রবিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

বিশেষ ফ্লাইট বাতিলে ভোগান্তি প্রবাসী যাত্রীদের বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশেষ ফ্লাইট বাতিলে ভোগান্তি প্রবাসী যাত্রীদের বিক্ষোভ

প্রবাসীরা গতকাল কারওয়ানবাজারে বিক্ষোভ করেন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সৌদি ও দুবাইগামী বিশেষ ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন প্রবাসী যাত্রীরা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা এসব যাত্রী ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দরে এসে ফ্লাইট বাতিলের খবর জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা দ্রুত সমস্যা সমাধানের জন্য শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গতকাল বিক্ষোভ করেন।

উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুপুরের দিকে বিমান সচিব মোকাম্মেল হোসেন, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রবাসী কল্যাণ সচিব মুনিরুস সালেহীন এবং বিমানের এমডি আবু সালেহ মোস্তফা কামাল বিমানবন্দরে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তারা অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। এ সময় তারা বলেন, বাতিল হওয়ায় ফ্লাইটের যাত্রীদের বিশেষ ব্যবস্থায় পাঠাতে চেষ্টা অব্যাহত আছে। তারা জানান, সৌদি এবং দুবাই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। বিমান অবতরণের অনুমতি পেলে যাত্রীদের পাঠাবেন। সে পর্যন্ত যাত্রীদের থাকার জন্য হোটেল এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা করবেন তারা। এমন আশ্বাসে প্রবাসী কর্মীরা শান্ত হন। একই ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় সোনারগাঁও হোটেলের সৌদি এয়ারলাইনস অফিসের সামনে। সৌদি এয়ারলাইনসের ফ্লাইট আদৌ যাবে কি না তা নিশ্চিত হতে না পেরে প্রবাসীরা বিক্ষোভ করে।

প্রবাসীকর্মীরা বলছেন, লকডাউনে যান চলাচল বন্ধ। গাড়ি ভাড়া করে ঢাকায় আসার পর জানা যাচ্ছে ফ্লাইট বাতিল। এখন আমরা কোথায় যাব। আবার গাড়ি ভাড়া কে দেবে। যাদের ভিসার মেয়াদ শেষের পথে তারা আছেন বেকার হওয়ার ঝুঁঁকিতে। তাদের কপাল পুড়বে সময়মতো যেতে না পারলে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের উপ-মহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার বলেন, সৌদি আরবে ল্যান্ডিং পারমিশন না পাওয়ায় ফ্লাইটটি বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়াও যাত্রী সংকটের কারণে দুবাইয়ের দুটি ফ্লাইট বাতিল করা হয়। বিমান সূত্র জানায়, গতকাল বিমানের পাঁচটি ফ্লাইট ছিল। এর মধ্যে চারটি বাতিল হয়েছে। বাতিল হওয়া ফ্লাইটের মধ্যে রয়েছে সৌদি আরবের দাম্মামে একটি, রিয়াদে একটি, দুবাইয়ে দুটি ফ্লাইট। তবে রাতে সৌদি আরবে জেদ্দাগামী ফ্লাইট বাতিল করেনি বিমান। তারা সৌদি আরবে অনুমতির আশায় রয়েছে। এ ছাড়াও ফ্লাই দুবাইয়ের দুটি ফ্লাইটও বাতিল হয়েছে। ইউএস বাংলা দুবাইগামী একটি ফ্লাইট বাতিল করেছে। জানা গেছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের রিয়াদগামী ফ্লাইট (বিজি-৫০৩৯) গতকাল সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। এ কারণে এয়ারলাইনসের নির্দেশনা অনুসারে ছয় ঘণ্টা আগে রাত ১টার মধ্যেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসেছিলেন যাত্রীরাও। কিন্তু ফ্লাইটটি বাতিল  হয়। এ কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে রাতে প্রবাসীকর্মীরা বিক্ষোভ করেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। পরবর্তীতে এসব যাত্রীদের হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করে বিমান। সৌদি আরবের দাম্মামগামী ফ্লাইটের যাত্রী সিলেটের মোহাম্মদ হাসান জানান, দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে ফ্লাইট বলে জরুরি ভিত্তিতে তাদেরকে আসতে বলা হয়। লকডাউনে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকলেও অনেক কষ্ট করে বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। কিন্তু এসে জানতে পারেন নির্ধারিত সময়ের ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। মোহাম্মদ ইসমাইল নামের আরেক যাত্রী জানান, অনেক হয়রানির শিকার হয়ে করোনা টেস্ট রিপোর্ট করিয়ে দুবাই যাওয়ার উদ্দেশে তারা বিমানবন্দরে আসেন। কিন্তু আসার পর তাদেরকে বলা হয় ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এই মহামারীতে অনেক অভাব সত্ত্বেও সুদের ওপর টাকা নিয়ে তারা টিকিট কিনেছিলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আসা মাসুদ ও সিলেট থেকে আসা সোজেল মিয়া জানান, করোনা টেস্ট রিপোর্টসহ প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ করে বিমানবন্দরে তারা এসেছেন। এখনো ফিরে যাওয়ার খরচও তাদের কাছে নেই। ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় নতুন করে আবার করোনা রিপোর্ট করাতে হবে।

এদিকে সৌদি এয়ারলাইনসের ফ্লাইট আদৌ যাবে কি না তা নিশ্চিত হতে না পেরে প্রবাসীরা বিক্ষোভ করে। গতকাল ভোর থেকেই রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় সোনারগাঁও হোটেলের সৌদি এয়ারলাইনসের অফিসের সামনে অপেক্ষা করতে থাকে প্রবাসীরা। অপেক্ষারত সৌদিগামী যাত্রীরা বলেন, শনিবার সৌদি এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট ছিল; সেটি আদৌ যাবে কি না, তারা যেতে পারবেন কি না, এ বিষয়টি নিশ্চিত হতে তারা ভিড় করতে থাকে। কিন্তু সৌদি এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষের কেউ তাদের বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করেনি। এ অবস্থায় কয়েক শ যাত্রী সৌদি এয়ারলাইনসের অফিসের সামনে বিক্ষোভ করে। দুপুরে পুলিশের হস্তক্ষেপে প্রবাসীরা কারওয়ান বাজার ত্যাগ করে। প্রবাসীকর্মীদের কর্মস্থলে ফেরা নিশ্চিত করতে শনিবার সকাল ৬টা থেকে পাঁচটি দেশে ১২টি এয়ারলাইনসকে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এই পাঁচটি দেশ হচ্ছে- সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার ও সিঙ্গাপুর। শুধু প্রবাসীকর্মীরা এসব ফ্লাইটে যেতে পারবেন। আর দেশে এলে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে প্রবাসী কর্মীদের।

সর্বশেষ খবর