রবিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

যে কোনো উৎসবে জাল নোট ছাড়ে ওরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

যে কোনো উৎসবে জাল নোট ছাড়ে ওরা

থরে থরে সাজানো হাজার টাকার বান্ডিল। আছে ডলারও। মুদ্রার রং, জলছাপ থেকে শুরু করে সবকিছুই যেন আসল। প্রথম দেখায় বিভ্রান্ত হতে পারেন যে কেউ। আসলে এর সবই মেশিনে ছাপানো, জাল নোট। এসব জাল টাকা তৈরি চক্রের মাস্টারমাইন্ড কাজী মাসুদ পারভেজকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় প্রায় ৫৯ লাখ জাল টাকা, ১১৩টি জাল ডলার ও জাল টাকা তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। একই অভিযানে তার ছয় সহযোগীও গ্রেফতার হন।

গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার জানান, যে কোনো বড় উৎসবকে কেন্দ্র করে এ চক্র বাজারে বেশি পরিমাণ জাল টাকা ছাড়ে। চলতি মাসে তারা জাল টাকা তৈরির তিনটি চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছেন। গ্রেফতার ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্যে ২৩ অক্টোবর রাজধানীর কোতোয়ালি, আদাবর থানাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়। কাজী মাসুদ পারভেজ ছাড়াও মোহাম্মদ মামুন, শিমু, রুহুল আলম, সোহেল রানা, নাজমুল হককে গ্রেফতার করা হয়। চাক্রের মাস্টারমাইন্ড মাসুদ পারভেজের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি এর আগেও গ্রেফতার হয়েছেন। বারবার গ্রেফতার হয়ে জামিনে বের হয়ে এসেছেন। এবার তারা তার বিরুদ্ধে স্পেশাল অ্যাক্টে মামলা করবেন, যেন সহজে বের হয়ে আসতে না পারেন। হাফিজ আক্তার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, তারা পাঁচ-ছয় বছর ধরে পরস্পরের যোগসাজশে জাল নোট প্রস্তুত করে খুচরা ও পাইকারি দরে বিক্রি করেন। তারা বড় কোনো উৎসব যেমন ঈদ, দুর্গাপূজা ইত্যাদি অনুষ্ঠানকে টার্গেট করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের সহযোগীদের মাধ্যমে জাল টাকা সরবরাহ এবং বিক্রি করেন। ১ লাখের জাল নোট তারা ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। অভিযানে তাদের কাছ থেকে জাল নোট তৈরির সরঞ্জাম হিসেবে একটি ল্যাপটপ, দুটি স্ক্যানার, একটি ল্যামিনেটর, দুটি প্রিন্টার, ১২টি ট্রেসিং প্লেট, ৫ রিম জাল টাকা ছাপানোর কাগজ জব্দ করা হয়েছে।

এর আগে ১৮ অক্টোবর আরেক জাল নোট কারবারিকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। জাল টাকা তৈরি ও বাজারজাত করায় আগে র‌্যাব-পুলিশের হাতে ছয়বার গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। তবে প্রতিবারই জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে ফের জড়িয়ে পড়েন একই কাজে। সর্বশেষ দেড় বছর আগে জেল থেকে বেরিয়ে আরও বড় পরিসরে জাল টাকা তৈরির কারখানা গড়ে তোলেন। তিনি হলেন হুমায়ুন কবির। সর্বশেষ রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে সপ্তমবারের মতো পুলিশের হাতে ধরা পড়েন হুমায়ুন ও তার তিন সহযোগী। ডিবিসূত্র জানান, মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডের ছয় তলা একটি বাড়ির দ্বিতীয় তলায় অভিযান চালিয়ে জাল টাকা তৈরির কারখানার সন্ধান পাওয়া যায়। কারখানার মালিক হুমায়ুন কবির। তাকেসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যরা হলেন জামাল উদ্দিন, তাসলিমা আক্তার ও সুখী আক্তার। অভিযানে দুটি ল্যাপটপ, চারটি প্রিন্টার, কয়েকটি কাটার, অনেক স্ক্রিন, ডাইস, নিরাপত্তা সুতা, বিভিন্ন রঙের কালি, আঠা, বিপুল পরিমাণ জলছাপযুক্ত বিশেষ কাগজ, বিপুল পরিমাণ অন্যান্য সামগ্রী ও সফট ডাটা/কপি উদ্ধার করা হয়; যা দিয়ে আনুমানিক ৪ কোটি জাল টাকা তৈরি করা সম্ভব। এ ছাড়া বাসার বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রাখা বিভিন্ন বান্ডিলে ৪৯ লাখ টাকার জাল নোট উদ্ধার করা হয়। চক্রটি সারা বছর ধরে জাল টাকা তৈরি করলেও দুর্গাপূজা উপলক্ষে জোরেশোরে জাল টাকা তৈরির কাজ করছিল। হুমায়ুন গ্রেফতার দুই নারীকে ১৫ হাজার ও ১০ হাজার টাকায় চাকরি দিয়েছিলেন। তাসলিমার স্বামী সাইফুল ইসলাম গত জানুয়ারিতে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়ে জেলখানায় আছেন।

সর্বশেষ খবর