মঙ্গলবার, ২০ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনায় উৎকণ্ঠা শিশুদের নিয়ে

বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের হার, মারা গেছে ৪০ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনায় উৎকণ্ঠা শিশুদের নিয়ে

করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুও। এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসের থাবায় প্রাণ হারিয়েছে ৪০ শিশু। অন্য বয়সীদের তুলনায় শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার হার কম। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউয়ে সে সংখ্যাও ঊর্ধ্বমুখী।

গত ২ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুই বছরের শিশু সাদিকুলের মৃত্যু হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। সাদিকুলের বাবা সাদ্দাম হোসেন জানান, কিডনিজনিত সমস্যায় আক্রান্ত ছিল সাদিকুল। গত ২০ মার্চ তাকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অতিরিক্ত শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে ২৭ মার্চ করোনার নমুনা পরীক্ষা হয় এবং রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপর ২৯ মার্চ ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গায় নিয়ে আসা হয় ও সদর হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। এরপর হাসপাতালে মারা যায় সাদিকুল। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত ১১ এপ্রিল এক শিশু মারা গেছে। সেদিন মোট মারা গিয়েছিলেন ৭৮ জন। এর মধ্যে ষাটোর্ধ্ব বয়সী ছিলেন ৪৮ জন। এরপরে বেশি মারা গিয়েছেন ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ১৬ জন। গত ৫ এপ্রিল এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ওই দিন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন ৫২ জন। মৃতদের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব বয়সী ৩২ জন। পুরো মহামারীর সময় জুড়ে শিশুদের ওপর করোনাভাইরাসের প্রকোপ বরাবরই ছিল কম। তবে যে কয়জন আক্রান্ত হয়েছে তাদের এবং পুরো পরিবারের লড়াইটা প্রাপ্তবয়স্ক রোগীর চাইতেও কঠিন। কিছু গবেষণা দাবি করছে, করোনাভাইরাসের নতুন যে ধরন সাম্প্রতিক সময়ে আবিষ্কার হয়েছে তা শিশুদের জন্য অনেক বেশিমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, প্রায় এক তৃতীয়াংশ ‘পেডিয়াট্রিক কভিড-১৯’ রোগীই ছিল উপসর্গহীন। তবে যে উপসর্গগুলো দেখা গেছে তাদের মধ্যে কিছু আবার প্রাপ্তবয়স্ক রোগীদের থেকে ভিন্ন। অপরদিকে শিশুরা এই ভাইরাস ছড়ায় দীর্ঘ সময়ব্যাপী। তাই শিশু এবং নিজের সুরক্ষা দুটোই নিশ্চিত করতে শিশুদের বেশি সুরক্ষিত রাখতে হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের মতো শিশুদের ক্ষেত্রেও এই ভাইরাস শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। ফলে ‘ড্রাই কফ’, গলা ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়। মৃদু জ্বর দেখা দিলে তার করোনা পজিটিভ হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। গলা আটকে থাকার পাশাপাশি যদি নাক দিয়ে পানি আসা শুরু হয় তবে ‘কভিড-১৯’ এ আক্রান্ত হওয়ার সন্দেহটা অবান্তর হবে না। এমন পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের অন্যান্য উপসর্গ দেখা যায় কি না সেদিকে নজর রাখতে হবে। মহামারীর শুরুর দিকে এই উপসর্গ দেখা গিয়েছিল। ত্বকের বিভিন্ন অংশে অপ্রত্যাশিত র‌্যাশ, ত্বকের ক্ষুদ্র রক্তনালিতে সংক্রমণ, হাত কিংবা পায়ের আঙুল ফুলে যাওয়া ইত্যাদি বিপজ্জনক ইঙ্গিত। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে দ্রুত। সংক্রমণের কারণে ব্যথা হওয়ার উপসর্গটা শিশুদের মাঝে দেখা গেছে কম। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে মাথা-ব্যথা দেখা গেছে বেশি, যা বেশ অসহ্য হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে প্রায় ১৪ শতাংশের মাঝে মাথা ব্যথা দেখা গেছে, তবে শিশুদের মাঝে সেই মাত্রাটা হলো ৫৫ শতাংশ। আর এদের মধ্যে সবারই করোনা টেস্ট আসে ‘পজিটিভ’। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে সবাইকেই সচেতন হতে হবে। তবে শিশু ও বয়স্কদের প্রতি একটু বেশি সচেতন হতে হবে। বয়স্কদের এমনিতেই উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের মতো কিছু সমস্যা থাকে। আর শিশুরা অসুস্থ বোধ করলেও হয়তো অভিভাবককে বুঝিয়ে বলতে পারবে না।’

সর্বশেষ খবর