কূটনৈতিক বন্ডের আড়ালে অনিয়ম চলছেই। স্বচ্ছতা নেই বন্ডেড ওয়্যারহাউসসমূহের ব্যবস্থাপনায়। অথচ কূটনীতিকদের কর অব্যাহতির সনদ দিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু সেই সনদের তথ্য পাচ্ছে না কাস্টমস। এই অভিযোগ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পত্র দিয়েছে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। সংস্থাটি কূটনৈতিক বন্ড সুবিধার অপব্যবহার বন্ধে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিদেশি মিশনগুলোর সহায়তা চেয়েছে। তথ্য সংশ্লিষ্ট সূত্রের। বন্ডের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার মো. শওকাত হোসেন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শুল্কমুক্ত আমদানি সুবিধার অপব্যবহার ও কূটনৈতিক বন্ডেড ওয়্যারহাউসের আড়ালে অনিয়ম বন্ধে ব্যাপক অ্যাকশন নেওয়া হচ্ছে। সবক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স ভূমিকা রাখা হচ্ছে। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের স্বার্থে কূটনৈতিক কর অব্যাহতি সনদ অনলাইনে ও হার্ডকপি প্রেরণ নিশ্চিত করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিফ অব প্রটোকলকে গত ২৮ জানুয়ারি পত্র দিয়েছেন ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার মো. শওকাত হোসেন। পত্রে বলা হয়, ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক মন্ত্রিসভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত গণ্য করার প্রস্তাবসমূহ অনুমোদিত হয়। এর মধ্যে বিদেশি কূটনীতিকদের জন্য স্থাপিত বন্ডেড ওয়্যারহাউসের কার্যক্রম সংক্রান্ত তথ্যাবলি, বিভিন্ন দ্রব্যাদি ক্রয়, বিক্রয়ের পরিমাণ, আহরিত শুল্ক-করাদির একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিবেদন প্রণয়নক্রমে প্রতি বছর মে মাসে মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করার নির্দেশ প্রদান করা হয়। ওইপত্রে আরও বলা হয়- ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ও কূটনৈতিক বা ডিপ্লোমেটিক বন্ডেড ওয়্যারহাউসসমূহের ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণে কর অব্যাহতি সনদ বা ট্যাক্স এক্সামশন সার্টিফিকেট যাচাই করার কোনো বিকল্প নেই। ওই সিদ্ধান্ত মোতাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিফ অব প্রটোকলের দফতর থেকে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটে কর অব্যাহতির সনদ প্রেরণ শুরু করা হলেও, তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়নি। অথচ ডিপ্লোমেটিক বন্ডেড ওয়্যারহাউসসমূহ থেকে মদ ও মদজাতীয় পণ্য ‘কূটনীতিক ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ব্যক্তি’দের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইস্যু করা কর অব্যাহতি সনদ নির্ধারিত ওয়েবসাইটে যথাসময়ে আপলোড করার কথা রয়েছে। একই সঙ্গে ইস্যু করা কর অব্যাহতি সনদ তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটে একটি অনুলিপি প্রেরণ করার জন্য পত্রের মাধ্যমে অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো তথ্যাদি বন্ড কমিশনারেটে পাঠানো হয়নি। এমতাবস্থায় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কর অব্যাহতির সনদ তাৎক্ষণিকভাবে প্রেরণ নিশ্চিতকরণের জন্য পুনরায় অনুরোধ করেছে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। এদিকে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট সূত্র বলছে- কূটনৈতিক বন্ড সুবিধায় অনিয়ম থামছে না। বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধার পণ্যসামগ্রী কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ আছে। এ ছাড়া কূটনৈতিক বন্ডেড ওয়্যারহাউসের লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোতে গড়ে উঠেছে একাধিক দালাল চক্র। এই দালালরা যোগসাজশ করে শুল্কমুক্ত সুবিধার কোটি কোটি টাকার পণ্য কালোবাজারে বিক্রি করছেন। ফলে প্রাপ্যতার অপব্যবহারের আড়ালে বড় অঙ্কের কমিশন বাণিজ্য হওয়ার তথ্য মিলেছে। জানা গেছে, কূটনীতিক বন্ডেড ওয়্যারহাউসের প্রাপ্যতার বিষয়ে দিকনির্দেশনা চেয়ে ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড- এনবিআরে পত্র দেন ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার মো. শওকাত হোসেন। পত্রে তিনি প্রাপ্যতার অপব্যবহার ও কিছু আইনি জটিলতা এড়াতে এনবিআরের নির্দেশনা চেয়েছেন। এ ক্ষেত্রে প্রাপ্যতা নিয়ে কয়েকটি কূটনৈতিক বন্ডেড ওয়্যারহাউসের বার্ষিক প্রাপ্যতার অব্যাহত আদেশের কার্যকারিতা রহিত ও সুনির্দিষ্টকরণের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়েছে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। সংস্থাটির কমিশনার মো. শওকাত হোসেনের মতে, কূটনৈতিক বন্ড সুবিধার অপব্যবহার ধরা কাস্টমসের জন্য খুব কঠিন কাজ। এক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিদেশি মিশন ও জাতিসংঘ অধিভুক্ত সংস্থাগুলোর সহায়তা দরকার। প্রাপ্যতার নির্ধারণের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ ও আরও নজরদারি ব্যবস্থাপনা দরকার। আর যেসব মামলা সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে, তা সমাধানে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট কাজ করছে। কাস্টমস সূত্র জানায়, কয়েকটি দেশের কূটনীতিক নিজের পাসপোর্ট ব্যবহার করে এবং বন্ড সুবিধার পাসবুক দালালদের কাছে সরবরাহ করে কমিশন বাণিজ্য করছে। তারা প্রকৃত অর্থে তাদের নামে বরাদ্দ হওয়া বন্ড সুবিধার মদ ও মদজাতীয় পণ্য এবং তামাকজাতীয় পণ্যের ভোক্তা না। কিন্তু ভোক্তার সুবিধা নিয়ে তা কালোবাজারে বিক্রি করে বাড়তি অর্থ গ্রহণ করছেন। এতে কূটনীতিকদের বন্ড সুবিধা প্রাপ্যতার অপব্যবহার হচ্ছে। অনেক সময় কূটনৈতিক বন্ড লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠান ও সেখানে থাকা দালালদের কাছ থেকে এই সুবিধা নেন। বিনিময়ে বার ও এর বাইরে এসব শুল্কমুক্ত বন্ড সুবিধার মদ ও মদজাতীয় পণ্য এবং তামাকজাতীয় পণ্য বিক্রি করছেন। এক্ষেত্রে গড়ে উঠেছে বিশাল সিন্ডিকেট। আবার তাদের এ সংক্রান্ত কাগজপত্র হালনাগাদও থাকছে। এ ক্ষেত্রে আইনি কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছেন না কাস্টমস কর্মকর্তারা। জানা গেছে, কূটনৈতিক বন্ড সুবিধা হলো- কূটনীতিক ও বিশেষ সুবিধাভোগী বিদেশি নাগরিকদের কেনা পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান। যাকে বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা বলা হয়। এই সুবিধার আওতায় আমদানি হওয়া পণ্য বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে বন্ড লাইসেন্স পাওয়া কিছু প্রতিষ্ঠান বিক্রি করছে। কূটনৈতিক এলাকায় স্থাপিত এই বন্ডেড ওয়্যারহাউস থেকে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিক ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সদস্যরা শুল্কমুক্ত পণ্য বৈদেশিক মুদ্রা বা টাকায় ক্রয় করতে পারেন। কূটনীতিক বন্ড লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো মদ ও মদজাতীয় পণ্য, তামাক পণ্যসহ কিছু পণ্য বিক্রি করছে।
কূটনীতিক ছাড়াও বিশেষ সুবিধাভোগী বিদেশি নাগরিক, যারা বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-আইডিবি’র মতো বাংলাদেশে অবস্থানরত প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত। এর সঙ্গে উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থা এবং দূতাবাসগুলোতে কর্মরত বিদেশি নাগরিকরা।
 
                         
                                     
                                                             
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        