মঙ্গলবার, ১২ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

ফেরিতে ভিড়, নগরে যানজট ঢাকার দিকে ছুটছে সবাই

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেরিতে ভিড়, নগরে যানজট ঢাকার দিকে ছুটছে সবাই

শিমুলিয়ায় ফেরিতে গতকাল ঢাকামুখী মানুষের ঢল -বাংলাদেশ প্রতিদিন

করোনা সংক্রমণ রোধে দেশে সাধারণ ছুটি চলছে। এর ভিতরেই ঢাকা মহানগরীতে তৈরি হচ্ছে যানজট, ঢাকার বাইরে নদীপথগুলোর ফেরিতেও ভিড় লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে। নদী ও স্থল পথ দিয়ে মানুষ ছুটে আসছেন ঢাকার দিকে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গণপরিবহন ছাড়া রাজধানীতে স্বাভাবিক দিনের মতোই চলছে যানবাহন। আগামী ১৬ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বৃদ্ধি করা হলেও রাস্তার চিত্র দেখে তা বোঝার উপায় নেই। কোথাও কোথাও দেখা গেছে রীতিমতো যানজট। সামাজিক দূরত্ব রক্ষার নির্দেশনা মানছেন না কেউই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতাও খুব একটা চোখে পড়েনি। দেখা গেছে, গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর প্রায় সব সড়কেই রীতিমতো স্বাভাবিক সময়ের মতোই যানজট। নগরীর বিভিন্ন সড়কে যাতায়াতে তুলনামূলক বেশি সময় ব্যয় করতে হয় নগরবাসীকে। রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশ পথেও গত কয়েক দিনের তুলনায় যানবাহনের বাড়তি চাপ দেখা গেছে। স্বল্প আয়ের মানুষেরা যারা রাস্তায় বের হন তারা বলেন, পেটের দায়ে বের হচ্ছেন তারা। আবার কেউ কেউ বলেন, বিশেষ প্রয়োজনেই বের হতে হচ্ছে তাদের। হঠাৎ করে রাস্তায় এত গাড়ি কেন- তা জানা নেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও। তারা বলছেন, এখন কেউই কোনো নিয়ম মানতে চাইছেন না। সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার পয়েন্টে দেখা গেছে, বিভিন্ন পরিবহনসহ ব্যক্তিগত গাড়ির কারণে রাস্তায় যানজট। সিএনজি অটোরিকশা, ইজিবাইক, রিকশা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, পিকআপ, মিনিট্রাকসহ সব ধরনের যানবাহন চলতে দেখা গেছে। কারওয়ান বাজার পয়েন্ট যাত্রী পরিবহনের জন্য অনেক মোটরসাইকেলও দেখা গেছে। এ ছাড়া বিজয় সরণি সিগন্যালে যানজট দেখা গেছে। তবে এসব সড়কে চলাচলে পুলিশকে তল্লাশি করতে দেখা যায়নি।

রাজধানীর সাইনবোর্ড এলাকায় দেখা গেছে, ঢাকামুখী গণপরিবহন ছাড়া ইজিবাইকসহ সবই চলছে। শারীরিক দূরত্বের নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। গাদাগাদি করে মানুষ যাচ্ছেন। বনানী কাকলি মোড় সিগন্যালেও ছিল গাড়ির চাপ। আবদুল্লাহপুর দিয়ে ঢাকায় প্রবেশে যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। এসব গাড়ি সামাল দিতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়। এদিকে আমাদের মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, কাঁঠালবাড়ী শিমুলিয়া নৌরুটে গতকাল সকাল থেকেই ছিল ভিড়। দেশের সার্বিক করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় নৌরুটের সব লঞ্চ ও সি-বোট বন্ধ করায় ফেরিতে ঘাটে বাড়তি চাপ ছিল যাত্রীদের। এই সুযোগে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও তারা ফিরছিলেন বাড়িতে। অনেকে আবার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে করেও পার হচ্ছিলেন নদী। কাঁঠালবাড়ী ফেরি ঘাট, লঞ্চ ঘাট ও সি-বোট ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, মাছ ধরার অসংখ্য অবৈধ ট্রলারে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে পদ্মা নদী পাড়ি দিচ্ছে। দেখা গেছে, ঘরমুখো যাত্রীদের ভিড় ছিল ঈদের চেয়ে বেশি। যদিও করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে তাদের মাইকিং করে নিরাপদ দূরত্বে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছিল। যাত্রীদের সচেতনতাও ঝুঁকি এড়াতে ফেরিতে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সকাল থেকে কাঁঠালবাড়ী ঘাটে যাত্রীদের চাপ বেশি দেখা গেছে। পাশাপাশি ছিল ছোট যানবাহন ও পণ্যবাহী ট্রাকের চাপও। মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ী ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক আবদুল আলিম মিয়া জানান, সরকারি নির্দেশনা পাওয়ার পর এই নৌরুটে চলাচলকারী ১৭টি ফেরির মধ্যে ১০টির চলাচল বন্ধ রাখা হয়। তবে জরুরি প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স ও সরকারি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পারাপারের সাতটি ফেরি সীমিত আকারে চলাচল করত। যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন ১২টি ফেরি চালু রাখা হয়েছে। লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরা ফেরিতে পারাপার হচ্ছে। মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে শ্রমজীবী মানুষের ভিড় অব্যাহত রয়েছে। তারা ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে ছুটেছেন। গতকাল সকাল থেকে শিমুলিয়া ঘাটে এ দৃশ্য দেখা গেছে। ফেরিতে গাদাগাদি করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা পদ্মাপাড়ি দেন। তাদের অনেকেই জানান, গণপরিবহন সংকট থাকায় নিজেদের কর্মস্থলে যেতে নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়েছে তারা। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে তারা গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করছেন। রোজা রেখে পায়ে হেঁটে যেতে হচ্ছে বহুদূর।

মাওয়া নৌপুলিশ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সিরাজুল ইসলাম জানান, শ্রমজীবী মানুষ সকাল থেকে ফেরি পার হন।

বর্তমানে নৌরুটে ১০টি ফেরি চলাচল করছে। এদিকে গণপরিবহন সংকটে চরম বিপাকে পড়েছে ঘাটে আসা এসব যাত্রীরা। কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে মোটরসাইকেল, পিকআপ ভ্যান, সিএনজি চালিত অটোরিকশায় করে তাদের গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হতে দেখা গেছে। রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পোশাক কারখানা খোলার কারণে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে যাত্রীর চাপ তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে পণ্যবাহী গাড়ির সংখ্যা। গতকাল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌ-রুটের দৌলতদিয়া প্রান্ত থেকে হাজার হাজার যাত্রী পাটুরিয়ার উদ্দেশে ফেরি পার হন। বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক আবু আবদুল্লাহ রনি বলেন, গণপরিবহন বাদ দিলে দেশের অবস্থা প্রায় স্বাভাবিক রয়েছে। তাই দৌলতদিয়া থেকে ঢাকামুখী যাত্রীর সংখ্যা স্বাভাবিক রয়েছে। তবে বিকাল থেকে পণ্যবাহী গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌ-রুটে ফেরির সংখ্যা ৫টি থেকে বৃদ্ধি করে ১০টি করা হয়।

সর্বশেষ খবর