মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা অফিস সীমিত পরিসরে চালু

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যেই সতর্কতা নিয়ে সীমিত পরিসরে চলছে রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা, অফিস। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সাভার, গাজীপুরসহ গার্মেন্টশিল্প এলাকাগুলোয় দৈনন্দিন কাজে ফিরেছেন শ্রমিকরা। দেশের ডাকঘরগুলো আগে থেকেই খোলা ছিল। গতকাল থেকে জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের অফিসগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। সচিবালয়ে কয়েকজন মন্ত্রী, সচিব ও নির্দিষ্ট কিছু কর্মকর্তা অফিস করেছেন। করোনাভীতিতে সরকারি ঘোষণায় প্রায় এক মাস বন্ধের পর স্থবির হয়ে পড়া অর্থনীতিতে গতি ফেরাতে সীমিত পরিসরে সবকিছু খুলে দেওয়া হচ্ছে। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।

অফিস করেছেন একাধিক মন্ত্রী-সচিব : গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো সীমিত আকারে সরকারের বেশ কিছু অফিস খোলা ছিল। অফিস করেছেন একাধিক মন্ত্রী ও সচিব। তবে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসেনি এখনো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণ ছুটি পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত সচিবালয় পুরনো চেহারায় ফিরবে না। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী এই দুর্যোগকালে যেসব মন্ত্রণালয় এবং দফতর জরুরি পরিষেবা কাজের সঙ্গে যুক্ত শুধু সেসব মন্ত্রণালয় ও দফতর সীমিত আকারে খোলা হচ্ছে। এসব দফতর ও মন্ত্রণালয়ে রোস্টার করে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা একেক গ্রুপ একেক দিন কাজ করছেন। গতকাল সচিবালয়ে আসা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, যেসব মন্ত্রণালয় খুলেছে সেসব মন্ত্রণালয়ের অধিকাংশ কর্মকর্তা জরুরি সভা ছাড়া নিজ টেবিলে বসেই কাজ করেছেন। খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ চেয়ার থেকে ওঠেননি। অন্যের টেবিলে যাননি। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে তারা নিজ নিজ জরুরি কাজ সম্পন্ন করেছেন। দুপুরে কৃষি মন্ত্রণালয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় কর্মকর্তা ও কৃষি উৎপাদন, বিপণন এবং বাজারজাতকরণের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী এবং সাবেক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। একইভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা বসেছিলেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে। গতকালও অধিকাংশ মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তারা ছাড়া প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও অফিস সহায়কের বেশির ভাগই ছিলেন অনুপস্থিত। গতকাল অফিস করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জরুরি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত অফিসসমূহ খোলা থাকবে। এতে সুনির্দিষ্ট করে কতটি মন্ত্রণালয় খোলা থাকবে তা বলে দেওয়া হয়নি। তবে ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি শুরু হওয়ার পর থেকে কয়েকটি মন্ত্রণালয় কোনো প্রজ্ঞাপন বা অফিস আদেশ ছাড়াই সীমিত পরিসরে নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এসব মন্ত্রণালয়ের মধ্যে রয়েছে সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, খাদ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়।

শুল্ক ও ভ্যাট অফিস খুলছে : দেশের সব বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শুল্ক ও ভ্যাট বিভাগের অফিস খোলা রাখতে আদেশ জারি করেছে এনবিআর। সংস্থাটি বলেছে, করোনাভাইরাসের কারণে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির সময় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী জরুরি প্রয়োজনে এনবিআরের শুল্ক ও ভ্যাট অনুবিভাগের সব দফতরসমূহ খোলা রাখতে হবে। অফিস আদেশে শুল্ক ও ভ্যাট অফিস খোলা রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও অনুরোধ জানানো হয়। চট্টগ্রামে দেড় শতাধিক গার্মেন্ট চালু : চট্টগ্রাম নগরের সিইপিজেড, কেইপিজেডসহ বিভিন্ন শিল্প এলাকায় গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো দেড় শতাধিক পোশাক কারখানায় যোগ দিয়েছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। করোনার ভয় উপেক্ষা করেই কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন তারা। বেপজা ও বিজিএমইএর দাবি, সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কারখানাগুলোয় শ্রমিকরা কাজে যোগ দিচ্ছেন। শ্রমিকদের অনেকের দাবি, কেবল মুখে মাস্ক পরেই কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন তারা। কারখানার ভিতরে নির্ধারিত সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না।

 কারখানা মালিকরা বলছেন, শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই এসব কারখানা চালু করা হয়েছে। শ্রমিকদের সব সময় মাস্ক ব্যবহার ও বারবার হাত ধোয়ার ব্যাপারে অবহিত করা হচ্ছে।

বিজিএমইএর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফয়সাল সামাদ বলেন, কারখানা চালু করার আগে শ্রমিক ভাইবোনদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হচ্ছে। শ্রমিকরা সুস্থ না থাকলে কারখানা খুলেও কোনো লাভ হবে না। তাই করোনাভাইরাসের কারণে কারখানার চাকা থেমে গেলেও শ্রমিক-মালিক একসঙ্গে নিরাপদে থেকে আরএমজি সেক্টরকে টিকিয়ে রাখতে হবে। বেপজার অধীন চট্টগ্রাম ও কর্ণফুলী ইপিজেড ছাড়াও আনোয়ারায় আছে ইয়ংওয়ান গ্রুপের মালিকানাধীন কোরিয়ান ইপিজেড। এ তিন ইপিজেড এবং এর বাইরে বিসিক শিল্প এলাকার কারখানাসহ দেড় শতাধিক কারখানা খোলা হয়েছে গতকাল। সীমিত পরিসরে কম শ্রমিক নিয়ে এসব কারখানা তাদের কার্যাদেশ টিকিয়ে রাখার জন্য খুলেছে বলে সংশ্লিষ্ট ইপিজেড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

চট্টগ্রাম ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক খুরশিদ আলম জানান, তাদের ৭৫টি কারখানা চালু হয়েছে সীমিত পরিসরে। তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কাজ শুরু করেছে। এখানে ৫০ হাজারের মতো শ্রমিক কাজে যোগ দিয়েছেন। প্রতিটি কারখানা কর্তৃপক্ষকে ইপিজেড থেকে দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে কর্ণফুলী ইপিজেডের ৪১টির মধ্যে ৩০টি কারখানা আংশিকভাবে চালু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক মশিউদ্দিন বিন মেজবাহ। এ ছাড়া আনোয়ারার কোরিয়ান ইপিজেডে সব কারখানা খোলা হয়েছে। এখানকার নিয়মিত ২৫ হাজার শ্রমিকের প্রায় সবাই হাজে যোগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

শ্রমিকরা জানান, কিছু কিছু কারখানা সাময়িক লে-অফ ঘোষণা করায় তিন ভাগের এক ভাগ বেতন পেতেন তারা। যে টাকা দিয়ে নিজের ও পরিবার চালানো দায় হয়ে পড়েছে। সে অবস্থা থেকে মুক্ত হতেই তারা ঝুঁকি উপেক্ষা করে কাজে যোগ দিয়েছেন।

 

 

সর্বশেষ খবর