সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

সংকটাপন্ন কুঁচে

সাইফুল ইসলাম বেগ, বিশ্বনাথ (সিলেট)

সংকটাপন্ন কুঁচে

কুঁচিয়া একটি ইল-প্রজাতির মাছ। স্থানীয়ভাবে কুঁইচা, কুঁচিয়া, কুঁইচ্ছা মাছ ও কুঁচে বাইন নামে পরিচিত। এর ইংরেজি নাম Asian Swamp Eel | Sybranchidaeপরিবারের এই মাছটির বৈজ্ঞানিক নাম Monopterus Cuchiya। একসময় প্রচুর দেখা যেত ‘কৃষিবান্ধব’ এই প্রাণী। জমির উর্বরতা রক্ষায় ভূমিকা রাখা কুঁচে এখন প্রায় সংকটাপন্ন। এতে প্রচুর পুষ্টিগুণ ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব থাকায় চাষ না করে পুরোটাই প্রাকৃতিক উৎস থেকে আহরণ করা হচ্ছে। এ কারণে মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে এর সংখ্যা। প্রাণী বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলের অগভীর খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়, পুকুর ও মাটির গর্তে কুঁচে বাস করে। শুকনো মৌসুমে পুকুর কিংবা ডোবায় যখন পানি শুকিয়ে যায় তখন এরা কাদার নিচে অনেক দিন বেঁচে থাকতে পারে। এদের প্রধান খাদ্য বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছ। এ ছাড়াও জলজ পোকা ও প্রাণী খায়। বাংলাদেশে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত ও আইইউসিএনের তালিকা (২০১৫) অনুযায়ী বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাপী সংকটাপন্ন। সম্প্রতি সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার উমরপুর ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের বিলে দুই কিশোরকে কুঁচে শিকার করতে দেখা যায়। তারা মৌলভীবাজারের মৃত্তিঙ্গা চা বাগানের হালকিটিলা গ্রামের বিপুল উড়ার ছেলে সঞ্জয় উড়া (১৮) ও লক্ষিণধর বসাকের ছেলে অমিত বসাক (২০)। তারা জানায়, ৭-৮ বছর ধরে এভাবেই কুঁচিয়া শিকার করে জীবিকানির্বাহ করছি। প্রতিদিন ২-৩ কেজি কুঁচিয়া শিকার করে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ৩০০ টাকায় বিক্রি করে। এ ছাড়াও বিশেষ ফাঁদ ও বড়শি দিয়ে পুরো বর্ষাকালই দেশের হাড়র-বাঁওড়ে কুঁচে শিকার করা হয় বলে জানায় তারা।

এ বিষয়ে কথা হলে প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের গবেষণা কর্মকর্তা শিহাব খালেদীন বলেন, বিভিন্ন ধরনের ছোট ছোট প্রাণী ও কীট খেয়ে থাকে বলে জলজ প্রতিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে কুঁচের। প্রচুর পুষ্টিগুণসম্পন্ন হওয়ায় কুঁচের রয়েছে অর্থনৈতিক গুরুত্বও। এটি চাষ না করার ফলে প্রায় পুরোটাই প্রাকৃতিক উৎস থেকে আহরণ করা হয়। তাই এদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক ও পুষ্টি গুরুত্বের বিবেচনায় এই মাছ সংরক্ষণ করা জরুরি। একই সঙ্গে গবেষণার মাধ্যমে কুঁচে চাষের সম্ভাবনাও যাচাই করা প্রয়োজন।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর