শুক্রবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

কাজে আসছে না কোনো পরিকল্পনা

বাজেট বাস্তবায়নে করোনার ধাক্কা

মানিক মুনতাসির

কাজে আসছে না কোনো পরিকল্পনা

বছরজুড়ে করোনা মহামারীর কারণে প্রচ- ধাক্কা খেয়েছে সরকারের বাজেট বাস্তবায়ন। অর্থবছরের প্রথম মাসে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে ১৮ শতাংশেরও নিচে। সেই হিসাবে শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন করতে হলে অর্থবছরের বাকি সাত মাসে এডিপির প্রায় ৮২ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে হবে। জানা গেছে, গত জুলাই-নভেম্বর পর্যন্ত এডিপি থেকে ব্যয় হয়েছে ৩৮ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা, যা শতাংশের হিসাবে এডিপি বরাদ্দের মাত্র ১৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ খরচ করতে পেরেছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। অবশ্য গত অর্থবছরের একই সময়ে বাস্তবায়ন হয়েছিল ১৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। প্রকল্পের ব্যয় ও কাজ সঠিক সময়ে শেষ করতে সরকার নানামুখী তৎপরতা দেখালেও তা কাজে আসছে না। এমনকি করোনা মহামারীর মধ্যেও প্রকল্পের কাজে যেন ছেদ না ঘটে সে জন্য প্রকল্প এলাকার সংশ্লিষ্টদের করোনা সংক্রমণ এড়াতে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একইভাবে প্রকল্পের কাজে গতি আনতে বিরতিহীনভাবে কাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অর্থছাড় প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ব্যয়িত অর্থের হিসাব দাখিল প্রক্রিয়াও করা হয়েছে সহজ। এর পরও বাজেট বাস্তবায়নের কাক্সিক্ষত গতি আসছে না বলে মনে করেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা। জানা গেছে, করোনা মহামারীর মধ্যেই চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। এতে এডিপিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬১১ কোটি টাকা। গত পাঁচ মাসে সেখানে মাত্র ৩৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ।

এদিকে করোনা মহামারীর কারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়াও চলছে ঢিমেতালে। ফলে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের প্রথম পাঁচ মাসে ১০ হাজার ২২২ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। এ সময় রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯৬ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা, যেখানে টার্গেট ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা। তবে এনবিআরের চূড়ান্ত হিসাব অনুযায়ী ২২ ডিসেম্বর প্রকাশিত এনবিআরের হিসাববিবরণীমতে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে এনবিআর রাজস্ব আহরণ করেছে ৮৭ হাজার ৯২ কোটি ৭১ লাখ টাকা, যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১২ হাজার ৯৫৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ পাঁচ মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব ঘাটতি ২৫ হাজার ৮৬৭ কোটি ১২ লাখ টাকা। রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ, যেখানে গত অর্থবছর একই সময় প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ১৯ শতাংশ। ফলে সামগ্রিকভাবে সরকারের বাজেট বাস্তবায়ন প্রচ- ধাক্কা খেয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে বলতে হবে, করোনার একটা বড় ধাক্কা তো রয়েছেই। ফলে সরকারের আয়-ব্যয়ের ওপর একটা বড় চাপ সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে আয় কমে গেছে। অন্যদিকে কমে গেছে ব্যয়ের সক্ষতাও। তবে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রকল্পগুলোর কাজের গতি আনতে হবে। আবার রাজস্ব আয়ও বাড়াতে হবে বলে তিনি মনে করেন। সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সরকার উন্নয়নকাজে যা ব্যয় করেছে তা ১১ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়নে যে অর্থ সরকার ব্যয় করেছে, তা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ শতাংশ কম। এ অবস্থায় শতভাগ এডিপি বাস্তায়ন করতে হলে শেষ সাত মাসে প্রায় ৮২ শতাংশ বা ১ লাখ ৭৬ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে। এদিকে শতভাগ বাজেট বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর প্রতি পাঁচ দফা নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ বিভাগ। এর পাশাপাশি প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া যেন কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয় সে জন্য অর্থবছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো সময়জুড়েই নিবিড় তদারক করবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। এর আগে বাজেট বাস্তবায়নের গতি বাড়াতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রকল্পের অর্থছাড় প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর