মঙ্গলবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

টাকা দিলেই মিলছে পাসপোর্ট

রোহিঙ্গাদের ওয়ান স্টপ সার্ভিস

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

টাকা দিলেই মিলছে পাসপোর্ট

বহুতল ভবনের নিচ তলার কয়েকটি কক্ষে টেবিল-চেয়ার নিয়ে বসে আছেন কয়েকজন। তাদের কেউ পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ করছেন। কেউ তৈরি করা আবেদনে গেজেট অফিসার সেজে সই করছেন। রুমে ঢুকে যে কেউ পাসপোর্ট অফিস ভেবে ভুল করবেন। স্থানীয় লোকজনও পাঁচলাইশ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের প্যারালাল অফিস হিসেবে চেনে। যাতে বাংলাদেশিদের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরিরও সুবিধা দেওয়া হয়! প্যারালাল এ অফিস থেকে এক থেকে দেড় লাখ টাকায় পাসপোর্ট পেয়ে যাচ্ছেন রোহিঙ্গারা।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক আবু সায়েদ বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট ইস্যুতে আমাদের অবস্থান জিরো ট্রলারেন্স। এ চক্রের সঙ্গে পাসপোর্ট অফিসের কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ অনুসন্ধানে জানা যায়, পাঁচলাইশ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস-লাগোয়া জাতিসংঘ পার্কের পাশে একটি বিল্ডিংয়ে গড়ে উঠেছে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দেওয়ার ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’। এ অফিসে কোনো রোহিঙ্গাকে দিতে হয় না জাতীয়তা সনদ, জন্ম নিবন্ধন কিংবা পাসপোর্ট তৈরির অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। শুধু এক থেকে দেড় লাখ টাকা দিলেই কয়েকদিনের ব্যবধানে রোহিঙ্গারা পেয়ে যান পাসপোর্ট। এ সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছেন একরামুল হক জুয়েল নামে এক ব্যক্তি। যিনি পাসপোর্ট দালালি করতে গিয়ে একাধিকবার আটক হয়েছেন। তার সহযোগী হিসেবে রয়েছেন উত্তম, নাছির এবং জামাল ওরফে চন্দনাইশ জামাল নামে তিন ব্যক্তি। সিন্ডিকেট প্রধান জুয়েল তিন সহযোগীর মাধ্যমে বাংলাদেশি পাসপোর্ট তৈরি করতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের কন্ট্রাক্ট করেন। এরপর প্রতিটা পাসপোর্ট করাতে সর্বনিম্ন এক থেকে দেড় লাখ টাকায় পাসপোর্ট তৈরির চুক্তি করে। চুক্তির পর পাসপোর্ট আবেদনের সঙ্গে জমা দেওয়ার জন্য জাতীয়তা সনদ, জন্ম নিবন্ধনসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সবই সরবরাহ করে দালাল চক্রের সদস্যরা। শক্তিশালী এ সিন্ডিকেটের মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে রোহিঙ্গারা পেয়ে যাচ্ছেন পাসপোর্ট।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরি করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে আসল জন্ম নিবন্ধন, চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট, জাতীয় পরিচয়পত্র। এ ছাড়া ভুয়া মা-বাবা হিসেবে নিয়ে আসা হচ্ছে বাংলাদেশি নাগরিককে। ফলে অনেক সময় রোহিঙ্গা শনাক্ত কঠিন হয়ে পড়ে।

সর্বশেষ খবর