মঙ্গলবার, ১৫ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

নামেই শুধু লকডাউন

মাস্ক ব্যবহার ভুলে যেতে বসেছে মানুষ, বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যু গণপরিবহন, বিপণিবিতান ও কাঁচাবাজারে উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি, নেই কোনো তদারকি

মাহমুদ আজহার

নামেই শুধু লকডাউন

দেশজুড়ে এখন নামেই শুধু লকডাউন। কোথাও বিধিনিষেধ নেই, বালাই নেই স্বাস্থ্যবিধির। নেই কোথাও কোনো তদারকি। মাস্ক পরা ভুলে যেতে বসেছে মানুষ। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা কেবল কথার কথা। অন্য দিকে করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণ দুটোই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই সারা দেশে অবাধে চলছে গণপরিবহন। বিপণিবিতানসহ কাঁচাবাজারগুলো দেখার কেউ নেই। দেশে এরই  মধ্যে করোনার ভারতীয় ধরন বাড়ছেই। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে কড়াকড়ি আরোপ না করা হলে ভারতীয় ধরন দেশজুড়ে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যেতে পারে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশজুড়ে এখন ঢালাওভাবে লকডাউনের কোনো বিজ্ঞানভিত্তিক যুক্তি নেই। এলাকাভিত্তিক কার্যকর লকডাউন করতে হবে। মানুষকে মাস্ক ব্যবহার করাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। প্রয়োজনে আইন করে তার কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর গতকাল জানিয়েছে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৫০ জনের, যা গত ৪৯ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৫৪ জনের, যা গত ৩৬ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। গতকাল বিকালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। এর চেয়ে বেশি সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল গত ২৬ এপ্রিল। সেদিন ৩ হাজার ৩০৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়। আর এর চেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছিল ৯ মে, সেদিন মৃত্যু হয় ৫৬ জনের।

এ দিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে চলমান ‘লকডাউন’ বা ‘বিধিনিষেধ’ আগামী ১৬ জুন পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। গত ৬ জুন এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এতে বলা হয়, করোনা সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের সব বিধিনিষেধের সময়সীমা ৬ জুন মধ্যরাত থেকে ১৬ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো। কিন্তু বিধিনিষেধে যেসব মূলনীতি মেনে চলতে হয়, তা সারা দেশে কোথাও কার্যকর হচ্ছে না। এমনকি সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কঠোর লকডাউনেও বাস্তবায়ন হচ্ছে না সেসব নির্দেশনা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যেভাবে এখন দেশজুড়ে লকডাউন দেওয়া হচ্ছে তার বিজ্ঞানসম্মত কোনো যুক্তি নেই। যেই এলাকায় সংক্রমণ, সেই এলাকায় লকডাউন থাকা উচিত। সেই এলাকায় কাউকে ঢুকতে এবং বের হতে দেওয়া যাবে না। এখন আবার সংক্রমণের হার বাড়ছে বিশেষ করে সীমান্ত এলাকায়। এর দুটি কারণ আছে। প্রথমত, ঢাকা থেকে ঈদের ছুটিতে মানুষ বাড়ি যায়, তখন সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি নিয়ে গেছে। দ্বিতীয়ত, ভারতের সঙ্গে স্থলবন্দরগুলোতে পণ্যসহ সীমিত পরিসরে মানুষের যাতায়াত আছে। আবার অবৈধভাবেও মানুষ যাতায়াত করছে। এটা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে পারছে না সরকার। মালামাল আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে যারা গাড়িচালক বা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদের ব্যাপারে তারা ঠিকমতো কোয়ারেন্টাইন করছে কি তার নজরদারি বাড়াতে হবে। এটা করতে না পারলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বেই। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, মানুষ ফুটপাথে হাঁটছে, গণপরিবহনে যাচ্ছে, কিন্তু অধিকাংশ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। সামাজিক দূরত্বও মেনে চলতে অনীহা। কাঁচাবাজার বা বিপণিবিতানগুলোতে বালাই নেই স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের। প্রতিদিন বিকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত রাজধানীর শাহজাদপুরে সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে ভ্যানে পোশাকসহ নানা নিত্যপণ্য বিক্রি করতে দেখা যায়। সেখানে ক্রেতারাও হুমড়ি খেয়ে পড়েন। অধিকাংশ ক্রেতা বিক্রেতার মুখে দেখা যায় না মাস্ক। খিলগাঁও তালতলা-বটতলা এলাকায় প্রতিদিনই বিকাল থেকে দীর্ঘ রাত পর্যন্ত বিভিন্ন দোকান খোলা রাখা হয়। সেখানেও প্রতিদিনই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ভিড়। কিন্তু অধিকাংশের মাস্ক ব্যবহারে অনীহা। অবশ্য এখন রাত সাড়ে ৯টার পর সব খাবার দোকানসহ বিপণিবিতান বন্ধ রাখা হয়। তবে এর মধ্যেই ভ্রাম্যমাণ আদালত বা প্রশাসনিক তদারকি আরও বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, ‘অসচেতনতার কারণে অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করছেন না। ফলে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা, বাড়ছে মৃত্যু ঝুঁকি। ঢাকা জেলায় সংক্রমণ অনেক কমে এসেছে। কিন্তু এখন ঝুঁকি দেখা দিয়েছে সীমান্ত এলাকার জেলাগুলোয়। সেখানে ভারতীয় ধরনে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। করোনা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ধরন তৈরি করে। মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে যে কোনো ধরন থেকেই সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর