বুধবার, ১৯ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

ফের বিপৎসীমার ওপরে ছয় নদীর পানি

বন্যায় ২২২ মৃত্যু, ক্ষতিগ্রস্ত চার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফের বিপৎসীমার ওপরে ছয় নদীর পানি

বন্যার পানিতে ভেঙে যাওয়া সুনামগঞ্জ-ছাতক সড়ক -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশে চলমান বন্যায় এখন পর্যন্ত সরকারি হিসাবেই প্রাণ হারিয়েছেন ২২২ জন। এ ছাড়া প্রায় চার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার হিসাব পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বন্যার কারণে নদীভাঙনে ভিটামাটি হারিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। এখনো ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে বরিশাল বিমানবন্দরও। দেড় মাসেরও বেশি সময় পানিবন্দী থাকার পর বিভিন্ন এলাকা থেকে বন্যার পানি নামলেও ফের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। এতে ফের প্লাবিত হচ্ছে বিভিন্ন এলাকা। দীর্ঘদিন বন্যা কবলিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোর পাশাপাশি এবার চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলায়ও বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাহাড়ি এলাকাগুলোয় ভূমিধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গতকাল সকালে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য মতে- পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ধলেশ্বরী, গুড় ও বাঘাবাড়ি নদী বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া ২৪ ঘণ্টায় পর্যবেক্ষণাধীন ১০১টি পানি সমতল স্টেশনের ৫৩টিতে পানি বেড়েছে। আজ এবং কাল দেশের দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চল এবং দক্ষিণ-মধ্য উপকূলীয় অঞ্চলে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে ওই অঞ্চলগুলোর নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার বিভিন্ন এলাকায় স্বল্প মেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে ভূমিধসের শঙ্কা রয়েছে। তবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি হ্রাস পাচ্ছে। স্থিতিশীল রয়েছে গঙ্গা-পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি সমতল।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৩৩ জেলায় এবারের বন্যায় অন্তত ২২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ৩০ জুন থেকে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত বন্যার পানিতে ডুবে ১৮৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া সাপের কামড়ে ২০ জন, বজ্রপাতে ১৩ জন, ডায়রিয়ায় একজন এবং অন্যান্য কারণে দুজন মারা গেছেন। বর্তমানে দেশের ৩৩টি জেলার ২৬৯টি উপজেলার দুই হাজার ৫৯৩টি ইউনিয়নের মধ্যে এক হাজার ৭৮টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত।

এ ছাড়া বন্যায় এখন পর্যন্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ২৫ জেলায় প্রায় চার হাজার সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কোনোটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে, কোনোটি পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে, কোনোটি আংশিক ভেঙে গেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) সূত্র জানায়, বন্যায় ছয়টি বিভাগে তিন হাজার ৯০৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) অধীনে থাকা ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। ডিপিই ও মাউশি পৃথক সেল করে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য সংগ্রহ করছে বলে জানা গেছে। বন্যার কারণে সুগন্ধা নদীতে তীব্র ভাঙন শুরু হওয়ায় ঝুঁকিতে পড়েছে বরিশাল বিমানবন্দর। সুগন্ধা নদীর ভাঙনে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের ব্লক ও বেড়িবাঁধের প্রায় এক হাজার ফুট অংশ এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। দেবে গেছে বেড়িবাঁধ-সংলগ্ন ক্ষুদ্রকাঠি-দোয়ারিকা গ্রামের সংযোগ সড়কের ৪০০ ফুটের বেশি অংশ। বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বরিশাল বিমানবন্দরের উত্তর প্রান্তে রানওয়ের বর্ধিতাংশের জমি ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছে। বর্তমানে নদী থেকে এ জমির দূরত্ব ৩০০ ফুটেরও কম।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো আরও তথ্য-

গাইবান্ধা : সদরের কামারজানি ইউনিয়নের গোঘাট গ্রামে বন্যা পরবর্তী ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত এক সপ্তাহে ভাঙনে এই গ্রামের ২০৫টি ঘরবাড়ি, ৭০ একর আবাদি জমি ও অসংখ্য গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। শতাধিক ঘরবাড়ি হুমকির মুখে রয়েছে। আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন তিন শতাধিক মানুষ। মানিকগঞ্জ : বন্যার পানিতে ডুবে গত সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার উলাইল ইউনিয়নের রূপসা গ্রামে হৃদয় (৪) ও রাতুল (৬) নামের দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া গত দুই দিন ধরে পদ্মা-যমুনার পানি আবারও বাড়তে শুরু করায় মানিকগঞ্জের নিম্নাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হতে শুরু করেছে। 

নেত্রকোনা : পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত নেত্রকোনার নিম্নাঞ্চলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আন্তঃউপজেলা সড়কসহ বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক। সেই সঙ্গে জেলার নিচু অনেক এলাকার বীজতলা নষ্ট হয়েছে। নেত্রকোনা-ঠাকুরাকোনা-কলমাকান্দা ৩৭ কিলোমিটার সড়কটির কাটটুয়াচোরা, পোগলা, হীরাকান্দা, সিধলী, গুমাইসহ বিভিন্ন এলাকায় যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

রাজবাড়ী : গত কয়েক দিন ধরে রাজবাড়ীতে পদ্মা নদীর পানি কমতে কমতে বিপৎসীমার নিচে নামলেও পদ্মা নদীর তিনটি পয়েন্টে ফের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজবাড়ীর তিনটি পয়েন্টের মধ্যে দুটি পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, গত কয়েক দিন ধরে ভারতে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হওয়ায় তারা কয়েকটি বাঁধ ছেড়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে উপকূলীয় অঞ্চলে নিম্নচাপের কারণে দেশের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী এক সপ্তাহ পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। তবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও রাজবাড়ীতে আর বন্যার শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।

সিরাজগঞ্জ : টানা বন্যা, বৃষ্টি আর ভাঙনে এরই মধ্যে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে জেলার বন্যাকবলিত অসংখ্য পরিবার। চতুর্থ দফা ফের পানি বাড়ায় ভয়াবহ আতঙ্ক দেখা দিয়েছে দুর্গত এলাকার মানুষগুলোর মধ্যে। করোনা ও বন্যায় কর্ম না থাকায় অনেক পরিবার অর্ধাহারে-অনাহারে দিনযাপন করছে। পানিবন্দী মানুষের মধ্যে চরম খাদ্য, ওষুধ ও শুকনো খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। দেখা দিয়েছে পানিবাহিত ডায়রিয়া ও হাত পায়ে ঘাসহ নানা রোগ।

সর্বশেষ খবর