শুক্রবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

জ্ঞান ও সৃজনশীলতার বাতিঘর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র

মোস্তফা মতিহার

জ্ঞান ও সৃজনশীলতার বাতিঘর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র

জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি, মেধা-মনন ও সৃজনশীলতার বাতিঘর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে মানবিক চেতনাসম্পন্ন মানুষ গড়ার লক্ষ্যে ‘আলোকিত মানুষ চাই’ স্লোগানে ৪২ বছর আগে পথচলা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। হাঁটি হাঁটি পা পা করে রাষ্ট্র ও সমাজের আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করছে এখন। বই পাঠের মাধ্যমে তরুণদের সঠিক পথে চালানোর জন্য প্রতিষ্ঠানটি নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। নিচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোগ। ‘মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়’ স্লোগানের বই পড়া কর্মসূচির সঙ্গে বর্তমানে দেশের ১৭ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী সম্পৃক্ত। বই পাঠ ও সৃজনশীল কর্মকান্ডের মাধ্যমে সৎ চিন্তার বিকাশ ও মানবিক মানুষ গড়ে তুলতে ১৯৭৮ সালে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন আলোকিত মানুষ অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। বই পড়া কর্মসূচির দীর্ঘমেয়াদি পাঠচক্র কার্যক্রমে রয়েছে পৃথিবীর ‘সেরা’ ২০০ বই পড়ার সুযোগ। সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞানসহ বিশ্বজ্ঞানের বইগুলোর পঠন-পাঠন এ চক্রের পাঠ্যতালিকার অন্তর্ভুক্ত। অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর স্বল্পমেয়াদি পাঠচক্র। এর বিষয়বস্তুর মধ্যে রয়েছে দর্শন, রবীন্দ্র অধ্যয়ন, রাজনীতি, বিশ্ব ইতিহাস ও বিজ্ঞান।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে রয়েছে সুবিশাল গ্রন্থাগার, চিত্রকলা প্রদর্শনী কক্ষ, চলচ্চিত্র প্রদর্শনের কক্ষ, সংগীতের আর্কাইভসহ আরও অনেক কিছু। বই পড়া কর্মসূচির পাশাপাশি প্রতি শুক্রবার কেন্দ্রের সদস্যরা অংশ নেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। তবে করোনার কারণে বর্তমানে কেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ। প্রধান কার্যালয় ঢাকার বাংলামোটরে। শাখা রয়েছে সারা দেশেই। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আলোকিত মানুষগুলোকে সংঘবদ্ধ করে জাতির মনন ও চিত্তকে আলোকিত করার জন্য কাজ করছে এ প্রতিষ্ঠানটি। জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার আনন্দময় চর্চা ও উৎকর্ষের মধ্য দিয়ে উদার দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ গড়ে তোলার জন্য ২০১৩ সাল থেকে চালু রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির ‘আলোর ইশকুল’ ও অনলাইনে বই পড়া কর্মসূচি ‘আলোর পাঠশালা’। আর ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার প্রকল্পের অধীনে বাসে করে শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন বই পাঠাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। দেশব্যাপী তাদের ৫৬টি ভ্রাম্যমাণ গাড়ির মাধ্যমে এ কার্যক্রম চলছে। দেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে বাছাই করে প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের মানবসভ্যতার সেরা বইগুলো পড়িয়ে তাদের চেতনাজগৎ বিকশিত করার কাজটিও করছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, পঠিত বইয়ের ওপর আলোচনা, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, অতিথি বক্তৃতা, সংগীত শ্রবণ কর্মসূচি, মানুষ ও দেশ সম্পর্কে জানা, পরিবেশ পরিচিতি, বছরের শেষে দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ, পিকনিকসহ নানা কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে উন্নত মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ গড়ে তোলার জন্য তরুণদের স্বপ্নের পথে নিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। দেশের যেখানেই একসঙ্গে দুটি বা তিনটি স্কুল ও একটি বা দুটি কলেজ রয়েছে সেখানেই গড়ে উঠেছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের শাখা। এসব শাখায় দুই ধরনের কার্যক্রম চলছে।

একটি হচ্ছে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মন ও বয়স উপযোগী ১৬টি সুন্দর, রুচিসম্মত ও উন্নতমানের বই পড়ার সুযোগ। বই পড়া উৎসাহিত করার লক্ষ্যে তাদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থাও রয়েছে। ২২ সপ্তাহ ব্যাপ্তির এ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যারা সাতটি বই পড়ে তাদের দেওয়া হয় ‘স্বাগত পুরস্কার। ১০টি বই পড়ুয়ারা পান ‘শুভেচ্ছা পুরস্কার। ‘অভিনন্দন পুরস্কার’ পান ১৩টি বই পড়ুয়ারা। আর সবকটি বই পড়ুয়াদের দেওয়া হয় ‘বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র পুরস্কার’। আর পুরস্কার হিসেবেও দেওয়া হয় বিভিন্ন ধরনের বই। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য বই পড়ার পাশাপাশি রয়েছে পর্যাপ্ত সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের ব্যবস্থা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষের সহযোগিতায় এবং একজন যোগ্য ও সংস্কৃতিমান শিক্ষক বা অধ্যাপকের নেতৃত্বে পরিচালিত হয় স্কুল-কলেজভিত্তিক কর্মসূচি। আলোকিত মানুষ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৮ সালে ইউনেস্কোর ‘জ্যঁ আমোস কমেনিউয়াস পুরস্কার’ অর্জন করে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। আর অসাধারণ এ প্রতিষ্ঠানটির জন্য ‘র‌্যামন মেগসেসে’ পুরস্কারে ভূষিত হন এটির প্রতিষ্ঠাতা আলোকিত মানুষ অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।

সর্বশেষ খবর