শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

রাতভর চার ছাত্র নির্যাতনে ঢাবিতে অবস্থান বিক্ষোভ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

রাতভর চার ছাত্র নির্যাতনে ঢাবিতে অবস্থান বিক্ষোভ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল নির্যাতনবিরোধী অবস্থান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের দ্বারা শিক্ষার্থী নির্যাতনের প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে ‘সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্রঐক্য’। এ ছাড়া অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন মঙ্গলবার রাতে মারধরের শিকার এক শিক্ষার্থী। কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা নির্যাতনকারী ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বহিষ্কার, দায়িত্বে অবহেলার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের পদত্যাগ ও ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ‘ছাত্রশিবির সন্দেহে’ চার শিক্ষার্থীকে মারধর করেন হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পরে হল প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের পুলিশের হেফাজতে দেওয়া হয়। এদিকে, নির্যাতনের প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে গতকাল বিকাল পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ওই রাতে নির্যাতনের শিকার ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী মুকিমুল হক চৌধুরী। দুপুরে বিচার না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী। তবে বিকালের দিকে অসুস্থ পড়লে পরিবারের লোকেরা চিকিৎসার জন্য তাকে হাসপাতালে নেন।

এর আগে দুপুরে দেশব্যাপী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর হলে হলে সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করে ‘সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্রঐক্য’। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে।

মিছিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নূর বলেন, ছাত্রলীগ নেতাদের র‌্যাকেট খেলা, চা খাওয়ার প্রটোকলে না আসায় শিবির অজুহাত দিয়ে শিক্ষার্থীদের মারা হয়েছে। ছাত্র হিসেবে আমরা একটা নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই। কিন্তু সেখানে ছাত্রলীগ প্রধান অন্তরায়। আমরা যদি মুক্ত ক্যাম্পাস চাই, তাহলে ছাত্রলীগকে প্রতিরোধ করতে হবে। নির্যাতনের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি কখনোই আলোর মুখ দেখে না দাবি করে ভিপি নূর বলেন, যখন ঘটনা ঘটে, মিডিয়ায় আলোচনায় আসে তখন প্রশাসন একটি লোক দেখানো তদন্ত কমিটি গঠন করে দায় এড়ায়। কিন্তু সেটা কখনো আলোর মুখ দেখে না।

এ সময় সমাবেশ থেকে চার দফা দাবি জানানো হয়। দাবির মধ্যে আছে- হলগুলোয় নির্যাতনের ঘটনায় বিচার করতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রক্টরের অপসারণ, ডাকসু ভবনে হামলার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করে স্থায়ী বহিষ্কার, প্রশাসনের মাধ্যমে বৈধ সিট প্রদান এবং শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা।

এর আগে শিক্ষার্থী নির্যাতন ঘটনার বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেন ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন : সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে রাতভর শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে হল প্রশাসন। বুধবার রাতে এ কমিটি গঠন করা হয়। হল প্রাধ্যক্ষ আবু মো. দেলোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, মঙ্গলবার রাতের ঘটনা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। হলের আবাসিক শিক্ষক ড. মো. জাহিদুর রহমানকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। কমিটিকে নিয়মমাফিক সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর