মঙ্গলবার, ৩১ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

চিলাই দখল-দূষণ চলছেই

নদীর কান্না

খায়রুল ইসলাম, গাজীপুর

চিলাই দখল-দূষণ চলছেই

দখল-দূষণের কবলে গাজীপুরের চিলাই নদী -বাংলাদেশ প্রতিদিন

গাজীপুর শহরের উত্তর-পূর্ব দিক দিয়ে প্রবাহিত চিলাই নদী জেলার অন্যতম প্রধান একটি নদী। চিলাই এক সময় আরও প্রশস্ত ও বিপুলকায় নদী ছিল। জনশ্রুতি আছে, এ নদী পাড়ি দিতে চিল ক্লান্ত হয়ে পড়ত, যে কারণে এর নাম হয় চিলাই। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার দক্ষিণ সীমান্তে শুরু হওয়া নদীটি বিভিন্ন পথ অতিক্রম করে গাজীপুর সদরের পুবাইল এলাকায় বালু নদীতে গিয়ে মিশেছে। একটি ধারা ভাওয়াল গড়, চত্বর বাজার, বনখরিয়া, দেশীপাড়া, তিতাস ব্রিজ, মার্কাস ব্রিজ, কালা শিকদার ঘাট ও শ্মশান ঘাট হয়ে হানকাটা ব্রিজ এলাকায় পতিত হয়েছে। আরেকটি ধারা রাজাবাড়ী বিল, পারুলী নদী ও বেলাই বিলের মাধ্যমে বিভিন্ন পথ অতিক্রম করে হানকাটা ব্রিজ এলাকায় আগের ধারার সঙ্গে মিলিত হয়ে দুটি ধারা গলাগলি ধরে বালু নদীতে গিয়ে মিশেছে। এ নদীকে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই চিলাই খাল হিসেবে জানেন। খাল বা নদী এ নিয়ে মতভেদ থাকলেও নদীটি যে গাজীপুরের হৃৎপি- এ নিয়ে কারও দ্বিমত নেই। নদীর বিভিন্ন অংশ পরিদর্শন করে দেখা যায়, নদীর তীরের কিছু অবিবেচক মানুষ দখল ও দূষণের মাধ্যমে নদীটির যেন টুঁটি চেপে ধরেছে। নদী দখল করে গড়ে উঠেছে কয়েকটি বড় কারখানা। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে শহরের প্রাণকেন্দ্র দিয়ে বয়ে যাওয়া এ নদীটি। তাই নদীটিকে পুনরুদ্ধার করা জরুরি। এ ছাড়া নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী লোকজনের সব ধরনের সলিড বর্জ্য, তরল বর্জ্য এবং গৃহস্থালির পয়োপ্রণালির বর্জ্য চিলাই নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে নদীটি শিকার হচ্ছে দূষণের। চিলাই নদী রক্ষার দাবিতে ‘চিলাই নদী বাঁচাও আন্দোলন’, ‘নদী রক্ষা কমিটি’, ‘নদী পরিব্রাজক দল’সহ বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান থেকে শুরু করে নানা কর্মসূচি পালন করছে। তাদের দাবি, চিলাই নদী রক্ষায় অবিলম্বে সীমানা চিহ্নিতকরণ, সীমানা পিলার স্থাপন, পুরো নদী খনন, দখলদারদের উচ্ছেদ ও তীর রক্ষায় সবুজ বেষ্টনী তৈরি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পানি আইন ও নদী আইন এবং জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সুপারিশ অনুসরণ করতে হবে। গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে চিলাই নদী খননের কাজ শুরু হলেও এখনো শেষ হয়নি। ইতিমধ্যে নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, খননের ২২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। চিলাই নদী বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. জালাল উদ্দিন ভান্ডারী জানান, নদীর কিছু অংশ খনন করা হয়েছে, যা নদীর কোনো উপকারেই আসেনি। সীমানা চিহ্নিত না করে খনন কোনো কাজে আসবে না। তাই আগে প্রয়োজন সীমানা চিহ্নিতকরণ ও পিলার স্থাপন। এ ক্ষেত্রে পানি আইন ও নদী আইন এবং জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সুপারিশ অনুসরণ করতে হবে।

বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের সভাপতি ও প্রধান গবেষক মো. মনির হোসেন বলেন, বাস্তবায়নকারী সংস্থাসমূহ তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করলে যৌবন ফিরবে চিলাই নদীর। চিলাই নদী খনন প্রকল্পের দায়িত্বরত কর্মকর্তা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবির জানান, চিলাই নদীর ২০ কিলোমিটার খননেন জন্য প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি। তবে আনুষ্ঠানিক খনন কাজ শুরু হয় এপ্রিল মাস থেকে। খননের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৭ কোটি টাকা। চলতি বছর ২৩ জানুয়ারি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। দ্রুত খনন কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে অফিশিয়ালি চিঠি দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করলে আগামী জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। খনন কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে প্রকল্পের মাত্র ২২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এস এম সোহরাব হোসেন জানান, যেখানে-সেখানে বর্জ্য ফেলার ব্যাপারে জনসচেতনার বাড়ানো জন্য এবং মানুষকে বোঝানোর জন্য সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কিছু এনজিও কাজ করছে। এলাকার বাসিন্দাদের কাছে অনুরোধ, তারা যাতে সচেতন হন, অন্যকে সচেতন করেন এবং নদীতে ময়লা না ফেলে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানে ময়লা ফেলেন। তিন বলেন, যেসব এলাকায় নদীতে ময়লা ফেলা হচ্ছে, সেখানে অভিযান চালাবেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গাজীপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে চিলাই নদী প্রবাহিত। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে চিলাই নদীর খননকাজ চলছে। কিন্তু এটা আংশিক হয়েছে। চিলাই নদীর যেখানে উৎসস্থল সেখান থেকে কিন্তু তারা খননকাজ শুরু করেনি। আমি সরেজমিন পরিদর্শন করে তাদের পরামর্শ দিয়েছি, চিলাই নদী জেলার যেখান থেকে শুরু, সেই উৎসস্থল থেকে খনন করে আনতে হবে।’

সর্বশেষ খবর