মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রশ্নফাঁস সিন্ডিকেটের ১১ কোটি ২৪ লাখ টাকার স্থাবর সম্পদ

ব্যাংক হিসাবে ৪৯ কোটি টাকা লেনদেন

মাহবুব মমতাজী

মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টালে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস সিন্ডিকেটের মোট ১১ কোটি ২৪ লাখ ৪১ হাজার ৮০০ টাকার স্থাবর সম্পদের খোঁজ পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এসবের বেশির ভাগই মাস্টারমাইন্ড স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর ছাপাখানার মেশিনম্যান আবদুস সালাম খান, তার খালাতো ভাই জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া মুন্নু এবং মুন্নুর স্ত্রী শারমীন আরা জেসমীনের।

সম্পদের বেশির ভাগই তারা কেনা শুরু করেন ২০০৬ সালের পর থেকে। কিছু কিছু জমি তারা তাদের আত্মীয়ের নামে কিনে পরে নিজেদের নামে দানপত্র দেখিয়েছেন। এদিকে পৃথক অভিযানে গ্রেফতার হওয়া ১১ জনের ব্যাংক হিসাব যাচাই করে ৪৯ কোটি ৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকার লেনদের তথ্য মিলেছে।

প্রশ্নফাঁস সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য জসীমের ভায়রা সামিউল জাফর সিটুকে গত ৬ ডিসেম্বর দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে সিআইডি। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ফাঁস করা প্রশ্নপত্র বিক্রি, ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী সংগ্রহ ও তার তালিকা করার বিষয়ে নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছেন। তবে সিন্ডিকেটের অনেকে এখনো গ্রেফতার হননি। এদের কেউ কেউ প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, মাস্টারমাইন্ড জসীম ও সালাম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। এরই মধ্যে আসামিরা জামিনে ছাড়া পেতে মরিয়া। আড়ালে চলে যাচ্ছেন জালিয়াতি করা নেপথ্যের কারিগররা। এ বিষয়ে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আশরাফুল আলম এ প্রতিবেদককে জানান, চক্রের অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। এরই মধ্যে ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিরা গা-ঢাকা দিয়েছেন।

সিআইডি সূত্র জানিয়েছে, জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া মুন্নুর নামে টাঙ্গাইলের সিংগাইর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে ৩০টি দলিল পাওয়া গেছে। তার এসব জমির মূল্য ২ কোটি ৮৬ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। তার স্ত্রী শারমীন আরা জেসমীনের নামে ছয়টি দলিল পাওয়া গেছে। তার এসব জমির মূল্য ৫ কোটি ৩১ লাখ ৫ হাজার টাকা। জসীমের মা জহুরা ভূঁইয়ার নামে সাতটি জমির দলিল পাওয়া গেছে। এসব জমির মূল্য ৪১ লাখ ৭৪ হাজার ৮০০ টাকা। অপর মাস্টারমাইন্ড আবদুস সালাম খানের নয়টি সিংগাইরে এবং মানিকগঞ্জ সদরে পাওয়া গেছে একটি দলিল। তার এসব জমির মূল্য ২ কোটি ৬১ লাখ ১৮ হাজার টাকা। সালামের স্ত্রী নাসরিন আক্তারের নামে সিংগাইরে পাওয়া গেছে একটি দলিল। তার এ জমির মূল্য ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা। সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য জসীমের ভগ্নিপতি আলমগীর হোসেনের নামে দুটি দলিল পাওয়া গেছে। তার সম্পদের মূল্য ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। জসীমের ভাতিজা এম এইচ পারভেজের ৫ লাখ ২৬ হাজার টাকা মূল্যের একটি জমির দলিল পাওয়া গেছে। মানি লন্ডারিং মামলার জন্য প্রাথমিক অনুসন্ধানে অবৈধভাবে গড়ে তোলা এসব সম্পদের তথ্য পেয়েছেন সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৫ সালে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ১৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার। কিন্তু দুই দিন আগেই ১৫ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বিকালে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে আরও একবার র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন মাস্টারমাইন্ড জসিমউদ্দিন ভূঁইয়া মুন্নু। তবে গ্রেফতার হওয়ার আগে সকাল থেকেই সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা চক্রের সদস্যদের হাতে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র একে একে তুলে দিয়েছিলেন বলে দ্বিতীয়বার গ্রেফতারের পর সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদের জানিয়েছিলেন তিনি। ওই ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই তিন দিন পর পরীক্ষা নিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। সেই সময় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠলেও তা বরাবরই অস্বীকার করে আসছিল কর্তৃপক্ষ। জসীম ও তার খালাতো ভাই সালাম ২০০৬ সাল থেকে বারবার প্রশ্ন ফাঁস করেছেন। সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন ফাঁস তদন্তের সূত্র ধরে মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁসের তথ্য পায় সংস্থাটি। গত ১৯ ও ২০ জুলাই রাজধানীর মিরপুর থেকে চক্রের হোতা জসীম, সহযোগী সানোয়ার হোসেন, মোহাইমিনুল ওরফে বাঁধন, জসীমের ছোট বোনের স্বামী জাকির হোসেন দিপু ও ভাতিজা পারভেজকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর জসীমের বোন শাহজাহী আক্তার মিরা, ভগ্নিপতি আলমগীর হোসেন, সহযোগী মুবিন ও ইমনকে গ্রেফতার করা হয়। গত ৫ অক্টোবর রাজধানীর বনশ্রী থেকে গ্রেফতার হন অপর মাস্টারমাইন্ড আবদুস সালাম খান। গত ২৯ নভেম্বর আদালতে জামিন নিতে গেলে আটক হন জসীমের ভায়রা সামিউল জাফর সিটু। এই ১১ জনের ব্যাংক হিসাব যাচাই করে ৪৯ কোটি ৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকার লেনদের তথ্য পেয়েছেন সিআইডির তদন্তকারীরা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর