বৃহস্পতিবার, ২১ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

টমটমের কঠিন সময়

মাহবুব মমতাজী

টমটমের কঠিন সময়

বঙ্গবাজারে বেঁধে রাখা টমটমের ঘোড়াগুলোর সাধারণ সময়ে কাজ থাকে অনেক। তবে কদর থাকে সামান্যই। মানুষের ঘানি টানতে টানতেই চলে যায় সারা দিন। স্বাভাবিক সময়ে খাবার পেলেও তা পরিশ্রম আর প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আর করোনা এসে তো ওদের দৈনিক খাবারের অধিকারটুকুও যেন কেড়ে নিয়েছে। লকডাউনে আয় না থাকায় ঘোড়ার মালিকরাও অসহায়। এখন দিনের বেশিরভাগ সময় না খেয়ে থাকছে ঘোড়াগুলো। রাজধানীর প্রায় ৩৫ জন টমটম মালিক বা চালকের এখন কোনো আয় নেই, পরিবারের মুখে অন্ন জোগানো যখন কঠিন অবস্থা সেখানে ঘোড়াকে কি খাওয়াবেন ভেবে পাচ্ছেন না তারা। তবে অভুক্ত ঘোড়াগুলোকে খাবার দিতে এগিয়ে আসে কিছু সংগঠন।

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যের ধারক টমটমে এক জোড়া ঘোড়া ব্যবহার হয়ে থাকে। মাঝেমধ্যে একটি ঘোড়া দিয়েও গাড়ি টানা হয়। রাজধানীর বঙ্গবাজারে উড়াল সড়কের নিচে রয়েছে ৪৫টি টমটমের ঘোড়া। গাড়ি চলে না, তাই আয় বন্ধ। ঘোড়ার খাবার দিতে হিমশিম খাচ্ছে মালিক।

ঘোড়ার গাড়ির কয়েকজন মালিক জানান, পুরান ঢাকার ঐতিহ্য ঘোড়ার গাড়ি। তবে করোনা ভাইরাসের এই দুঃসময়ে ঘোড়ার গাড়ির ঘোড়াগুলো নিয়ে তাদের অসহায়ত্বের সঙ্গে দিন কাটছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বেচ্ছাসেবীরা কামরাঙ্গীরচর এলাকায় মানুষ পরিবহনে নিয়োজিত ২০টি ঘোড়ার জন্য খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে। এসব ঘোড়ার জন্য ২৫ কেজি বুটের ভুসি, ৩৭ কেজি গমের ভুসি এবং ৫০ কেজি কুড়ার ভুসি দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ঘোড়ার গাড়ি চালনায় নিয়োজিত ১৯ জন গাড়োয়ানের পরিবারকেও খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। প্রতি পরিবারের জন্য বরাদ্দ ছিল ৫ কেজি চাল, ২ কেজি আলু,  আধা কেজি ডাল, ৫০০ এমএল সয়াবিন তেল, ও ১টি মিষ্টি কুমড়া। রজ্জব হোসেন নামে এক টমটম মালিক জানান, করোনার কারণে ঢাকায় সব গাড়িবন্ধ। তারা গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত যাত্রী বহন করতেন। এখন এ লকডাউনে কোনো যাত্রীও নেই তাদের। এদিকে টমটম বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। তাই এক টাকা আয়ও নেই। সে কারণে নিজের পরিবারের পেট চালিয়ে প্রতিটি টমটমে একজোড়া করে ঘোড়ার খাবার জোগার করাটা বেশ কঠিন হয়ে গেছে। তিনি জানান, রাজধানীতে প্রায় ৩০-৩৫ টা টমটম চলাচল করে। এ ব্যবসার সঙ্গে প্রায় এক দেড়শ মানুষ সরাসরি জড়িত। তাদের পরিবারের অন্ন সংস্থান হতো এই ঘোড়া গাড়ি চালিয়ে। আগে প্রতিদিন সব খরচ বাঁচিয়ে প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা আয় হতো। তা দিয়ে কোনো মতে ঘোড়ার খাবারসহ নিজ পরিবারের খরচ চলত। এখন প্রায় দুই মাস ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হতে পারিনি। কিন্তু নিজে খাই না খাই এ ৭০-৭২ টা পশুর খাবার তো দিতে হবে। অবলা জাত, খাবার না পেলে তো অসুস্থ হয়ে মরে যাবে। অনেকে মানুষের জন্য ত্রাণ দিচ্ছেন, কিন্তু ঘোড়াদের খাবার কিনবো কি দিয়ে? প্রতিদিন এক জোড়া ঘোড়ার খাবার জোগার করতে লাগে প্রায় ৫০০-৭০০ টাকা। তাই তারা মহা সমস্যায় পড়েছেন বলে জানান।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর