শনিবার, ৪ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রবাল রাজ্য সেন্টমার্টিন

আলম শাইন

প্রবাল রাজ্য সেন্টমার্টিন

বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বে এবং দেশের সর্ব দক্ষিণে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের অবস্থান। দ্বীপের বিভিন্ন এলাকার নাম ছেঁড়া দ্বীপ, নারিকেল জিঞ্জিরা, দারুচিনি দ্বীপ ইত্যাদি। গবেষকদের কাছে এটি ‘প্রবালরাজ্য’ নামে পরিচিত। দ্বীপের আয়তন সাড়ে আট বর্গ কিলোমিটার। জোয়ারে হ্রাস পায় তিন বর্গ কিলোমিটার। এটি একটি ভাসমান দ্বীপ। মালয়েশিয়ার চামচাকৃতির একটি প্রবাল প্রাচীরের সঙ্গে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সংযোগ। সমুদ্রের গভীর তলদেশ দিয়ে প্রাকৃতিকভাবে এ সংযোগ স্থাপন হয়েছে।

দ্বীপটির নামকরণ হয় ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’র শাসনামলে। এটি টেকনাফ উপজেলার একটি ইউনিয়ন। টেকনাফ থেকে দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। যেতে হয় জাহাজে চড়ে, নাফ নদী আর উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ ভেঙে জাহাজ এগোতে থাকলে রোমাঞ্চকর অনুভূতির সৃষ্টি হয়। নাফ নদী অতিক্রম করে জাহাজ যতই এগোতে থাকে, সমুদ্র জলের ভিন্নরূপ দেখে ততই মুগ্ধ হন পর্যটক। এগোতে এগোতে সেন্ট মার্টিন পৌঁছলে জলের বর্ণ দেখা যায় পান্না পাথরের মতো, সবুজ। মনে হয় কেউ সুইমিংপুল বানিয়ে রেখেছে পর্যটকদের সাঁতার কাটতে। আরেকটি বাড়তি আনন্দ পাওয়া যায় গাঙচিলের ওড়াউড়িতে। জেটি থেকে জাহাজ ছাড়তেই একঝাঁক গাঙচিল পর্যটকদের চলার সঙ্গী হয়। জাহাজের পেছন পেছন উড়তে থাকে ওরা। পর্যটকদের ছুঁড়ে দেওয়া চিপস ও বিস্কুটের লোভে পাখিগুলো ৩০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিন পৌঁছে।

অপরূপ সৌন্দর্যের এ দ্বীপটির জীববৈচিত্র্যও ভিন্ন। ফলে বিশ্বের দুর্লভতম স্থান হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে দ্বীপটি। এখানে রয়েছে ৬৬ প্রজাতির প্রবাল, ১৫০ প্রজাতির মাছ, ৫ প্রজাতির দুর্লভ কাছিম, ১৫ প্রজাতির সাপ, ৩০০ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ২০০ প্রজাতির পাখি, ৫ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ৫ প্রজাতির টিকটিকি-গিরগিটি, ২০ প্রজাতির  স্তন্যপায়ী প্রাণী। এ ছাড়া রয়েছে পাথুরে শিলা, হরেক রকম শৈবাল, অসংখ্য নারিকেল গাছ এবং কেয়াবনসহ নানা বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ। বিশেষ করে বিশ্বের আর কোথাও এত অল্প আয়তনের জায়গায় এমন নৈসর্গিক ও জীববৈচিত্র্যের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এ বিশেষ কারণে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণীয় স্থান। জানা যায়, প্রতি বছর নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত এখানে দেড় লাখের অধিক পর্যটক আসেন। পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা দিতে গিয়ে সেন্ট মার্টিন পরিবেশগত সংকটে পড়েছে বলেও জানা যায়। রাতে জেনারেটর চালুর কারণে দ্বীপে আশ্রয় নেওয়া অনেক প্রজাতির প্রাণী ও মাছ ভয়ে সরে যাচ্ছে। বিশেষ করে বিশ্বের দুর্লভ প্রজাতির ‘অলিভ রিডলে টার্টল’ ভয়ে ডিম পাড়া থেকে বিরত থাকছে; চলে যাচ্ছে অন্য কোথাও। শব্দ দূষণের কারণে কয়েক প্রজাতির প্রাণী মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে। সময় থাকতে সাবধান না হলে বিশ্বের দুর্লভতম এ প্রবাল রাজ্য পরিবেশগত সংকটে পড়বে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা।

লেখক : কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।

সর্বশেষ খবর