সোমবার, ২৯ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা
মিয়ানমারজুড়ে শোক

এক দিনেই নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১৪

প্রতিদিন ডেস্ক

এক দিনেই নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১৪

মিয়ানমারে গুলিতে নিহত এক বিক্ষোভকারীকে ছুঁয়ে আর্তনাদ -এএফপি

মিয়ানমারে সশস্ত্র বাহিনী দিবসে বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ১১৪ জন নিহত হওয়ার পর দেশজুড়ে গতকাল শোক পালন করেছেন সামরিক জান্তাবিরোধীরা। এদিকে কারেন বিদ্রোহীরা এক হামলা চালিয়ে একজন লে. কর্নেলসহ ১০ মিয়ানমার সেনাকে হত্যা করেছে। পরে সেনারা তাদের ওপর পাল্টা বিমান হামলা চালিয়েছে। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি।

এক খবরে বলা হয়, ২৭ মার্চ সশস্ত্র বাহিনী দিবসে ভয়াল হয়ে উঠে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এ দিন রাজধানী নেপিদোতে সেনা কুচকাওয়াজের পর পরই সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে চলমান বিক্ষোভে চরম দমনপীড়ন চালানো হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে দেশটিতে এক দিনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে অন্তত ১১৪ জনে দাঁড়ায়। মাথায় গুলি করার হুমকি উপেক্ষা করে এ দিন সকাল থেকেই বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমে আসেন। ইয়াঙ্গুন, মান্দালয়সহ বিভিন্ন শহরে শুরু হয় প্রচ- বিক্ষোভ। অন্যান্য দিনের মতো রাজপথে ছিল জান্তা সরকারের সেনা-পুলিশও। তবে তারা গতকাল আরও কঠোর অবস্থান নেয়।

অনলাইন সংবাদ পোর্টাল মিয়ানমার নাও জানিয়েছে, শনিবারের দমন অভিযানে দেশজুড়ে ১১৪ জন নিহত হন। তাদের ৪০ জন মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে মারা গেছেন, ১৩ বছরের এক কিশোরীও রয়েছে তাদের মধ্যে। বাণিজ্যিক নগরী ইয়াঙ্গুনে নিহত হয়েছেন ২৭ জন। ১৩ বছরের আরেক কিশোরী নিহত হয়েছে সাগাইং অঞ্চলে। কাচিন অঞ্চল থেকেও মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর এ নিয়ে দেশটিতে সাধারণ নাগরিকের প্রাণহানির সংখ্যা ৪৪০ ছাড়িয়েছে। এদিকে ক্ষুদ্র জাতি কারেনদের সশস্ত্র সংগঠন কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন দাবি করেছে, থাইল্যান্ডের সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় একটি সেনাচৌকিতে হামলা চালিয়ে সেটি গুঁড়িয়ে দিয়ে ১০ সেনাকে হত্যা করেছে তারা। এ সেনা সদস্যদের মধ্যে একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদার কর্মকর্তাও রয়েছেন। এ হামলায় সংগঠনটির একজন সদস্যও নিহত হন। বিমান হামলার পর গ্রামবাসী জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছেন। জানা গেছে, এ হামলার পর মিয়ানমারের পূর্বাঞ্চলে কারেন বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকার একটি গ্রামে বিমান হামলা চালিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। এ হামলায় অন্তত দুজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে মিয়ানমারের একটি নাগরিক সংগঠন।

মিয়ানমারজুড়ে শোক : মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে এক দিনে ১১৪ জন নিহত হওয়ার পর গতকাল দেশজুড়ে শোক পালন করেছে সামরিক জান্তাবিরোধীরা। তারা এই শোকের মাঝেই সামরিক শাসন প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করেন। এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার নিরাপত্তা বাহিনীর ‘হত্যাকান্ডে’ শিশুরাও রেহাই পায়নি। জাতিসংঘের তদন্ত কর্মকর্তার ভাষ্যে, সামরিক বাহিনী ‘গণহত্যা’ চালিয়েছে। বিক্ষোভকারীদের অন্যতম জোট জেনারেল স্ট্রাইক কমিটি অব ন্যাশনালিস্ট (জিএসসিএন) এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছে, ‘আমাদের বীরদের সালাম জানাই, যারা এই বিপ্লবে নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন এবং আমরা অবশ্যই এই বিপ্লবে জয়ী হব।’

এই রক্তপাত আতঙ্কজনক : মিয়ানমারে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত টমাস ভাজদা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বিবৃবিতে লিখেছেন, ‘এই রক্তপাত আতঙ্কজনক। মিয়ানমারের নাগরিকরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে : তারা সামরিক শাসনের অধীনে থাকতে চায় না।’ আর মিয়ানমারে ইইউ প্রতিনিধি দল বলেছে, ‘শনিবারের দিনটি নৃশংসতা আর অসম্মানের চিরস্থায়ী চিহ্ন হয়ে থেকে যাবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা এবং তার কাছাকাছি পদমর্যাদার ডজনখানেক কর্মকর্তা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর এহেন নিষ্ঠুর কার্যকলাপের নিন্দা জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তারা বলেছেন, ‘পেশাদার সামরিক বাহিনীর অবশ্যই কার্যক্রম পরিচালনায় আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করতে হবে এবং নিজেদের নাগরিকদের রক্ষা ও তাদের আঘাত না করার দায়িত্ব নিতে হবে।’

জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রু এই রক্তপাত বন্ধে বিশ্ববাসীকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। যদি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে নাও হয়, তাহলেও জরুরি আন্তর্জাতিক সম্মেলন করে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন তিনি। সামরিক জান্তা যাতে মিয়ানমারের তেল-গ্যাস বিক্রি করে অর্থ জোগাড় করতে না পারে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ারও আহ্বান জানান টম অ্যান্ড্রু।

সর্বশেষ খবর