বুধবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

হদিস নেই ২৯ ভাগ করোনা রোগীর

কোয়ারেন্টাইন আইসোলেশন ও হাসপাতালে ভর্তি ৭১ ভাগ রোগী, ২৯ ভাগের তথ্য নেই স্বাস্থ্য অধিদফতরে, বাড়ছে সংক্রমণ ঝুঁকি, ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ২২৩০, মৃত্যু ৩২

শামীম আহমেদ

হদিস নেই ২৯ ভাগ করোনা রোগীর

দেশে দুই মাস করোনা সংক্রমণ কমার পর আবারও বাড়তে শুরু করেছে। বাড়ছে মৃত্যুও। এই পরিস্থিতিতে  দেশে শনাক্ত হওয়া সক্রিয় করোনা রোগীর ২৯ ভাগেরই হদিস নেই। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে নেই ২২ হাজারের বেশি রোগীর কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন বা হাসপাতালে ভর্তি থাকার তথ্য। এই বিপুল সংখ্যক রোগী যত্রতত্র ঘুরে বেড়িয়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে যাচ্ছে কিনা তা জানা নেই কারও। বিষয়টি দেশে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে তুলেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের গতকালের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির তথ্যানুযায়ী, সুস্থ ও মৃত বাদে দেশে বর্তমানে সক্রিয় করোনা রোগী আছে ৭৮ হাজার ৬৬৫ জন। এর মধ্যে কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশনে আছেন ৫২ হাজার ৫৫৭ জন। হাসপাতালে ভর্তি আছেন তিন হাজার ২১০ জন। সব মিলিয়ে হিসাব আছে ৫৫ হাজার ৭৬৭ জনের (৭০ দশমিক ৯০ শতাংশ)। অপর ২২ হাজার ৮৯৮ জনের (২৯ দশমিক ১০ শতাংশ) কোনো তথ্য নেই স্বাস্থ্য অধিদফতরে। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে দুই হাজার ২৩০ জনের। এর মধ্যে কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশনে গেছেন মাত্র এক হাজার ১৬১ জন। অল্প কিছু রোগী নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বাকিদের কোনো তথ্য নেই স্বাস্থ্য অধিদফতরে। হদিস না থাকা এসব রোগী স্বাস্থ্যবিধি না মেনে যত্রতত্র ঘুরে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে কিনা সেই তথ্য জানা নেই কারও। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য প্রচারের দায়িত্বে থাকা এমআইএস শাখার সহকারী পরিচালক ডা. কামরুল কিবরিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রোগী নিজে সচেতন না হলে বিশাল জনগোষ্ঠীর এই দেশে সবার তথ্য সংগ্রহ করা দুরূহ। অনেকে নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ আসার পর  কোনো যোগাযোগ করছেন না। আত্মগোপনে চলে যাচ্ছেন। পরীক্ষার সময় ভুল ঠিকানা দিচ্ছেন কেউ কেউ। ফোন করে পাওয়া যাচ্ছে না। এসব কারণে এই গ্যাপটা তৈরি হয়েছে। অন্তত সবাই মাস্ক পরলেও ৯০ ভাগ ঝুঁকি কমত। সেটাও পরছেন না। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি  আরও কঠোরভাবে বাস্তবায়ন দরকার। এদিকে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে দেশে ফের করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। গতকালও নতুন করে দুই হাজার ২৩০ জনের দেহে করোনা সংক্রমণের তথ্য জানানো হয়। শনাক্তের হার ছিল ১৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ। অথচ, দুই মাস ধরে সংক্রমণ কমতে কমতে গত ২৪ অক্টোবর ১০ শতাংশের নিচে নেমেছিল শনাক্তের হার। বর্তমানে দেশে শনাক্ত মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার লাখ ৫১ হাজার ৯৯০ জনে। গত একদিনে আরও ৩২ জনের মৃত্যু হওয়ায় মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ছয় হাজার ৪৪৮ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন দুই হাজার ২৬৬ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হলেন তিন লাখ ৬৬ হাজার ৮৭৭ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮১ দশমিক ১৭ শতাংশ ও মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৩২ জনের মধ্যে ২৫ জন ছিলেন পুরুষ ও সাতজন নারী। ৩১ জনের হাসপাতালে ও একজনের বাড়িতে মৃত্যু হয়েছে। বয়স বিবেচনায় মৃতদের মধ্যে ১৯ জন ছিলেন ষাটোর্ধ্ব, পাঁচজন পঞ্চাশোর্ধ্ব, সাতজন চল্লিশোর্ধ্ব ও একজনের বয়স ছিল ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। এর মধ্যে ২৪ জন ঢাকা, চারজন চট্টগ্রাম, তিনজন রাজশাহী ও একজন ছিলেন রংপুর বিভাগের বাসিন্দা।

এদিকে গতকালও দেশের কভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোর ১১ হাজার ৪২৮টি সাধারণ শয্যার মধ্যে আট হাজার ৫২১টি শয্যা খালি ছিল। এ ছাড়া ৫৫৫টি আইসিইউর মধ্যে খালি ছিল ২৫২টি।

বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় ও ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

সর্বশেষ খবর