রবিবার, ২৮ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৭ জনের মরদেহ হস্তান্তর

ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ, ঘটনা তদন্তে কমিটি, মামলা, চালক গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৭ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল বেলা সাড়ে ৩টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) মর্গ থেকে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। এর আগে সেখানে মরদেহগুলোর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। নিহত ১৭ জনের মধ্যে আগুনে পুড়ে যাওয়ায় আটজনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তাই ডিএনএ পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ময়নাতদন্তের সময় মরদেহগুলো থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। নিহতদের সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক আছে এমন ব্যক্তিদেরও নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ডিএনএ প্রোফাইল মেলানোর জন্য।

নিহতরা সবাই রংপুরের পীরগঞ্জের বাসিন্দা। তারা হলেন- পীরগঞ্জের ডারিকাপাড়া গ্রামের মোখলেসুর রহমান (৪৫), তার স্ত্রী পারভীন বেগম (৪০), রাঙ্গামাটি গ্রামের মো. সালাহউদ্দিন (৩৬), তার স্ত্রী শামসুন্নাহার (২৫), তাদের ছেলে সাজিদ (৮), মেয়ে সাফা (২), শামসুন্নাহারের বড় বোন বড় মজিদপুর গ্রামের বাসিন্দা কামরুন্নাহার (৩৭), উপজেলা সদরের মো. ভুট্টু (৪০), তার স্ত্রী মুক্তা বেগম (৪০), ছেলে ইয়ামিন (১৫), বড় মজিদপুরের ফুলমিয়া (৪০),         তার স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৫), ছেলে ফয়সাল (১৫), মেয়ে সুমাইয়া (৮) ও সাবিহা (৩); দুরামিঠিপুর গ্রামের শহীদুল ইসলাম (৪৬) এবং মাইক্রোবাসের চালক মো. হানিফ (৩০)। হানিফের বাড়ি পীরগঞ্জ উপজেলার পচাকান্দ গ্রামে। দুর্ঘটনায় শুধু নিহত মোখলেসুর রহমান ও পারভীন বেগমের ছেলে পাভেল (২৭) বেঁচে আছেন। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কাটাখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মতিয়ার রহমান জানান, দুর্ঘটনায় নিহত ১৭ জনেরই নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য।

দুর্ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যের কমিটি : রাজশাহীর কাটাখালীতে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলামকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

হানিফের চালক গ্রেফতার : শনিবার হানিফ পরিবহনের ওই বাসের চালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার নাম আবদুর রহিম (৩৫)। রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বাড়ইপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বৃদ্ধ করিমের পুড়েছে পাঁচ স্বজন : দুই মেয়ে, এক জামাতা আর দুই নাতি-নাতনিকে একসঙ্গে হারালেন রংপুরের পীরগঞ্জের বড়রাজারামপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল করিম সরকার। প্রায় ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধ করিম সরকার এখন শোকে কাতর। শুক্রবার রাজশাহীতে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় যে ১৭ জন নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে করিম সরকারের পরিবারের পাঁচজন আছেন। তারা হলেন- বড় মেয়ে কামরুন্নাহার (৩৭), ছোট মেয়ে শামসুন্নাহার (২৫), তার স্বামী মো. সালাহউদ্দিন (৩৬), তাদের ছেলে সাজিদ (৮) ও মেয়ে সাফা (২)। নিহত সালাহউদ্দিন পরিবার নিয়ে পীরগঞ্জ উপজেলার রাঙ্গামাটি গ্রামে বাস করতেন। শুক্রবার দুপুরে রাজশাহীতে এই দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত হন। এরা সবাই পীরগঞ্জের বাসিন্দা। একটি মাইক্রোবাসে চালকসহ মোট ১৮ জন রাজশাহীতে পিকনিকে আসছিলেন। রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠ কাপাশিয়া এলাকায় হানিফ পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় মাইক্রোবাসটির। এরপর মাইক্রোবাসের গ্যাস সিলিন্ডার লিক হয়ে আগুন ধরে যায়। পরে মাইক্রোবাসের আগুন গিয়ে পড়ে পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা আরেকটি লেগুনায়।

পীরগঞ্জে একসঙ্গে ১৭ জনের জানাজা  : রংপুরের পীরগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে গতকাল রাতে একসঙ্গে ১৭ জনের নামাজে জানাজা হয়। বিকাল থেকে অপেক্ষায় থাকা শত শত এলাকাবাসী জানাজায় অংশ নেন। পরে নিজ নিজ গ্রামে খুঁড়ে রাখা ১৭টি কবরে দাফন করা হয়। নিহতরা পীরগঞ্জ উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের দ্বারিকাপাড়া, রামনাথপুর ইউনিয়নের রাজারামপুর, বড়মজিদপুর, পীরগঞ্জ পৌরসভার প্রজাপাড়া এবং মিঠিপুর ইউনিয়নের দুরামিঠিপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। এই পাঁচ গ্রামে চলছে শোকের মাতম। নিহত পরিবারগুলোর মধ্যে ফুল মিয়ার বৃদ্ধা মা ফইমনন্নেছা এবং মোকলেছারের একমাত্র মেয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী মোহনা বাড়িতে থাকায় বেঁচে গেছেন। বাবা-মা-ভাইকে হারিয়ে মোহনা এখন বাকরুদ্ধ। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকছে। এর আগে গতকাল বিকাল সাড়ে ৫টায় রাজশাহী থেকে দুটি ট্রাক ও একটি অ্যাম্বুলেন্সযোগে লাশ নিয়ে রওনা দেন নিহতদের স্বজন ও পীরগঞ্জের ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা। চৈত্রকোল ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি গ্রামের বাসিন্দা হবিবর রহমান বলেন, সালাউদ্দিন বিয়ের পর থেকে তার শ্বশুর বাড়ি রামনাথপুর ইউনিয়নের বড় রাজারামপুর গ্রামে থাকতেন। দুর্ঘটনায় তার পরিবারের সবাই মারা যাওয়ায় গ্রামজুড়ে শোকের মাতম চলছে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর