বুধবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

গৌরনদীতে মরে গেছে ৩০ খাল-নদী

বিরূপ প্রভাব প্রকৃতি-জীববৈচিত্র্যে, কমেছে ৭০০০ একর কৃষিজমি

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

গৌরনদীতে মরে গেছে ৩০ খাল-নদী

বরিশালের গৌরনদীতে অবৈধ দখল-দূষণে মরে গেছে ৩০টি খাল ও একটি নদী। এতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে কৃষি ও জীববৈচিত্র্যে। এছাড়া অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণে গত ৯ বছরে কমে গেছে সাত হাজার একর কৃষিজমি। গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান জানান, খালের অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনটি খাল পুনঃখননের জন্য প্রকল্প পাস হয়েছে। নদী-খাল দখলকারীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে তিনি জানান।

উপজেলা ভূমি অফিস সূত্র জানায়, উপজেলার ৩০টি ছোট-বড় খাল এবং পালরদী নদীতে দুই বছর আগে ২৭৩ অবৈধ দখলদারের তালিকা তৈরি করা হয়। ওই তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নদী কমিশনে পাঠানো হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়নি। এ ব্যাপারে নেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো নির্দেশনা। স্থানীয়রা জানান, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে প্রবাহিত ৩০টি খাল এবং পালরদী নদীর পানি আশপাশের কৃষকের সেচের চাহিদা পূরণ করে। কিন্তু খাল ও নদী দখল-দূষণ হয়ে যাওয়ায় পানি প্রবাহ কমে গেছে। কোনো কোনো খাল মরে গেছে। ফলে বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে পানি পাচ্ছে না কৃষক। ক্রমেই কৃষিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন তারা। উপজেলার উত্তর বিজয়পুর গ্রামের ইরি ব্লক ম্যানেজার মনির হোসেন সরদার জানান, গৌরনদীর গয়নাঘাটা খালের পানি দিয়ে আশপাশের ২২টি ইরি ব্লকে ধান চাষ হতো। গয়নাঘাটা খাল মরে যাওয়ার পর বড় খালে পাঁচ কিউসেকের সেচ পাম্প বসিয়ে মৃত খালে পানি দিয়ে ডবল লিফটিংয়ের মাধ্যমে ইরি ব্লকগুলো চালু রাখা হয়েছিল। কিন্তু এতে খরচ বেশি পড়ায় কৃষকরা ইরি চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। গৌরনদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মামুনুর রহমান জানান, কৃষির মূল হচ্ছে পানি। খালগুলোর পানির প্রবাহ স্বাভাবিক থাকলে এলাকায় কৃষির ব্যাপক উন্নয়ন হবে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ২০১১ সালে গৌরনদী উপজেলায় আবাদি জমি ছিল ৩৪ হাজার ১১২ একর। ২০২০ সালে ২৭ হাজার ৩৪ একর জমিতে কৃষি হয়েছে। ৯ বছরের ব্যবধানে সাত হাজার ৭৮ একর জমিতে কৃষি কমেছে। স্থানীয়রা জানান, গৌরনদীর গয়নাঘাটা খাল, কসবা খাল, সাউধের খাল, বার্থী খাল দখলের মহোৎসব চলছে। একইভাবে উপজেলার অধিকাংশ খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। একই চিত্র পালরদী নদীর সংযোগ খাল গৌরনদী বন্দর থেকে উপজেলা পরিষদ হয়ে বিল্বগ্রাম হাট পর্যন্ত খালে পাকা, আধাপাকা ২০টি অবৈধ স্থাপনা তৈরি করেছে দখলদাররা। চাঁদশী, মাহিলাড়া, আশোকাঠি, বাটাজোর, শরিকল, খাঞ্জাপুরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার খালের তীর দখল হয়ে গেছে অনেক আগেই। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা দক্ষিণের অন্যতম বৃহৎ বন্দর টরকীতে। পালরদী নদীর মোহনা ও ছোট-বড় ৬টি খালের সংযোগ ছিল টরকী বন্দরের সঙ্গে। অবৈধভাবে দখলের কারণে খালগুলো প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

সর্বশেষ খবর