সোমবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

কোন বিভাগ কত টিকা পাবে

ঢাকা বিভাগ পাবে সর্বোচ্চ টিকা, সংক্রমণ বিবেচনায় বণ্টনের খসড়া প্রস্তুত

জয়শ্রী ভাদুড়ী

করোনাভাইরাসের টিকা ব্যবস্থাপনা ঘিরে চলছে নানা ধরনের প্রস্তুতিমূলক কাজ। সপ্তাহ খানেক পরই দেশে আসবে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে পাঠানো অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা। এর জন্য প্রতিদিন সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক, সভা, প্রশিক্ষণ চলছে। আট বিভাগের কোন জেলায় কী পরিমাণ টিকা সরবরাহ করা হবে, সে বিষয়ে একটি খসড়া তৈরি হয়েছে; তবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, কোন এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি, তা বিবেচনায় নিয়ে টিকা বণ্টনের ছক তৈরি করা হয়েছে। শুরুতে যেসব জেলায় বেশি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে, সে রকম ৮-১০টি জেলায় টিকা যাবে। সারা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ টিকা পাবে ঢাকা বিভাগ।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলম বলেন, ‘এখনো আমরা কোন কোন জেলায় আগে টিকা যাবে, তা চূড়ান্ত করিনি। তবে আমাদের ভাবনা রয়েছে বড় ১০টি শহরবেষ্টিত জেলায় আমরা টিকা পাঠাব। এ ক্ষেত্রে যেখানে বেশি সংক্রমণ রয়েছে, সেদিকটিও বিবেচনায় নেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সবার আগে টিকা দেওয়া হবে টিকাদানকারী পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের। এ ক্ষেত্রে ঢাকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত সরকারি হাসপাতালগুলো প্রাধান্য পাবে। তার সঙ্গে একই সময়ে টিকা দেওয়া হবে মাঠপর্যায়ের একদল স্বাস্থ্যকর্মীকে। বলা যায় পাইলট আকারে তাদের টিকা দেওয়া হবে। তারাই পরে সাধারণ মানুষকে টিকা দেবেন।’ স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানায়, ঢাকায় শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংক্রমণ ঘটায় টিকা বণ্টনের ক্ষেত্রেও সবার আগে প্রাধান্য পাবে ঢাকা। খসড়া তালিকার তথ্য অনুসারে প্রথমে আসা ৫০ লাখ ডোজ টিকা থেকে ঢাকা জেলায় থাকবে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ ডোজ। আর বিভাগওয়ারি হিসাবে মোট ৩ কোটি ডোজ টিকার মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৫০ লাখ, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩০ লাখ, রাজশাহী বিভাগে ২০ লাখ, রংপুর বিভাগে সাড়ে ১৬ লাখ, খুলনা বিভাগে ১৬ লাখ, সিলেট বিভাগে সাড়ে ১০ লাখ, বরিশাল বিভাগে সাড়ে ৮ ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৫ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। অর্থাৎ দেড় কোটি মানুষের প্রতিজনকে দুই ডোজ করে মোট ৩ কোটি টিকা দেওয়া হবে। যা ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত টিকা। এ টিকা বেক্সিমকোর মাধ্যমে দেশে আনছে সরকার।

খসড়া তালিকা অনুযায়ী, জেলা হিসাবে দিনাজপুরে ৩ লাখ, কুড়িগ্রামে ২ লাখ, লালমনিরহাটে ১ লাখ, গাইবান্ধায় আড়াই লাখ, নীলফামারীতে ২ লাখ, পঞ্চগড়ে ১ লাখ, ঠাকুরগাঁওয়ে দেড় লাখ, হবিগঞ্জে ২ লাখ, মৌলভীবাজারে ২ লাখ, ফরিদপুরে ২ লাখ, গাজীপুরে সাড়ে ৩ লাখ, গোপালগঞ্জে সোয়া ১ লাখ, জামালপুরে আড়াই লাখ, কিশোরগঞ্জে ৩ লাখ, মাদারীপুরে সোয়া ১ লাখ, মানিকগঞ্জে দেড় লাখ, মুন্সীগঞ্জে দেড় লাখ, নারায়ণগঞ্জে ৩ লাখ, নরসিংদীতে আড়াই লাখ, নেত্রকোনায় আড়াই লাখ, রাজবাড়ীতে ১ লাখ, শরীয়তপুরে সোয়া ১ লাখ, বান্দরবানে ৫০ হাজার, ভোলায় পৌনে ২ লাখ, ঝালকাঠিতে ৭০ হাজার, পটুয়াখালীতে দেড় লাখ, পিরোজপুরে সোয়া ১ লাখ, বরগুনায় ১ লাখ, বরিশালে আড়াই লাখ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩ লাখ, চাঁদপুরে আড়াই লাখ, চট্টগ্রামে ৩ লাখ, কুমিল্লায় সাড়ে ৫ লাখ, কক্সবাজারে আড়াই লাখ, সিরাজগঞ্জে সোয়া ৩ লাখ, রংপুরে ৩ লাখ, খাগড়াছড়িতে ৬০ হাজার, লক্ষ্মীপুরে পৌনে ২ লাখ, নোয়াখালীতে সোয়া ৩ লাখ, রাঙামাটিতে ৬০ হাজার মানুষ টিকা পাবে। এ ছাড়া বাগেরহাটে দেড় লাখ, চুয়াডাঙ্গায় ১ লাখ, যশোরে পৌনে ২ লাখ, পাবনায় আড়াই লাখ, রাজশাহীতে পৌনে ৩ লাখ, সুনামগঞ্জে আড়াই লাখ, সিলেটে সাড়ে ৩ লাখ, ঝিনাইদহে পৌনে ২ লাখ, খুলনায় আড়াই লাখ, কুষ্টিয়ায় ২ লাখ, মাগুরায় ১ লাখ, মেহেরপুরে ৭০ হাজার, নড়াইলে ৮০ হাজার, সাতক্ষীরায় ২ লাখ, বগুড়ায় সাড়ে ৩ লাখ, জয়পুরহাটে ১ লাখ, নওগাঁয় পৌনে ৩ লাখ, নাটোরে পৌনে ২ লাখ মানুষসহ ৬৪ জেলায় টিকা দেওয়ার খসড়া নিয়ে কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে করোনাভাইরাসের টিকা প্রয়োগ ও বিতরণ সংক্রান্ত এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকের পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর কঠোরভাবে বিষয়টি মনিটর করবে। টিকাসংক্রান্ত সব তথ্য যেন মানুষ দ্রুত জানতে পারে সে জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের মাধ্যমে নিয়মিত ভ্যাকসিন বুলেটিন প্রচার করা হবে। টিকা দেওয়ার জন্য ৪২ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সরকারিভাবে টিকা দেওয়া শুরুর পর দেশের বড় বড় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও টিকা দিতে পারবে সরকারের নীতিমালা অনুসরণ করে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর