বুধবার, ৭ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

মৃত্যু ও আক্রান্তে সর্বোচ্চ রেকর্ড

এক দিনে ৬৬ জন মারা গেলেন, শনাক্ত ৭২১৩

নিজস্ব প্রতিবেদক

মৃত্যু ও আক্রান্তে সর্বোচ্চ রেকর্ড

করোনাভাইরাস সংক্রমণে গত এক দিনেই দেশে মৃত্যু হয়েছে ৬৬ জনের। গত বছরের মার্চে বাংলাদেশে ভাইরাসটি শনাক্তের পর ১৩ মাসের মধ্যে এটাই এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৭ হাজার ২১৩ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, যা এখন পর্যন্ত এক দিনে সর্বাধিক শনাক্তের রেকর্ড। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। গতকালের আগে এক দিনে সর্বোচ্চ ৬৪ জনের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয় গত বছরের ৩০ জুন। স্বাস্থ্যবিধিতে কড়াকড়ি আরোপ ও মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ায় গত বছরের শেষ দিকে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে আসে। ফেব্রুয়ারিতে দৈনিক মৃত্যু নেমে আসে ৫-৭ জনে। দৈনিক শনাক্ত নামে তিনশর নিচে। ভাইরাসের নতুন স্টেইন ছড়িয়ে পড়ায় মার্চ থেকে আবারও বাড়তে শুরু করেছে সংক্রমণ ও মৃত্যু। এপ্রিলের প্রথম ছয় দিনের মধ্যে তিন দিনই দৈনিক শনাক্ত হয়েছে ৭ হাজারের বেশি রোগী। দুই দিন শনাক্ত হয় ৬ হাজারের বেশি ও এক দিন শনাক্ত হয়েছে সাড়ে ৫ হাজারের বেশি রোগী। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার যারা ভাইরাসটির দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছেন, দ্রুত তাদের অবস্থা খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে। আইসিইউর দরকার পড়ছে অনেক বেশি মানুষের। তাই হাসপাতালের ওপর চাপ বাড়ছে। গতকাল রাজধানীর ১০টি কভিড-১৯ ডেডিকেটেড সরকারি হাসপাতালের ১২৮টি আইসিইউর মধ্যে ফাঁকা ছিল মাত্র ১০টি। বেসরকারি হাসপাতালের মোট ৩০৭টি আইসিইউর মধ্যে ফাঁকা ছিল ২৫টি আইসিইউ। সারা দেশের ৫৯৭টি আইসিইউর মধ্যে ৪১৭টিতে রোগী ভর্তি ছিল।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৬ লাখ ৫১ হাজার ৬৫২ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৯ হাজার ৩৮৪ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৩৮৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৬৬ জন ও সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৯৬৯ জন। সুস্থ ও মৃত বাদে দেশে বর্তমানে শনাক্ত হওয়া সক্রিয় করোনা রোগী রয়েছে ৮৩ হাজার ৮৮৫ জন, যা মার্চের শুরুতে ছিল ৪০ হাজারের কিছু বেশি। মাসের ব্যবধানে শনাক্ত হওয়া সক্রিয় রোগী বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। তবে প্রায় ৮৪ হাজার সক্রিয় রোগীর মধ্যে মাত্র ১৩ হাজার ৫৮১ জনের আইসোলেশনের তথ্য জানা গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৭ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হলেও মাত্র ৫৯৭ জনের আইসোলেশন নিশ্চিত করতে পেরেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। বাকি রোগীরা যত্রতত্র ঘুরে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে কিনা তা জানা নেই কারও। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৪ হাজার ৩১১টি নমুনা পরীক্ষায় সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ২১ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। গত ফেব্রুয়ারিতে শনাক্তের হার নেমে এসেছিল ৩ শতাংশের নিচে।

গত এক দিনে মৃতদের মধ্যে ৩৯ জন ছিলেন পুরুষ ও ২৭ জন নারী। হাসপাতালে ৬৪ জনের ও বাড়িতে দুজনের মৃত্যু হয়। বয়স বিবেচনায় মৃতদের ৪১ জনই ছিলেন ষাটোর্ধ্ব। এ ছাড়া ১৭ জন পঞ্চাশোর্ধ্ব, পাঁচজন চল্লিশোর্ধ্ব, দুজন ত্রিশোর্ধ্ব ও একজনের বয়স ছিল ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। এর মধ্যে ৫৪ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। এ ছাড়া চারজন চট্টগ্রাম, তিনজন রাজশাহী, দুজন খুলনা, দুজন বরিশাল ও একজন সিলেট বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরাও। গতকাল ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের শিশু করোনা ইউনিটে বেশ কয়েকজন শিশু ভর্তি ছিল। হাসপাতালসূত্র জানায়, চিকিৎসাধীন শিশুদের মধ্যে সাতজনকে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) রাখা হয়েছে। সাতজনের মধ্যে ২১ মাসের শিশুসহ মোট পাঁচজন শিশু করোনায় আক্রান্ত। বাংলাদেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা শনাক্তের তথ্য জানানো হয় ও ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

সর্বশেষ খবর