শিরোনাম
শনিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

দখলমুক্ত নদীতেই ফেলা হচ্ছে ময়লা

১০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ ও টঙ্গী নদীবন্দরের প্রায় ১৬ কিলোমিটার দখলমুক্ত করা হয়

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

দখলমুক্ত নদীতেই ফেলা হচ্ছে ময়লা

নদীর তীরে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। নষ্ট হচ্ছে পানি। ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের। নষ্ট হচ্ছে সৌন্দর্য -বাংলাদেশ প্রতিদিন

১০৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও টঙ্গী নদীবন্দরের প্রায় ১৬ কিলোমিটার দখলমুক্ত করা হলেও এখন নদীর ভিতরে ও তীরে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। ময়লা ফেলার জন্য নেই কোনো কর্মসূচি। ফলে নষ্ট হচ্ছে নদীর পানি। পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে নদীর সৌন্দর্য। আবার লোকজন ওয়াকওয়ের নিচ দিয়ে ড্রেন তৈরি করছে। প্রকল্পের আওতায় স্ট্রিট লাইটের ব্যবস্থা না থাকায় রাতের বেলা চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে বেঞ্চ। সমাপ্ত প্রকল্পের সুফল কী তা জানতে সাম্প্রতিক মূল্যায়নে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

জানা যায়, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও টঙ্গী নদীবন্দর এলাকার ফোরশোর (তীর) ভূমির অবৈধ দখল প্রতিরোধ করতে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা ও তুরাগ নদের প্রস্তাবিত অংশের সৌন্দর্যবর্ধন, নদ-নদীগুলোর উভয় তীরের পরিবেশ উন্নয়নসহ সেবার মান বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে নদ-নদীগুলোর ফোরশোর ভূমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করাই ছিল এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। প্রথমে ৯৯ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হলেও সংশোধন করে প্রায় ১০ শতাংশ ব্যয় বাড়িয়ে তা ১০৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা করা হয়। এ টাকা ব্যয়ও করা হয়েছে। ২০১৫ সালের জুনে কাজের শতভাগ অগ্রগতি হয়। প্রকল্পের মাধ্যমে তুরাগ নদের টঙ্গী প্রান্তে প্রায় ১ হাজার ২৯০ মিটার হাঁটার রাস্তা ও তীর সংরক্ষণ কাজ, ৬৭৫ মিটার পাইলের ওপর ওয়াকওয়ে নির্মাণ, ৩৩৫ মিটার কিউওয়াল নির্মাণ এবং ১৫টি আরসিসি সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়। এসব কাজে ২০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। তুরাগ নদের ঢাকা প্রান্তে ২ হাজার ৯০ মিটার হাঁটার রাস্তা ও তীর সংরক্ষণ, ৬১৫ মিটার পাইলের ওপর ওয়াকওয়ে এবং ১৮টি আরসিসি সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়। এতে ১৭ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করা হয়েছে। গাবতলীর বড়বাজার থেকে টার্মিনাল পর্যন্ত ৯০০ মিটার হাঁটার রাস্তা ও তীর সংরক্ষণ কাজ, ৫২৫ মিটার কিউওয়াল নির্মাণ, ৯টি আরসিসি সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়। এতে ১৪ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। এ ছাড়া গাবতলী এলাকায় ২ হাজার ১৩০ মিটার হাঁটার রাস্তা ও তীর সংরক্ষণ কাজ, ৭৫ মিটার কিউওয়াল এবং ৮টি আরসিসি সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়। এসব কাজে ব্যয় করা হয়েছে ১২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আর নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে ডেমরা পর্যন্ত ২ হাজার ৭৬০ মিটার হাঁটার রাস্তা ও তীর সংরক্ষণ, ৬০ মিটার কিউওয়াল নির্মাণ এবং ৫টি আরসিসি সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়। এসব কাজে ব্যয় করা হয়েছে প্রায় ১৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া কাঁচপুর এলাকায় ব্রিজের নিচে ১ হাজার ৩০০ মিটার হাঁটার রাস্তা ও তীর সংরক্ষণ কাজ, ৯০ মিটার কিউওয়াল নির্মাণ এবং ৫টি আরসিসি সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়। এতে ব্যয় করা হয়েছে প্রায় ৮ কোটি টাকা। এভাবে ১৪ হাজার ৮৬ মিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ, ১৩ হাজার ২০৬ মিটার তীর রক্ষা, ১ হাজার ৫২৯ মিটার আরসিসি পাইলের ওপর ওয়াকওয়ে নির্মাণ, ৮৯টি আরসিসি সিঁড়ি নির্মাণ, ২৫১ মিটার বাউন্ডারি ওয়াল এবং ৮৭০ মিটার কিউওয়াল নির্মাণ করা হয়। এসব অবকাঠামো কার্যকর আছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব এলাকায় মাদকসেবী ও ছিনতাইকারীদের ভয়ে এলাকাবাসী রাতের বেলা ভয়ে থাকেন। বেঞ্চসহ বিভিন্ন অবকাঠামো মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির জন্য প্রকল্পে কোনো বরাদ্দ নেই। ফলে বেঞ্চগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। তা দূর করার জন্য এলাকাবাসী ওয়াকওয়ের নিচে ড্রেন তৈরি করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করেছেন, যা নির্মিত স্থাপনার স্থায়িত্বের জন্য হুমকি। ওয়াকওয়েতে গরু, ছাগল ও নোঙর করার দড়ি বাঁধার কারণে পথচারীদের যাতায়াতের সমস্যা হওয়ার পাশাপাশি রেলিং ও নদীর তীর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কাঁচপুরের অনেক তীরভূমি এখনো অবৈধ দখলদারের কব্জায় রয়েছে। প্রতিবেদনে তার সমীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে কিছু বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে সমজাতীয় প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে তা সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।

নদী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, নদীকে জীবন্ত সত্তা আখ্যায়িত করে আদালতের দেওয়া রায় ও নির্দেশনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে নদী দখল ও দূষণের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আদালতের রায় বাস্তবায়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারই যদি সরকারের সঙ্গে যুদ্ধ করে, তাহলে নদী দখলমুক্ত, দূষণমুক্ত হবে কীভাবে!

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর