মঙ্গলবার, ৩০ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা
বন্যার অবনতি

পানিবন্দী কয়েক লাখ মানুষ

প্রতিদিন ডেস্ক

পানিবন্দী কয়েক লাখ মানুষ

সিরাজগঞ্জে গতকাল বুক সমান পানিতে জিনিসপত্র নিতে দেখা যায় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। অবশ্য কোথাও কোথাও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি, আবার কোথাও কোথাও পানি কমার খবর পাওয়া গেছে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোয় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছেন। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো বিবরণ-

নীলফামারী : নীলফামারীর ডিমলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। উজানের ঢল কিছুটা কমে আসায় গতকাল বিকালে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার নিচে নেমে আসে। তবে সকাল ৬টায় তিস্তায় পানি বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং দুপুরে তা কমতে শুরু করে। বিকাল পর্যন্ত ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার (৫২ দশমিক ৫২) ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এদিকে তিস্তা নদীর অভ্যন্তরে চরাঞ্চলের বসতবাড়িতে বন্যার পানি বয়ে যাওয়ায় ঘরবাড়ি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

লালমনিরহাট : লালমনিরহাটে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে, ব্যারাজ পয়েন্টে পানি কমলেও ভাটিতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। ৫ দিন ধরে পানিবন্দী হয়ে থাকলেও এসব ভুক্তভোগী মানুষের অধিকাংশই এখনো পাননি ত্রাণ সহায়তা। উজানের ঢলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার নদী তীরবর্তী ১৭টি ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। প্রায়  ১২০০ হেক্টর পাট, ভুট্টা ও চিনাবাদাম খেত তলিয়ে গেছে। এদিকে ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীতে সৃষ্ট বন্যায় তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার বেশ কিছু এলাকায় নদীর পানি ঢুকে পড়েছে। ওই সব এলাকার অনেক বসতবাড়িতেও পানি উঠেছে। এতে লোকজন পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে অব্যাহত ভারি বর্ষণ ও উজানের পানিতে সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। পানিতে তলিয়ে গেছে নদ-নদীর নিম্নাঞ্চলের অনেক চর ও দ্বীপচর। ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর কয়েকটি পয়েন্টে মারাত্মকভাবে পানি বেড়ে বিপদসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, প্রত্যেকটি নদ-নদীর পানি দুপুরের পর দুই থেকে তিন সেন্টিমিটার কমতে শুরু করেছে। সন্ধ্যায় ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে পানি ৩ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার ওপর, নুনখাওয়া পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার কমে ৬৩ সেন্টিমিটার ওপর এবং ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার কমে ৬১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

ঠাকুরগাঁও : কয়েক দিনের টানা বর্ষণে ঠাকুরগাঁও জেলা শহরসহ কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পীরগঞ্জ-রাণীশংকৈল পাকা সড়কের গণিরহাট এলাকায় নির্মাণাধীন ব্রিজের বাইপাস সড়ক পানিতে তলিয়ে ভেঙে যাওয়ায় ওই দুই উপজেলার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ।

গাইবান্ধা : গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও করতোয়া নদীর পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পেয়ে জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি তিস্তামুখঘাট পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৮০ সেন্টিমিটার ওপরে ও ঘাঘট নদীর পানি নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। অন্যদিকে করতোয়ার পানি ৪৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তিস্তার পানি ৩ সেন্টিমিটার কমেছে। করতোয়া ও তিস্তা বিপদসীমর নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বগুড়া : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ও টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে বগুড়ার সারিয়াকান্দি পয়েন্টে যমুনা নদীতে পানি ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সারিয়াকান্দিতেই প্রায় ৬ হাজার ৬৩২ হেক্টর ফসলি জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছ। বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকালে যমুনা নদীর পানি ৬২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সিরাজগঞ্জ : যমুনার পানি দ্রতগতিতে বাড়ার ফলে ডুবছে বসতভিটাসহ রাস্তাঘাট-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আর দুর্ভোগে পড়ছে হাজার হাজার মানুষ। তিন দিন ধরে পানিবন্দী থাকলেও কোনো সহায়তা পৌঁছেনি তাদের ঘরে। কোনো কোনো পরিবার ওয়াপদাবাঁধে আর কোনো পরিবার পানির মধ্যেই মানবেতর বসবাস করছে। অন্যদিকে, পানি বাড়ায় যমুনা নদীর এনায়েতপুর ও চৌহালী পয়েন্টে ব্যাপক ভাঙন শুরু হওয়ায় নির্ঘুম রাত কাটছে এসব অঞ্চলের মানুষের। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। আরও দু-একদিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।

জামালপুর : টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনাসহ শাখা নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জামালপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। গতকাল বিকালে বাহাদুরাবাদঘাট পয়েন্টে যমুনার পানি বেড়ে বিপদসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন জেলার ৬ উপজেলার প্রায় দেড় লাখ মানুষ। অপরদিকে বন্যার পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

সিলেট : বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নামা বন্ধ হওয়ায় সিলেটে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। শুধু সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা ও কুশিয়ারার পানি বাকি সবগুলো পয়েন্টে কমে বিপদসীমার নিচে নেমে এসেছে। এ ছাড়া সারি ও লোভা নদীর পানিও কমেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বিকাল ৩টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে সকাল থেকে এ পয়েন্টেও পানি কমছিল।

সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত বন্ধ থাকায় কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। তবে এখনো জেলার অনেক সড়ক পানির নিচে তলিয়ে থাকায় বন্ধ রয়েছে সড়ক যোগাযোগ। পানিবন্দী হয়ে আছেন ৩২ ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষ। বন্যাকবলিত এলাকায় ৭৮টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে জেলায়। এরই মধ্যে ১৪৮টি পরিবারকে নেওয়া হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্রে।

সর্বশেষ খবর