বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা
স্বাস্থ্য পরামর্শ

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কিছু উপায়

ডা. আফরিন সুলতানা

বিশ্বব্যাপী করোনার প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। প্রতিদিন কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা এবং মৃত্যের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আমাদের দেশের পরিস্থিতিও এর ব্যতিক্রম নয়। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে এত বিপুল পরিমাণ রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে। এ অবস্থায় আমাদের উচিত প্রতিরোধের দিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া এবং এ জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো বা ইমিউনিটি বুস্ট করার দিকে বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত। তাই আজকে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ইম্যুউন সিস্টেম করার কয়েকটি কার্যকর উপায় সম্পর্কে বলব-

খাদ্যাভ্যাস : সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। প্রচুর শাকসবজি ও ফলমূল খান। ফলের রসের পরিবর্তে গোটা ফল চিবিয়ে খেলে ভালো। এতে পুষ্টির সঙ্গে ফাইবারও পাওয়া যাবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন, দিনে ৮-১০ গ্লাস। ফাস্টফুড, অতিরিক্ত তেল-চর্বি ও মসলা খাবার যতটুকু সম্ভব পরিহার করুন।

ভিটামিন ও মিনারেল : ভিটামিন ও মিনারেল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ভিটামিন সি : প্রাকৃতিক উৎস হচ্ছে টক জাতীয় ফল, যেমন- লেবু, কমলা, মাল্টা, আমড়া, জাম্বুরা ইত্যাদি। এ ছাড়াও বাজারে ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায়, যা ফ্লু উপসর্গে আপনি দিনে ১-২ বার চুষে খেতে পারেন। তবে প্রাকৃতিক উৎস থেকে পাওয়া ভিটামিন সি এর কার্যকারিতা বেশি।

ভিটামিন ডি : এর প্রাকৃতিক উৎস হচ্ছে সূর্যরশ্মি যা সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত শরীরের কিছু অংশ উন্মুক্ত করে। (যেমন-মুখমন্ডল, হাত বা ঘাড় আপনি কাজে লাগাতে পারেন। এ ছাড়াও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার যেমন- ডিমের কুসুম, মাছের তেল, ওমেগাও, গরুর কলিজা, চিজ বা পনির এগুলো খেতে পারেন।

জিংক : ফ্লু বা সর্দি-কাশি উপসর্গে, জিংকের বেশ উপকারিতা রয়েছে। জিংকসমৃদ্ধ খাবারগুলো হচ্ছে- আদা, রসুন, বাদাম, সামুদ্রিক মাছ, ইত্যাদি। লজেন্স আকারে জিংক সাপ্লিমেন্ট খেতে পারেন ২-৩ ঘণ্টা পরপর।

মধু : মধুতে এমন কিছু জীবাণু ধ্বংসকারী উপাদান রয়েছে। যেমন-হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, নাইট্রিক অক্সাইড যা আরএনএ ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে। তাই ফ্লু উপসর্গে মধু বেশ উপকারী তবে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে সাবধানে খেতে হবে।

প্রোবায়োটিক্স : যেমন- দই, চিজ ইত্যাদি এসব খাবারে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

মানসিক চাপমুক্ত থাকুন : অতিরিক্ত মানসিক চাপে আমাদের শরীরের সিম্প্যাথেটিক অ্যাক্টিভিটি বেড়ে যায় এবং কর্টিসল হরমোন নিঃসরণ হয়, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ব্যাহত করতে পারে। তাই মানসিক চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। টিভি, সোশ্যাল মিডিয়াতে যে খবরগুলো আপনাকে মানসিক চাপে ফেলছে, সেগুলো থেকে দূরে থাকুন। মনকে উৎফুল্ল রাখার জন্য পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটান, গান শুনুন, বই পড়ুন, মুভি দেখুন বা নতুন কিছু শিখতে মনোনিবেশ করুন। এ ছাড়া যোগ ব্যায়াম বা মেডিটেশন খুব ভালো একটি উপায় মনকে শান্ত রাখার।

ঘুম : মনে রাখবেন, ঘুম মানবদেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। প্রতিদিন অন্তত ৮ ঘণ্টা করে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম আমাদের শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়।

শরীরচর্চা : শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে শরীরচর্চা অপরিহার্য। বিশেষ করে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে যখন আমরা সবাই ঘরে অবস্থান করছি। প্রাপ্ত বয়স্কদের প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট এবং ছোটদের অন্তত ১ ঘণ্টা শরীরচর্চা করা উচিত। ঘরে থেকে আপনি যা করতে পারেন হাঁটাহাঁটি, সাইক্লিং, ইয়োগা, ওয়েট শিফ্টিং, এ ছাড়া সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা শরীর চর্চার উপায় হতে পারে।

লেখক : কনসালটেন্ট, হলি ফ্যামেলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।

সর্বশেষ খবর