিশ নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে। চিকিৎসকরা বলছেন, নিহতের গলায় কালো দাগ ও শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা পুলিশ শনিবার সন্ধ্যার পর বাবুকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। রোকসানা আক্তার মায়া নামে এক নারী তার বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা করেন। ওই মামলায় তাকে আটক করা হয়। গতকাল ভোরে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) ইফতেখার ইসলাম অচেতন অবস্থায় বাবুকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসকরা বলছেন, নিহতের গলায় কালো দাগ ও শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। নিহতের সাবেক স্ত্রী আলেয়া ফেরদৌসী বলেন, শনিবার তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে বাবুকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। ওই সময় তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিলেন। গতকাল পুলিশ জানায়, বাবু ঢাকা মেডিকেলে রয়েছেন। হাসপাতালে গিয়ে তার মরদেহ দেখতে পাই। বাবুর বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগ থানার বালিয়াকান্দিতে। বর্তমানে তিনি মোহাম্মদপুর উদ্যান এলাকায় দুই সন্তানকে নিয়ে থাকতেন। তিনি বলেন, মায়া নামে এক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল বাবুর। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। এরপর থেকে তারা আলাদা থাকতেন। ফেরদৌসী অভিযোগ করে বলেন, আমার স্বামীর নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। ওই মামলায় পুলিশ তাকে ধরলেও আমাদের কিছু জানায়নি। আমার স্বামী সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন না। পুলিশ তাকে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে। আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই। এফডিসির প্রশাসনিক কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শনিবার রাত পৌনে ৮টার দিকে ফোনে পুলিশ বাবুর সম্পর্কে জানতে চায়। এ সময় বাবু এফডিসিতে চাকরি করেন বলে জানাই। পুলিশ বলে বাবু নামে একজনকে আইসিটি আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে শুনেছি পুলিশ হেফাজতে তিনি মারা গেছেন। গ্রেফতারের পর একজন আসামি কীভাবে আত্মহত্যা করতে পারে তা বুঝতে পারছি না।’

বাবুর সহকর্মী ক্যামেরাম্যান জিএম আবু সাঈদ বলেন, ‘শনিবার বিকালে একসঙ্গে চা খেয়েছি। পরে শুনেছি তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। গতকাল সকালে পুলিশ অফিসে এসে বলে, বাবু আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু কোথায়, কীভাবে আত্মহত্যা করেছে বিস্তারিত কিছু বলেনি। বাবু আত্মহত্যা করার মতো ছেলে নয়। তার মৃত্যুর জন্য পুলিশই দায়ী। আমরা তার মৃত্যুর বিচার চাই।’

নিহতের শ্বশুর মো. আবদুল আলী বলেন, মায়া নামে এক নারী বাবুর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। তিনি বিবাহিত। তার স্বামী সবই জানতেন। মায়া তার স্বামী আক্তারের জন্য বাবুর কাছ থেকে ৫ লাখ টাকাও নিয়েছেন। এসব নিয়ে পারিবারিক কলহের সৃষ্টি হয়। পরে এক পর্যায়ে বাবু তার স্ত্রী আলেয়া ফেরদৌসীকে তালাক দেয়।

তিনি ধারণা করছেন, ওই মেয়ের কাছে পাওনা টাকা চাওয়ায়, পরিকল্পিতভাবে বাবুর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলা হলে, পুলিশ তা তদন্ত করবে। কিন্তু পুলিশ হেফাজতে বাবু মারা যাবে কেন? এর জন্য পুলিশ তাকে মেরে ফেলবে? এখন পুলিশ বলছে, বাবু আত্মহত্যা করেছে। পুলিশ হেফাজতে থেকে কীভাবে আত্মহত্যা করে। এর জন্য পুলিশই দায়ী। আমরা এ হত্যার বিচার চাই।

পুলিশের তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনের সহকারী কমিশনার এম এম মঈনুল ইসলাম বলেন, বাবু এজাহারনামীয় আসামি। তার নামে নারী নির্যাতন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছিল। এক নারীর সঙ্গে তার পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। তিনি ওই নারীকে হুমকি-ধমকি দেন। আটক করে থানায় আনার পর বাবু আত্মহত্যা করেন। সিসিটিভি ফুটেজে আত্মহত্যার বিষয়টি দৃশ্যমান রয়েছে।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, হাজতখানার গ্রিলের সঙ্গে চাদর পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন বাবু। ওই সময় হাজতে অন্য আসামি থাকলেও তারা কেউ টের পায়নি।

সর্বশেষ খবর