করোনার প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলের চিংড়ি রপ্তানিতে ধস নেমেছে। সর্বশেষ গত ২৫ ও ৩০ মার্চ মোংলা বন্দর থেকে দুটি জাহাজে ইউকে, জার্মানিসহ ইউরোপের বাজারে সাত কন্টেইনার (প্রায় ৭০ মেট্রিক টন) চিংড়ি রপ্তানি হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় দুই জাহাজে সেখানে চিংড়ি রপ্তানি হতো ৩০ থেকে ৩৫ কন্টেইনার। জানা গেছে, ২০১৯ সালের মার্চে দক্ষিণাঞ্চল থেকে চিংড়ি রপ্তানি হয়েছিল ১৩১৫ মেট্রিক টন। যার বাজারমূল্য ছিল ১০৪ কোটি টাকা। সেখানে চলতি বছরের মার্চে চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে ৯৯৫ মেট্রিক টন। মৎস্য মাননিয়ন্ত্রণ ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো থেকে এ তথ্য জানা গেছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছেন, রপ্তানিতে করোনার ভয়াবহতা বোঝা যাবে মে-জুন মাসে। বিদেশি আমদানিকারক অনেকে তাদের চিংড়ির শিপমেন্ট বাতিল করেছেন। এরই মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে চিংড়ি কারখানা ও প্রান্তিক চাষি পর্যায়ে। কারখানা বন্ধ থাকায় উৎপাদিত মাছ বিক্রি করতে পারছে না খামারিরা। সেই সঙ্গে প্রতিনিয়ত কমছে চিংড়ির বাজারদর। খুলনার কয়রা বাগালি ইউনিয়নের বাগদা চাষি মফিজুল ইসলাম জানান, গরমের কারণে ঘের-পুকুরে চিংড়ি মরতে শুরু করেছে। এ ছাড়া ঘেরের পানি কমে যাওয়া, পোনা ও খাবার সংকট, কর্মচারীদের বেতন- সব মিলিয়ে বড় ধরনের লোকসানে পড়েছেন খামারিরা। জানা যায়, দেশের উপকূলীয় জেলা খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায় প্রতি বছর প্রায় দুই লাখ ৭৬ হাজার হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ হয়। চাষের সঙ্গে জড়িত রয়েছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ। শ্যামনগর ঈশ্বরীপুর এলাকার চিংড়ি ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির জানান, মার্চ-এপ্রিল মাসে বাগদা চাষিরা আড়ত ও রপ্তানিকারকদের কাছে চিংড়ি বিক্রি করে। কিন্তু করোনার কারণে আড়ত বন্ধ থাকায় চিংড়ি অবিক্রীত থাকছে। এ ছাড়া বড় সাইজের যে চিংড়ি কেজিপ্রতি ৬০০-৭০০ টাকা দরে বিক্রি হতো। সেই চিংড়ি এখন ৪৫০-৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে খামারিরা কর্মচারীদের বেতনও দিতে পারছে না।
বিভাগীয় মৎস্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক এইচএম বদরুজ্জামান বলেন, করোনা সংকটকালে চিংড়ি চাষেও আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা। গত বছর এ সময় উপকূলীয় অঞ্চলে প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার কার্টন বাগদা পোনা বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে এক হাজার কার্টন পোনা বিক্রি হচ্ছে। ঘের মালিকরা তাদের উৎপাদিত চিংড়ি বিক্রি করতে পারছে না। মাছের খাদ্য কিনতে পারছে না। সব মিলিয়ে বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। মৎস্য মাননিয়ন্ত্রণ ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর কর্মকর্তা তৌফিক মাহমুদ বলেন, সংকট বড় আকার ধারণ করবে আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে। চিংড়ি রপ্তানির বড় বাজার হচ্ছে ইউরোপ। করোনার কারণে সেখানকার সবকিছুই তছনছ হয়ে গেছে। আমদানিকারকদের অনেকে চিংড়ির শিপমেন্ট বাতিল করছেন বা অপেক্ষা করতে বলছেন। ফলে চিংড়ি রপ্তানিতে বড় ধরনের আঘাত মোকাবিলা করতে হবে।