মঙ্গলবার, ১৪ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

সুগন্ধ ছড়াচ্ছে নাগলিঙ্গম

মোস্তফা কাজল

সুগন্ধ ছড়াচ্ছে নাগলিঙ্গম

রাজধানীর বোটানিক্যাল গার্ডেনে মাতাল করা সুগন্ধ ছড়াচ্ছে বিরল প্রজাতির নাগলিঙ্গম ফুল। আষাঢ়ের বাতাসে এ ফুল মিষ্টি স্নিগ্ধতা দিচ্ছে। এমন ফুলের নাম শুনেই যে কারোর মাথায় আসতে পারে সাপ, নাগ-নাগিনী জাতীয় কোনো ছবি বা বাংলা সিনেমার দৃশ্য। তবে প্রত্যক্ষভাবে দেখলে সে চিন্তার কিছুটা ভাটা পড়বে নাগলিঙ্গমের কাছে গিয়ে। এ ফুলের লাল রঙের পাপড়ির সঙ্গে হলুদ পরাগ রেণু দেখে অবাক হওয়ারই কথা। ফুলের পরাগচক্র দেখতে অনেকটা সাপের ফণার মতো মনে হবে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন ফণা তোলা সাপ। রঙিন আভা ছড়ানো ফুলগুলোও বেশ বড় বড় হয়। এক কথায় দেখতে অসাধারণ। এই নাগলিঙ্গম তিন-চার দিন আগে ফুটেছে রাজধানীর বোটানিক্যাল গার্ডেনে। এ উদ্যানের দ্বিতীয় গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকলেই সামনে চোখে পড়বে দুর্লভ প্রজাতির এ গাছটি। বর্তমানে এ উদ্যানে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ভিতরে প্রবেশ বিগত ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ।

ফুল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেকটা বিস্ময়ের ফুলই বলা চলে-নাগলিঙ্গম কে। দেশে এই বৃক্ষের সংখ্যা খুবই কম। ফুলের রং, আভিজাত্য, মঞ্জরি, গঠনশৈলী- সবকিছু মিলিয়ে এটিকে অনন্য করে তুলেছে। এসব কারণে নাগলিঙ্গমকে ফুলের রানী বলা হয়ে থাকে। এ ছাড়া এ ফুলের পাপড়ির মধ্যে নাগ বা সাপের মতো ফণা আছে। সম্ভবত এ কারণেই এর নামকরণ হয়েছে ‘নাগলিঙ্গম’। উদ্যানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, নাগলিঙ্গম বিরল প্রজাতির ফুল। দেশে হাতেগোনা কয়েকটি গাছ রয়েছে। এই গাছের আদি নিবাস আমাজান ও মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকার বনাঞ্চল। নাগলিঙ্গম ৬০/৭০ ফুট পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। গুচ্ছ পাতাগুলো খুব লম্বা হয়। সাধারণভাবে ৮-৩১ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। গাছের গুঁড়ি ফুঁড়ে বের হওয়া দড়ির মতো এক ধরনের দন্ডের মঞ্জুরিতে ফোটে এ গাছের ফুল। ফুলের আকার বেশ বড় হয়। পাপড়ি মোটা। লাল, গোলাপি ও হলুদের মিশ্রণ নাগলিঙ্গমকে করেছে আরও আকর্ষণীয়। মে মাসে ফুল ফোটা শুরু হয়। বছরের জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত গাছে ফুল শোভা পায়। তিনি আরও জানান, ঔষধি বৃক্ষ হওয়াতে কিছু দেশে চাষ হলেও পৃথিবীতে এই গাছ এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। রোপণের ১২ থেকে ১৪ বছর পর ফুল ফোটে। বীজ থেকে এর চারা হয়। বছরে দুই থেকে তিনবার পাতা ঝরে যায়। ফুল শেষে বেলের মতো ফল হয়। অনেকে একে হাতির জোলাপ বলে থাকে। এগুলো হাতির খুবই প্রিয় খাবার। নাগলিঙ্গম গাছের রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ। এর ফুল, পাতা ও বাকলের নির্যাস থেকে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ তৈরি হয়। ’অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিফাঙ্গাল, অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহার হয় এর নির্যাস। এই গাছ থেকে তৈরি ওষুধ পেটের পীড়ার জন্য খুব উপকারী। পাতার রসও ত্বকের উপকার করে। ম্যালেরিয়া রোগ, বাত ব্যথা, অর্শ্ব রোগ নিরাময়ে নাগলিঙ্গমের পাতার রস বিশেষ উপকারী বলে বিবেচিত হয়ে আসছে। এ ছাড়া নতুন গাছপালা ও ফুলের কারণে আবারও সবুজ হয়ে উঠেছে এ উদ্যানটি। আর নিয়মিত তদারকিতে প্রাণ ফিরে পেয়েছে এ উদ্যানের নাগলিঙ্গম ফুল। বর্তমানে এ উদ্যানে সেতু চন্দন, আগোরা, দত্তকিয়া ও লালসালুসহ আরও বিলুপ্ত প্রায় ২০ প্রজাতির গাছ লাগিয়েছে বন বিভাগ। সব মিলিয়ে গোটা উদ্যান সবুজ নিসর্গ হয়ে উঠেছে।

সর্বশেষ খবর