বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

সংকট কাটিয়ে সুদিনে ফিরছে শেয়ারবাজার

নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকান্ডে আস্থা বেড়েছে বিনিয়োগকারীদের

আলী রিয়াজ

অনেক প্রতীক্ষার পর সুদিনে ফিরছে দেশের শেয়ারবাজার। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শুরুতে শেয়ারবাজার ভয়াবহ সংকটে পড়ে। বাজারে ভয়াবহ ধস শুরু হলে সর্বনিম্ন সীমা বেঁধে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর মাধ্যমে বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পান বিনিয়োগকারীরা। এতেও বাজার ধরে রাখতে না পেরে বন্ধ রাখে লেনদেন। এ অবস্থায় প্রায় দুই মাস বন্ধ থাকে লেনদেন। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে সরকার এই বন্ধের মধ্যেই বিএসইসি পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু করে। এরপর ঘুরে দাঁড়াতে থাকে শেয়ারবাজার। এদিকে আইপিও ব্যবসায়ীরা যাতে ন্যূনতম বিনিয়োগের মাধ্যমে মোটা দাগের অর্থ বাজার থেকে তুলে নিতে না পারে সেজন্য নতুন উদ্যোগ নিয়েছে কমিশন। এতে আইপিও ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা বন্ধ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া বাজার চাঙা করতে একাধিক বড় কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদন দেয়। যাতে কয়েক মাসের ব্যবধানে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের পদচারণা বেড়েছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজার শক্তিশালী রাখতে হলে গুজবনির্ভর লেনদেন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা সিরিয়াল ট্রেড করেন তাদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত। নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্তি ছাড়াও বন্ড মার্কেট কার্যকর করার কথা বলেছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুর দিকে বাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও করোনাভাইরাসের লকডাউনে বন্ধ থাকে শেয়ারবাজার। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক ৪ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে আসে। যা ছিল ২০১৪ সালে নতুন সূচক চালু করার পর সর্বনিম্ন অবস্থান। চলতি বছরের জুনে ডিএসইতে সূচকের অবস্থান ছিল ৩ হাজার ৯০০ পয়েন্টে। গতকাল পর্যন্ত সেই সূচকের অবস্থান হয়েছে ৫ হাজার ৯৮ পয়েন্ট। জুনে লেনদেন হতো ১৫০ কোটি টাকার নিচে। সর্বশেষ ডিএসইর গড় লেনদেন হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। জুলাই মাসে নতুন কমিশন আসার পর দেশের অন্যতম টেলিকম কোম্পানি রবি শেয়ারবাজারে আনার উদ্যোগ কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। শিগগিরই লেনদেন শুরু হবে রবির শেয়ার। এ ছাড়া ১০ থেকে ১২টি কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। ফলে বাজারের সব সূচক চাঙা। নতুন করে ফিরতে শুরু করেছে বিনিয়োগকারীরা। গত দুই মাসের ব্যবধানে শেয়ারবাজারে বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বেড়েছে দেড় লাখের বেশি। নভেম্বরে শুরুতে বিও অ্যাকাউন্ট ছিল ২৩ লাখ ৫৯ হাজার। সর্বশেষ তা দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ ৩৭ হাজারে। ছয় মাসের ব্যবধানে বাজারের মূলধন বেড়েছে ১০ লাখ কোটি টাকার বেশি। জুন মাসে বাজার মূলধন ছিল ৩১ লাখ কোটি টাকা। সর্বশেষ সেটা হয়েছে ৪১ লাখ কোটি টাকা। এভাবে সব শেয়ার সূচক বেড়েছে গত কয়েক মাসের ব্যবধানে। জানতে চাইলে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইত-উল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শেয়ারবাজারের বর্তমান সূচক  দেখলেই বোঝা যাবে কী পরিবর্তন ঘটেছে। গত বছর যেখানে সূচক ৪ হাজার পয়েন্টের নিচে ছিল, তা এখন ৫ হাজার। আমরা বাজার শক্তিশালী করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছি ও প্রবৃদ্ধি ঘটিয়েছি। নতুন বড় কোম্পানি নিয়ে আসা ছাড়াও বন্ড মার্কেট শক্তিশালী করতে কাজ শুরু হয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে দেশের বন্ড মার্কেট বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষে চলে আসবে।

বাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাজারে এখনো সিরিয়াল ট্রেড চলে। বাজার পরিস্থিতি অনুকূলে রয়েছে। তবে এই সিরিয়াল ট্রেড বন্ধ করতে হবে। যারা এসব অনিয়মতান্ত্রিক ট্রেডে জড়িত তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। বাজারের ভিত ধরে রাখতে হলে মানসম্পন্ন কোম্পানি নিয়ে আসতে হবে। সরকার টাকা চায়। টাকা উত্তোলনের জন্য সরকারি কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত করা উচিত। বৃহৎ ও বহুজাতিক কোম্পানিকে সুবিধা দিয়ে হলেও বাজারে নিয়ে আসা উচিত। ডিএইসর সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখন সব পক্ষের জন্য বাজার পরিস্থিতি ভালো। বাজার অনেক শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। ব্রোকার মালিকরা চান বাজারে লেনদেনের পরিমাণ বাড়াতে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা চান শেয়ার দর ঊর্ধ্বমুখী থাকুক, সূচক বাড়ুক। গড় ভিত্তিতে এখন সব সূচকই ঊর্ধ্বমুখী। আমাদের এই পরিস্থিতি ধরে রাখতে হবে।

সর্বশেষ খবর