মঙ্গলবার, ৪ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনায় এক দিনে আরও ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু

প্রতিদিন ডেস্ক

বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই ছাড়িয়ে যাচ্ছে শনাক্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড। দক্ষিণ এশিয়ার জনবহুল দেশ ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশ এখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণে বিপর্যস্ত। সূত্র : রয়টার্স, ওয়ার্ল্ডোমিটার।

সারাবিশ্বে গত রবিবার ২৪ ঘণ্টায় প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১০ হাজার ১৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৬ লাখ ৮৯ হাজার ২০১ জন। বিশ্বব্যাপী এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন মোট ১৫ কোটি ৩৪ লাখ ৮১ হাজার ৬১৩ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৩২ লাখ ১৬ হাজার ২১৪ জন।

বিশ্বে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় সবার ওপরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৩ কোটি ৩১ লাখ ৮০ হাজার ৪৪১ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ৯১ হাজার ৬২ জনের। আর সুস্থ হয়েছেন ২ কোটি ৫৮ লাখ ২৩ হাজার ৮০০ জন। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় এর পরেই রয়েছে ভারত। গত কয়েক দিন ধরে দেশটিতে দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ কোটি ৯৯ লাখ ১৯ হাজার ৭১৫ জনের। মোট মৃত্যু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৮ হাজার ৯৪৫। আর সুস্থ হয়েছেন ১ কোটি ৬২ লাখ ৮১ হাজার ৭৩৮ জন। তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্রাজিল। লাতিন আমেরিকার দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে ১ কোটি ৪৭ লাখ ৫৪ হাজার ৯১০ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৪ লাখ ৭ হাজার ৭৭৫ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ১ কোটি ৩২ লাখ ৭৮ হাজার ৭১৮ জন। চতুর্থ স্থানে থাকা ফ্রান্সে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৬ লাখ ৫২ হাজার ২৪৭ জন রোগী। এর মধ্যে মারা গেছেন ১ লাখ ৪ হাজার ৮১৯ জন। সুস্থ হয়েছেন ৪৬ লাখ ৩৬ হাজার ৯৪ জন। শনাক্তের দিক দিয়ে এখন পঞ্চম স্থানে তুরস্ক। দেশটিতে এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৪৮ লাখ ৭৫ হাজার ৩৮৮ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৪০ হাজার ৮৪৪ জন। সুস্থ হয়েছেন ৪৪ লাখ ৮০ হাজার ৩৮১ জন। এ ছাড়া তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রাশিয়া, সপ্তম স্থানে যুক্তরাজ্য, অষ্টম স্থানে ইতালি, নবম স্থানে স্পেন এবং দশম স্থানে রয়েছে জার্মানি।

ভারতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ২ কোটি : করোনাভাইরাস মহামারীর প্রাণঘাতী দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেসামাল ভারতে শনাক্ত রোগীর মোট সংখ্যা ২ কোটি ছুঁই ছুঁই করছে। গতকাল সকালে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আগের ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩ লাখ ৬৮ হাজার ১৪৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছে। এদের নিয়ে দেশটিতে শনাক্ত মোট করোনাভাইরাস রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ৯৯ লাখ ২৫ হাজার ৬০৪ জনে দাঁড়িয়েছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যে দেখা গেছে। টানা ১২তম দিনের মতো ভারতে ৩ লাখের বেশি রোগী শনাক্ত হলো। ওই একই সময় কভিড-১৯ এ আরও ৩ হাজার ৪১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়টি জানিয়েছে। এতে দেশটিতে মৃতের মোট সংখ্যা ২ লাখ ১৮ হাজার ৯৫৯ জনে দাঁড়িয়েছে। আগের দিন রবিবার দেশটি মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে এক দিন সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৬৮৯ জনের মৃত্যু দেখেছে। এক দিনে ৪ লাখ রোগী শনাক্তের নতুন বিশ্বরেকর্ড ভারতকে দেখতে হয়েছে দুই দিন আগে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকা উৎপাদনকারী দেশ হয়েও করোনাভাইরাসের টিকার ঘাটতি দেখা দিয়েছে বিভিন্ন রাজ্যে। হাসপাতালে জায়গা নেই, জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেনের মজুদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। ভারতের বড় বড় শহরে প্রতিদিন শ্মশানগুলোতে হাজারো মানুষের দাহ হচ্ছে, লাশ পোড়া গন্ধ আর ভস্মে ভারী হয়ে উঠছে বাতাস, আকাশ হয়ে উঠেছে ধূসর, মহামারী যেন অনন্ত মৃত্যুর মিছিলে পরিণত হয়েছে।

মেডিকেল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৩৫ কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে প্রকৃত আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে পাঁচ থেকে ১০ গুণ বেশি হবে। দেশটির অন্তত ১১টি রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল সংক্রমণের রাশ টেনে ধরতে বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, কিন্তু দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার অর্থনীতিতে প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্নতার কারণে দেশজুড়ে লকডাউন জারি করার বিষয়ে অনাগ্রহী বলে জানা গেছে।

কর্ণাটকের হাসপাতালে ২ ঘণ্টায় ২৪ রোগীর মৃত্যু : ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের চামরাজনগর জেলা হাসপাতালে অক্সিজেন সংকটে অন্তত ২৪ রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ‘রাত ১২ থেকে ভোররাত ২টার মধ্যে অক্সিজেন সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেওয়ার পর এসব মৃত্যুর কথা জানানো হয়’ বলে গতকাল বলেছেন এক কর্মকর্তা। হাসপাতালটিতে অন্তত ১৪৪ জন রোগী ভর্তি ছিলেন বলে ভারতীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন তিনি।

ভারতে কয়েক সপ্তাহের শাটডাউন দরকার : কোনো দেশই লকডাউন করতে চায় না। কিন্তু এখন ভারতের যা পরিস্থিতি, তাতে অন্তত কয়েক সপ্তাহের জন্য গোটা ভারতে শাটডাউন হওয়া দরকার। তবেই সংক্রমণের এই চেন ভাঙা সম্ভব হবে। এমনটাই বলছেন আমেরিকার মুখ্য স্বাস্থ্য উপদেষ্টা অ্যান্টনি ফাউচি।

সাত আমেরিকান প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে ফাউচির। সেই ফাউচি এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘আমি রাজনীতির লোক নই। কিন্তু ভারত এই পরিস্থিতি কীভাবে সামলাবে তা বেশ চিন্তার। ভারতের করোনা পরিস্থিতি সত্যিই ভয়াবহ। অক্সিজেনের জন্য হাহাকার চলছে। রোগীর পরিবারের আত্মীয়রা অক্সিজেনের জন্য কান্নাকাটি করছেন। আমার মতে এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে অন্তত কয়েক সপ্তাহের জন্য গোটা ভারতে শাটডাউন হওয়া দরকার। সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে টিকাকরণ দরকার। অসুস্থদের হাসপাতালে ভর্তি, অক্সিজেনের সঠিক জোগান ও ওষুধপত্রের প্রয়োজন। মানুষের শরীরের যত্ন সবার আগে নিতে হবে।’ এরপরই ফাউচি বলেছেন, ‘এখন আমেরিকার অবস্থা আগের চেয়ে বেশ ভালো। অক্সিজেন, পিপিই, ভেন্টিলেটরের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু ভারতের অবস্থা সত্যিই ভয়াবহ। বাকি দেশগুলোর ভারতের সাহায্যে এগিয়ে আসা উচিত। আর সে উদ্যোগ শুরুও হয়েছে। একই সঙ্গে মিলিটারির সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন। হাসপাতালের চিকিৎসা পরিকাঠামোরও উন্নতি প্রয়োজন।’? ফাউচির কথায়, ‘আমেরিকায় ইতিমধ্যেই ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে সবার টিকাকরণ হয়ে গেছে। আর ৬৫-এর মধ্যে যারা আছেন, তাদের একটি ডোজ নেওয়া হয়ে গেছে।’? সবশেষে ফাউচি বলেছেন, ‘ভারতের এই ভয়ংকর পরিস্থিতিতে সব দেশকে একজোট হয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিকও হবে। তারজন্য কয়েক সপ্তাহ শাটডাউন হওয়া দরকার।’?

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর