বুধবার, ১৭ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

দলের নিবন্ধন শর্তে কড়াকড়ি

গোলাম রাব্বানী

দলের নিবন্ধন শর্তে কড়াকড়ি

রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন শর্তে কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে। এজন্য নতুন আইন তৈরি করেছে নির্বাচন কমিশন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) থেকে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের ধারা-উপ-ধারাগুলো আলাদা করে নতুন এই আইন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে দলের ভিতরে একদলীয় ব্যবস্থার গঠনতন্ত্র ও নারী প্রতিনিধি পূরণে দলগুলোকে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করার বিধান রেখে ‘রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন আইন-২০২০’ নামে আইনের খসড়া প্রস্তুত করেছে নির্বাচন কমিশন। এক যুগ আগে একটি নিবন্ধন শর্ত পূরণ করেই দল নিবন্ধন পেয়েছে। আগামীতে দুটি নিবন্ধন শর্ত পূরণ করতে হবে আগ্রহী দলকে। প্রস্তাবিত রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইনের বিষয়ে মতামত জানাতে তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ৭ জুলাই পর্যন্ত মতামত দিতে পারবেন রাজনৈতিক দল ও নাগরিকরা।

ইসির খসড়া আইনে নিবন্ধন শর্তাবলিতে রাখা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব পর্যায়ের কমিটি ন্যূনপক্ষ শতকরা ৩৩ ভাগ সদস্য পদ নারী সদস্যদের জন্য সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা থাকতে হবে। কমিশনে প্রদেয় বার্ষিক প্রতিবেদনে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিবরণ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এ ছাড়া ইসিতে নিবন্ধন আবেদন করার তারিখ হতে পূর্ববর্তী দুটি সংসদ নির্বাচনে দলীয় নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে কমপক্ষে একটি আসনে জিততে হবে। অথবা সংসদ নির্বাচনের যে কোনো একটিতে দরখাস্তকারী দল নির্বাচনে প্রদত্ত মোট ভোটের শতকরা ৫ ভাগ ভোট পেতে হবে। অথবা দলের কেন্দ্রীয় কমিটি, সক্রিয় কেন্দ্রীয় দফতর, অন্যূন এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা দফতর, অন্যূন ১০০ উপজেলা বা মেট্রোপলিটন থানার প্রতিটিতে কার্যকর দফতরসহ ন্যূন পক্ষে দুইশ ভোটার সদস্য হিসেবে দলের তালিকাভুক্ত থাকতে হবে। ইসির রাজনৈতিক দল নিবন্ধন শাখার উপ-সচিব আবদুল হালিম খান জানান, মৌলিক বিধানাবলি অক্ষুণœ রেখে ইসির আইনগুলোকে ইংরেজির পরিবর্তে বাংলা ভাষায় প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এর অনুচ্ছেদ ৯০ এ- ৯০ ই পর্যন্ত বিদ্যমান আইনে না রেখে ‘রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন’ নামে বাংলায় একটা খসড়া করা হয়েছে। বাংলায় রূপান্তরকালে ইংরেজি ও বিদেশি শব্দের পরিবর্তে গ্রহণযোগ্য বাংলা ভাষা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার নিবন্ধিত দলগুলোর সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের কাছে ইমেইলে খসড়াসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দলের মতামত জানাতে বলা হয়েছে।

পল্লী, নগর ও মহানগর রাখার প্রস্তাব : সিটি করপোরেশনকে মহানগর, মেয়রকে মহানগর আধিকারিক; পৌরসভাকে নগর ও নগর সভা, মেয়রকে পুরাধ্যক্ষ বা নগরপিতা; কাউন্সিলরকে পরিষদ সদস্য; ওয়ার্ডকে মহল্লা; উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানকে উপজেলা পরিষদের প্রধান, উপ-প্রধান নামে বাংলায় প্রস্তাব করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদকে পল্লী পরিষদ করা হয়েছে বাংলায়। প্রস্তাবিত আইনে নতুন সংযোজন : রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের শর্ত ও বিধিবিধানে কয়েকটি নতুন বিষয় যুক্ত করে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে। বিদ্যমান আরপিওতে নিবন্ধন পেতে তিনটি শর্তের একটি পূরণ করলেই হতো। এবার বলা হয়েছে, শর্তাদির যে কোনো দুটি পূরণ করতে হবে। এর মধ্যে একটি নতুন বিষয়ও যুক্ত করা হয়েছে। নিবন্ধনের আবেদনের সময় থেকে পূর্ববর্তী দুটি নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে একটি আসন পেতে হবে।

গঠনতন্ত্রে ৩৩ ভাগ নারী প্রতিনিধি : রাজনৈতিক দলের সব স্তরের কমিটিতে ৩৩% নারী প্রতিনিধি পূরণে দলগুলোর গঠনতন্ত্রেই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এ ছাড়া দলের গঠনতন্ত্রে একদলীয় ব্যবস্থা বা দলবিহীন ব্যবস্থা সংরক্ষণ বা লালন করলে নিবন্ধন অযোগ্য হবে। সেই সঙ্গে যদি কোনো দল ইসির কাছে নিবন্ধিত থাকে; একই নামে কোনো দল নতুন করে আবেদন করতে পারবে না। সিটি, উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থিতার বিষয়টি প্রস্তাবিত আইনে যুক্ত করা হয়েছে। ২০০৮ থেকে নিবন্ধন প্রথা চালুর পর তিনটি নির্বাচন হয়েছে। নবম, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত দলই নির্বাচন করেছে। সেক্ষেত্রে নতুন প্রস্তাব অসঙ্গতিপূর্ণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেছেন, এ বিধানটি পরিমার্জনের প্রয়োজন পড়তে পারে। বর্তমান কমিশন দায়িত্বের তিন বছর পার করলেও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে আইন সংস্কার নিয়ে বারবার হোঁচট খেয়েছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন ইসির মেয়াদ শেষ। এক্ষেত্রে নতুন ইসির অধীনেই হবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। ভোটের আগে নতুন আইন হলে তা অনুসরণে নিবন্ধন করতে হবে দলগুলোকে।

নিবন্ধিত দলগুলোর মতামত নেবে ইসি : রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনে বিদ্যমান আইন-বিধিতে সংস্কার আনতে এবং নতুন আইনের খসড়া চূড়ান্ত করতে রাজনৈতিক দল ও নাগরিকদের মতামত নেবে কমিশন। এজন্য সব দলের কাছে এই আইনের খসড়াও পাঠিয়েছে ইসি। বিদ্যমান নির্বাচনী আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে দলগুলোর নিবন্ধন চালু হয় ২০০৮ সালে। সেই সঙ্গে দল নিবন্ধন বিধিও প্রণয়ন করা হয়। আরপিও মেনে নিবন্ধন শর্তপূরণ ও বিধি অনুসরণে প্রথমদিকে কিছু বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। এক যুগ পার হওয়ায় বিষয়গুলো যুগোপযোগী করার সময়ও এসেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে নির্র্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব এস এম আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইনের খসড়া দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে। আইনটি চূড়ান্ত করতে রাজনৈতিক দল ও নাগরিকদের সুচিন্তিত মতামত প্রয়োজন। আইনের খসড়াটি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে মতামত আগামী ৭ জুলাইয়ের মধ্যে জ্যেষ্ঠ সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় এর ইমেইল ([email protected]) ঠিকানায় পাঠানো যাবে।

সর্বশেষ খবর