শিরোনাম
শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

রাজধানীতে দোতলা তিনতলা জুড়ে গরু ছাগলের খামার

শফিউল আলম দোলন

রাজধানীতে দোতলা তিনতলা জুড়ে গরু ছাগলের খামার

রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে দোতলা গরুর ফার্ম। তাও আবার বৃহদাকৃতির। তিন তলায় ছাগলের খামার। তার পাশে ছাদবাগান। পাঁচ তলা পর্যন্ত বিস্তারের পরিকল্পনা ফার্মের মালিক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেইনের। হয়েছে ২০০ লোকের কর্মসংস্থান। খামার মালিক আনোয়ার হোসেইন বলেন, ‘২৯ বছর আগে স্বল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করেছিলাম। তখন তো খোলা জায়গা ছিল, বড় মাঠ ছিল। গরু চড়াতে সমস্যা ছিল না। এখন জায়গা-জমির সমস্যা। তাই ঘরের ভিতরে রেখেই গরু-ছাগল পালন করতে হয়। সে জন্য এ বহুতল ভবনেই গরুর ফার্ম বিস্তারের পরিকল্পনা নিয়েছি। ঢাকার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জেও আরেকটি গরুর খামার রয়েছে। তবে সেখানে জমির পরিমাণ বেশি। বহুতল ভবনে ফার্ম করার প্রয়োজন পড়েনি।’ চোখের সামনে উৎপাদিত এ খামারের দুধ থেকে মিষ্টি, রসমালাই, মাঠা, দই, ঘি, পনিরসহ দুগ্ধজাত সব পণ্য তৈরি ও বিক্রির পাশাপাশি সরিষা, তিসি, কালিজিরার তেল তৈরি করে ফার্মের নিজস্ব শোরুমে বসেই বাজারজাত করা হয়। উৎপাদিত পণ্যে রয়েছে ১০০% খাঁটির নিশ্চয়তা। ঢাকা মহানগরীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে অবস্থিত এ ফার্মটিতে দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন, বিক্রি ছাড়াও স্বল্পমূল্যে বকনা গরু, মহিষ, ছাগল বিক্রি করা হয়। ‘জাকের ডেইরি ফার্ম’ নামের এ প্রতিষ্ঠানটিতে বিনামূল্যে খামারিদের পরার্মশও দেন এর মালিক আনোয়ার হোসেইন। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘আমি চাই আমার এ ফার্মের গরুর দুধ আর দুগ্ধজাত পণ্যের মাধ্যমে রাজধানীবাসীর পুষ্টির অভাব পূরণের পাশাপাশি সারা দেশের যুবসমাজ অনুপ্রাণিত হোক। তারাও বিনিয়োগের মাধ্যমে মানুষের পুষ্টি পূরণের পাশাপাশি আর্থিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাক। সরকারি চাকরির দিকে তাকিয়ে না থেকে স্বউদ্যোগে “নিজেদের অ্যাপয়েন্টমেন্টে নিজেরাই সই করুক” তারা। এ জন্য শিক্ষিত যুবক যারা আগ্রহ নিয়ে আসেন তাদের সবাইকে আমি পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করি।’ আনোয়ার হোসেইন বলেন, ‘মাত্র চারটি গরু নিয়ে ছোট্ট আকারে শুরু করেছিলাম। আর এখন এখানে ২ বিঘার বেশি জমির ওপর ফার্মটির বিস্তার ঘটেছে। তাও দোতলা পর্যন্ত করতে পেরেছি। তিন তলায় রয়েছে ছাগলের ফার্ম এবং তারই পাশে ১ হাজার ৬০০ স্কয়ার ফুট জায়গার মধ্যে করা হচ্ছে ছাদবাগান। নিচতলা ও দোতলা মিলে এ ফার্মে মোট গরু রয়েছে ৫০০। ছাগল ৭০০-এর মতো। পাশাপাশি মহিষ রয়েছে দুই ডজনের মতো। প্রতিদিন গরুর দুধ উৎপাদিত হয় প্রায় দেড় টন। ছাগলের দুধ দেড় মণের মতো। ছাগলের দুধ বিক্রি হয় ৫০০ টাকা লিটার। দিনের উৎপাদিত পণ্য বিশেষ করে দুধটা দিনেই বিক্রি হয়ে যায়। মানুষ ফার্মে এসেই কিনে নেয়। তিন ছেলের বাবা আনোয়ার হোসেইন।

 বড় ছেলে তার সঙ্গে গরুর ফার্মেই আছেন। মোহাম্মদপুরের ফার্ম ছাড়াও ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জে প্রায় ২০ একর জমির ওপর আরও একটি গরুর ফার্ম রয়েছে তার। সেখানে ৭০০-এর বেশি গরু ও মহিষ আছে। তবে সেখানে গাভীর চেয়ে ষাঁড়ের সংখ্যা বেশি। মেজ ছেলেকে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছেন রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়। ঢাকা মহানগরীতে এখন তার অধীনে পাঁচটি প্রতিষ্ঠিত রেস্তোরাঁ রয়েছে। ছোট ছেলে বিবিএ পড়ছেন রাজধানীর একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে। খামারি আনোয়ার হোসেইন দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘যতটুকু দেখছেন সেটা ন্যায়নিষ্ঠভাবে পরিশ্রমের মাধ্যমেই এসেছি। কোনো সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা আমরা পাইনি। করোনা মহামারীতে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির পরও কেউ একবার তাকিয়ে পর্যন্ত দেখেনি ২০০ লোকের কর্মসংস্থানের এ প্রতিষ্ঠানটির দিকে।’ উপরন্তু অভিযানের নামে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা হয়রানির শিকারও হতে হচ্ছে তার এ ফার্মটিকে। আসলে এ দেশে সততা, দক্ষতা ও প্রকৃত উদ্যোক্তার কোনো মূল্যায়ন নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বল্প সুদের একটি কৃষিঋণ প্রকল্প রয়েছে। সেখান থেকে সহায়তা প্রত্যাশা করেন তিনি। মৎস্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘করোনা মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত সব পশু ও মৎস্য খামারিকে আমরা সহযোগিতা করব। এ ব্যাপারে প্রতি জেলাতেই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কারণ তাদের উৎপাদিত মাংস, দুধ, মাছ, ডিমসহ সংশ্লিষ্ট পণ্যের মাধ্যমে দেশের মানুষের পুষ্টি পূরণ হচ্ছে। তাদের শুধু বাঁচিয়ে রাখাই নয়, দিন দিন আরও এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রেও সরকার সহযোগিতা করতে বদ্ধপরিকর।’

সর্বশেষ খবর