ময়মনসিংহের ১২ উপজেলায় সম্মেলন সম্পন্ন করতে সাংগঠনিক তোড়জোড় শুরু করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। বিএনপি মাঠের রাজনীতিতে সুবিধা করতে না পারার সুযোগে দল সংগঠিত করায় ব্যস্ত রয়েছেন দলটির নেতারা। অন্যদিকে উত্তর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা চরম নাজুক। সেখানে নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব। শীর্ষ নেতাদের সমন্বয়হীনতায় আটকে গেছে জেলা উত্তর বিএনপির নতুন কমিটি। মূল দলের মতো সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনগুলোও স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে পারছে না। ফলে আন্দোলন-সংগ্রামে খুব বেশিসংখ্যক
নেতা-কর্মীর তৎপরতা দেখা যায় না। আর দক্ষিণ জেলায় সম্প্রতি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি স্থবিরতা কাটিয়ে দল ঢেলে সাজাতে চাইছে। দলীয় সূত্র জানান, গত শনিবার ময়মনসিংহ জেলা ও বিভাগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি ও সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল। সেখানে নির্দেশনা দেওয়া হয় ওয়ার্ড থেকে থানা পর্যায়ে ভোটের মাধ্যমে সম্মেলন করে নেতা নির্বাচন করার। এ ব্যাপারে জেলা সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন, ‘সম্মেলনের জন্য প্রতি থানায় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কার্যক্রম শুরু করেছেন। ৬ মার্চের মধ্যে বেশ কয়েকটি উপজেলার সম্মেলন শেষ হবে। ফুলপুর ও ভালুকায় ওয়ার্ড পর্যায়ে সম্মেলন শুরু হয়েছে।’
জানা যায়, ময়মনসিংহের ১০ উপজেলায় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দিয়ে বিভিন্ন সময় কমিটি হয়। আর আহ্বায়ক কমিটি করা হয় তিন উপজেলায়। এর মধ্যে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম আহ্বায়কসহ মারা যান ছয়জন। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে কোথাও অর্ধযুগ অথবা দেড় যুগও পার হয়েছে। এ কারণে অনেক উপজেলাতেই আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম ছন্নছাড়া। এদিকে ময়মনসিংহে উত্তর জেলা ও দক্ষিণ জেলা নামে বিএনপির দুটি সাংগঠনিক কমিটি রয়েছে। হালুয়াঘাট, ফুলপুর, ধোবাউড়া, তারাকান্দা, গৌরীপুর, ঈশ্বরগঞ্জ ও নান্দাইল উপজেলা নিয়ে গঠিত উত্তর জেলা আর সদর, গফরগাঁও, মুক্তাগাছা, ত্রিশাল, ভালুকা, ফুলবাড়িয়া উপজেলা নিয়ে দক্ষিণ জেলা কমিটি। ২০১৬ সালের এপ্রিলে কেন্দ্র থেকে খুররম খান চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে উত্তর জেলা কমিটি করে দেওয়া হয়। ওই কমিটিতেই সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয় মোতাহার হোসেন তালুকদারকে। সেই থেকেই এ আহ্বায়ক কমিটি দুই ধারায় বিভক্ত। দ্বন্দ্বের জেরে অনেক উপজেলায় কমিটিও রয়েছে ডাবল। অন্যদিকে একক স্বাক্ষরে খুররম খান চৌধুরী নিজ এলাকায় কমিটি দিলেও ‘বিরক্ত’ করেননি মোতাহার হোসেন তালুকদার। এমন মন্তব্য উত্তরের প্রথম সারির নেতাদের।সূত্র বলছেন, উত্তরের এ কোন্দল দীর্ঘদিন ধরেই। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর ২০০৯ সালে অন্যান্য জেলা কমিটির মতো এই সাংগঠনিক জেলা কমিটিও ভেঙে দেয় বিএনপি। এর ছয় বছর পর আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হয়। এর পরই নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব প্রকট হতে থাকে। দ্বন্দ্বের কারণে মিটিংয়ের স্থান নির্বাচন নিয়েও দ্বিমত থাকে। সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার বলেন, ‘দলের এ সংকটাপন্ন অবস্থায় কমিটির প্রয়োজন খুব বেশি। দিন দিন নেতা-কর্মীরা স্থবির হয়ে পড়ছেন। এর পরও আমরা দলকে আগলে রাখার চেষ্টা করছি।’ দ্বন্দ্বের বিষয়টি স্বীকার করে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘গত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরেই উত্তরে সক্রিয় কোনো কমিটি নেই। দলীয় কর্মকা-ও ঐক্যবদ্ধভাবে পালিত হয়নি।’