রবিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বান্দরবানে আবার জমবে পর্যটন

মানিক মুনতাসির, বান্দরবান থেকে

বান্দরবানে আবার জমবে পর্যটন

কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে মেঘ পাহাড়ের চূড়ায় উঁকি দিচ্ছে সূর্যিমামা। চায়ের কাপ হাতে সবুজ ঘাসের শিশির জড়ানো পায়ে আপনি দাঁড়িয়ে তা দেখছেন। সঙ্গে পাখি আর নানা বন্যপ্রাণীর ডাকের মৃদু শব্দ আপনার কানে এসে লাগছে। পাহাড়ি কোনো তরুণী গহিন জঙ্গলে ছুটছে ডাব, পেঁপে কিংবা কোনো ফলের খোঁজে। সুঠাম দেহের আরেক পাহাড়ি জুমচাষি কাস্তে হাতে শিশির মাড়িয়ে পাহাড়ে উঠছে। আর আপনি হালকা শীতের আমেজে গায়ে পাতলা চাঁদর জড়িয়ে তা অবলোকন করছেন। পুব আকাশ ক্ষণে ক্ষণে তার রং বদলাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে বাড়ছে রোদের দীপ্তি। আপনিও তখন চাদর ছাড়িয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন। এটাই এখানকার নিত্য দিনের দৃশ্য। এমন মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পার্বত্য অঞ্চলে প্রতিদিন হাজারো পর্যটক আসছেন করোনাকে পাশ কাটিয়ে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিরামহীন পথ চলছেন পর্যটকরা। গহিন অরণ্যেও প্রচার পাচ্ছে, ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ কর্মসূচি। ফলে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়েই ছুটছে দেশি-বিদেশি পর্যটকের দল। দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশ আর পাহাড়ের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে বান্দরবানের নীলগিরি এলাকার চন্দ্রপাহাড়ে ২০ একর জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা হচ্ছে পাঁচতারকা হোটেল। যেখানে একই সঙ্গে ২০০-২৫০ জন অতিথি থাকতে পারবেন। এতে কর্মসংস্থান হবে অন্তত অর্ধ সহস্রাধিক মানুষের। ইট পাথরের নগরী ছেড়ে আধুনিক সুযোগ সুবিধা ভোগ করা যাবে মেঘপাহাড়ের আলিঙ্গনের দৃশ্যে। থাকবে নানা আধুনিক সুযোগ সুবিধাও। নীলগিরির মূল পয়েন্ট থেকে চন্দ্রপাহাড়ে নির্মিতব্য ম্যারিয়ট চেইন হোটেল পর্যন্ত করা হবে প্রায় দুই কিলোমিটার ক্যাবল কার। উভয়স্থলে অবস্থানকারী পর্যটকরা খুব স্বল্প সময়ে রোমাঞ্চকর অনুভূতিতে যাতায়াত করতে পারবেন নীলগিরির মূল পয়েন্ট থেকে চন্দ্রপাহাড়ে।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় আড়াই হাজার ফুট উঁচু এ পাহাড়ের চূড়া থেকে দেখা যায় সমুদ্রতীর। এর একদিকে কক্সবাজারের চকরিয়া, আরেকদিকে বলিপাড়া থানচি, অন্যপাশে বান্দরবান শহর। এই পাহাড় থেকে পুরো বান্দরবানের প্রাকৃতিক দৃশ্য এতটা মনোরম আর দৃষ্টিনন্দন যে, পার্বত্য অঞ্চলের অন্য কোনো পয়েন্ট থেকে এত সুন্দর ভিউ চোখে পড়বে না। এখান থেকে অন্য পর্যটন স্পটগুলোর  যোগাযোগ ব্যবস্থাও বেশ সহজ। নির্মাণাধীন এ হোটেলের ছাদ থেকে সমুদ্রগামী জাহাজও চোখে পড়বে।

সরেজমিন দেখা গেছে, যেখানে এই পাঁচতারকা হোটেল নির্মাণের কাজ চলছে সেখানে আশপাশের দুই/চার কিলোমিটারের মধ্যে কোনো মানব বসতি নেই, আগেও ছিল না। চন্দ্রপাহাড়ের প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে নীলগিরির মূল পয়েন্ট। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কালিংগা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ব্লকের সদস্য অর্জুন ম্রো জানান, চন্দ্রপাহাড়ে কখনই কোনো জনবসতি ছিল না। তবে এই পাহাড়ে তারা আদিকাল থেকে জুমচাষ করে আসছিলেন। হোটেল নির্মাণ করা হলে জুমচাষ বন্ধ হয়ে যাবে বলে তার আশঙ্কা। তখন তাদের জীবিকা নির্বাহে অন্য কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, এখানে হোটেল নির্মাণ হলে লাভ-ক্ষতি দুটোই হবে। যেমন জুমচাষ বন্ধ হয়ে যাবে। তেমন আবার জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। উৎপাদনকারীরা ভালো দাম পাবেন। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, এখন এক মণ কাঁচা পেঁপে বিক্রি হয় ৫০০ টাকায়। হোটেল হলে হয়তো একটা পাকা পেঁপেই  বিক্রি হবে ১০০ টাকায়। বলিপাড়া বাজারের বাসিন্দা দোকানদার পুচিং মারমা বলেন, আমরা শুনেছি এখানে হোটেল হবে। তাতে ক্ষতি তো কিছুটা হবেই। তবে আমাদের পড়ালেখা জানা ছেলে-মেয়েরা যেন সেখানে চাকরি পায়। ৫১ বছর বয়সী পুচিং মারমা একসময় শান্তি বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। তিনি বলেন, এখন পাহাড়ে অনেক শান্তি। তবে অনেকেই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে যা আমাদের জন্য ক্ষতিকর। তিনি আরও বলেন, চন্দ্রপাহাড়ে কখনো কোনো বসতি ছিল না। তবে সেখানে হোটেল নির্মাণ হলে জুমচাষ বন্ধ হয়ে যাবে। এদিকে পার্বত্য অঞ্চলের পর্যটন শিল্পের বিকাশে গড়ে তোলা হচ্ছে উন্নত যোগাযোগ অবকাঠামো। এর অংশ হিসেবে থানচির প্রত্যন্ত অঞ্চলকেও যুক্ত করবে তিন জেলার মূল সড়কের সঙ্গে। এ ছাড়াও তিন  জেলার সংযোগ সড়কগুলো প্রশস্ত করা হচ্ছে। এর বাইরে নতুন নতুন অনেক সড়ক ও হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট তৈরি হচ্ছে। বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি শহরের আনাচে-কানাচেও গড়ে উঠছে বিভিন্ন রকমের মোটেল ও রেস্টুরেন্ট।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর