বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

সবুজের হাতছানি সুন্দরবনে

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

সবুজের হাতছানি সুন্দরবনে

বর্ষায় জেগে উঠেছে সুন্দরবন। আম্ফানের ক্ষতি কাটিয়ে সুন্দরী, গেওয়া, গরানের বনে এখন সবুজের বিচ্ছুরণ। চারপাশে নতুন পাতা নতুন শাখায় সবুজের হাতছানি। বিচরণ বেড়েছে বাঘ-হরিণসহ বন্য প্রাণীদের। করোনায় দীর্ঘসময় বনে প্রবেশ বন্ধ থাকায় প্রকৃতি তার আসল রূপের প্রকাশ ঘটিয়েছে।

সুন্দরবনের কটকা, কলাগাছিয়া, গেওয়াখালী, চালকি, মানিকখালী, আন্দারমানিক এসব স্থানে নতুন গাছপালার উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। বনে প্রবেশ করা জেলে-মৌয়ালরা বলছেন, সুন্দরবনে আগের তুলনায় পশুপাখির সংখ্যাও বেড়েছে। এমনকি নদী-খালে মিলছে চিংড়ি, পারশেসহ বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য মাছ। বন কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে সুন্দরবনে বনজীবী প্রবেশে বিধিনিষেধ রয়েছে। ফলে বনজীবীরা চাইলেই জঙ্গলে প্রবেশ করতে পারছেন না। এ ছাড়া সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি ও অবাধ বিচরণ নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বনে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে প্রকৃতি নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার সময় পেয়েছে। সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনার কয়রা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির জানান, বনে জলদস্যু-বনদস্যুর আনোগোনা কমেছে। দর্শনার্থীরা বনে ঢুকছেন না। দুই মাসের জন্য পাসপারমিটও বন্ধ। ফলে টানা বর্ষায় যৌবনকাল ফিরেছে সুন্দরবন। জানা যায়, ২০ মে আম্ফানের আঘাতে পশ্চিম সুন্দরবনের প্রায় সাড়ে ১২ হাজার গেওয়া, গরান গাছ উপড়ে-ভেঙে পড়ে। কিন্তু সুন্দরবনে সব ধরনের গাছ কাটা নিষিদ্ধ থাকায় আম্ফানের তা-বলীলায় ক্ষতিগ্রস্ত গাছ যেভাবে আছে সেভাবেই রাখা হয়। এতে সুন্দরবনকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সহজ হয়েছে। তবে সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের বন কর্মকর্তা মো. বশিরুল আল মামুন বলেন, ১৯ মার্চের পর থেকে দীর্ঘসময় বনে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। অবাক করা বিষয়- বনে আম্ফানের ধ্বংসলীলা এখন দেখে আর বোঝার উপায় নেই। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে উপড়ে পড়া গাছগুলো দুই মাসের মধ্যেই অনেকটা স্বাভাবিকতায় ফিরেছে। বনে হরিণ-শূকর ও অন্যান্য প্রাণীর আনাগোনা বেড়েছে। সেই সঙ্গে নদী-খালে মাছের বিচরণ চোখে পড়ছে। তবে ১ জুলাই থেকে সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও চোরা শিকারিদের বনে প্রবেশ ও বিষ দিয়ে মাছ ধরায় হুমকির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র্য। গত ১৮ জুলাই খুলনার দাকোপ কালাবগি সুন্দরবন এলাকায় ভদ্রা নদীর খালে বিষ দিয়ে মাছ ধরার অভিযোগে আটজনকে গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এ সময় চারটি ডিঙ্গি নৌকা, মাছ ধরার জাল, চার বোতল কীটনাশক দিয়ে মারা বিপুল পরিমাণ মাছ উদ্ধার হয়। স্থানীয়রা জানান, ভরা জোয়ারের সময় অসাধু জেলেরা খালের মুখে পানিতে বিষ দেয়। এতে ওই খালের মধ্যে থাকা মাছ ও মাছের ডিমসহ সব ধরনের জলজ প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ডা. মো. এনামুল কবির বলেন, বিষ দিয়ে মাছ ধরার ফলে পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। প্রকৃতিকে নিজের মতো বেড়ে উঠতে সময় দিতে হয়। দু-তিন বছরের জন্য বনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে পারলে পূর্ণ চেহারায় ফিরবে সুন্দরবন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর