মঙ্গলবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

শ্রীমঙ্গলে বিষাক্ত লালগলা ঢোঁড়া উদ্ধার

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল

শ্রীমঙ্গলে বিষাক্ত লালগলা ঢোঁড়া উদ্ধার

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে একটি বিষাক্ত লাল-গলা ঢোঁড়া সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শহরের নতুনবাজার সড়ক থেকে সাপটি উদ্ধার করে বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনে এনে রাখা হয়। সাপটি লম্বায় ৩ ফুটের মতো। সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক সজল দেব জানান, সকালে কয়েকজন লোক বাসায় এসে খবর দেন বাজারে একটি অচেনা সাপ দেখা গেছে। পরে তিনি সাপটি ধরে আনেন। উদ্ধার হওয়া সাপটি লাউয়াছড়া বনাঞ্চলে ছেড়ে দেওয়া হবে। তিনি অনুমান করছেন হয়তো বনাঞ্চল থেকে বাজারে বিক্রির জন্য আসা কলা বোঝাই গাড়িতে সাপটি  এসেছে। সাপ বিশারদরা জানান, লাল-গলা ঢোঁড়া একটি বিষাক্ত সাপ। এরা কামড় দিলে মৃত্যু অবধারিত। এদের ইংরেজি নাম Red necked-keelback. আর বৈজ্ঞানিক নাম Rhabdophis subminiatus. এরা দেখতে ঢোঁড়া সাপের মতোই, শুধু মাথা থেকে গলা পর্যন্ত লাল। আর চোখের নিচে রয়েছে কালো কাজল। এ জন্য এই সাপটি দেখতে খুব সুন্দর দেখা যায়।

শুধুমাত্র এশিয়াতেই এদের বিচরণ। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব পাহাড়ি বনাঞ্চলের খাল-বিল বা পুকুরের আশপাশে এদের দেখতে পাওয়া যায়। এক সময়ে আমাদের দেশে এই সাপটি খুব বেশি দেখা যেত। কিন্তু এখন আইইউসিএন তালিকায় এরা সংকটাপন্ন। এরা ৭০ থেকে ১৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এদের বিষগ্রন্থি নেই। কোনো বিষদাঁত নেই।

তাই এই সাপ বিষধর না কি নির্বিষ এ নিয়ে রয়েছে নানান বিতর্ক। এদের শরীরে বিষধর সাপের কোনো বৈশিষ্ট্য না থাকায় বিজ্ঞানীরা রয়েছেন দ্বিধাদ্বন্দ্বে। তবে এ সাপের মাড়িতে খাঁজকাটা দাঁত আছে। এই দাঁত দিয়েই তারা বিষ প্রয়োগ করে। বিষ অন্য সাপের মতো নিউরোটক্সিক, হায়মোটক্সিক কিংবা সাইটোটক্সিক না হওয়ার কারণে বিষের এন্টি ভেনমও বিরল। এদের বিষ কিডনিকে অকার্যকর করে দিয়ে প্রাণীর মৃত্যু ঘটায়।

এই সাপ যে পরিমাণ বিষ ছুড়তে পারে তা একটি কেউটে সাপের বিষের সমান। এরা যখন ফণা তুলে তখন অনেকটা রাজ-গোখরার মতো দেখায়। এদের ঘাড় হতে একধরনের বিষাক্ত তরল নিঃসৃত হয়, যা পতঙ্গ জাতীয় ছোট প্রাণী মেরে ফেলতে সক্ষম। মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর জন্যও এই তরল নিঃসৃত ক্ষতিকর। এরা খাল, বিল বা পুকুরের আশপাশে বসবাস করে। এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে কোলাব্যাঙ, টিকটিকি ও ইঁদুর। ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্স-এর প্রধান নির্বাহী ও সরীসৃপ গবেষক শাহরিয়ার সিজার রহমান বলেন, লাল-গলা ঢোঁড়া একটি বিষাক্ত সাপ। এদের এন্টিভেনম এখন বের হয়নি। সাধারণত সিলেট ও চট্টগ্রামের বনাঞ্চলে এদের দেখা যায়। উদ্ধার হওয়া সাপটি তাড়াহুড়া করে ছাড়া ঠিক হবে না। সব প্রাণীই একটি নিয়মের মধ্য ছাড়তে হয়। সে কোন পরিবেশে ছিল তা জানতে হবে। সাপটি যেখান থেকে এসেছে তার কাছাকাছি কোনো স্থানে ছাড়লে ভালো হয়। তা না হলে নতুন জায়গায় গিয়ে সে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে না। সে ওই জায়গা থেকে বের হয়ে আসতে চাইবে। আর তখনই হয়তো গাড়িচাপায় নয়তো মানুষের হাতে মারা পড়তে পারে।

সর্বশেষ খবর