বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়েও ঠাঁই নেই হাসপাতালে

২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ১৬ হাজার ২৩০, মৃত্যু ২৩৭, নমুনা দিতে গিয়ে ছটফট করে মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়েও ঠাঁই নেই হাসপাতালে

দেশে করোনার দাপট বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র হচ্ছে হাসপাতালে শয্যা সংকট। রাজধানীর বড় বড় হাসপাতালগুলোর করোনা ইউনিটের নোটিস বোর্ডে অধিকাংশ সময় লেখা থাকছে ‘শয্যা খালি নেই’। তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরে রোগী ভর্তি করাতে পারছেন না স্বজনরা। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ১৬ হাজার ২৩০ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। বেড়েছে শনাক্তের হার। মৃত্যু হয়েছে ২৩৭ জনের। মোট মৃত্যু ছাড়িয়েছে ২০ হাজার। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নমুনা দিতে লাইনে দাঁড়িয়েও একজনের মৃত্যু হয়েছে গতকাল। সব জেলা-উপজেলায় সংকটাপন্ন করোনা রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থা তৈরি না হওয়ায় প্রতিদিন অসংখ্য রোগী ঢাকায় আসছেন চিকিৎসা নিতে। তবে হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরেও মিলছে না ভর্তির সুযোগ। গত কয়েকদিন ধরে তীব্র শ্বাসকষ্টে ভোগা নোয়াখালীর বাসিন্দা সামছুন্নাহারকে তার ছেলে আলামিন গত মঙ্গলবার কুমিল্লায় নিয়ে যান হাসপাতালে ভর্তি করাতে। শয্যা খালি না থাকায় গতকাল ভোরে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে আসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করাতে। সিট খালি নেই জানিয়ে তাকে রোগী নিয়ে মুগদা হাসপাতাল কিংবা ডিএনসিসি করোনা হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেয় ঢামেক কর্তৃপক্ষ। বেলা ১১টার দিকে মুগদা  মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসলে নোটিস বোর্ডে লেখা দেখেন ‘বেড খালি নেই’। দিশাহারা আলামিনকে বার বার মায়ের পাশে গিয়ে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করতে দেখা যায়। গতকাল এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে মুগদা হাসপাতাল থেকে অন্তত ছয়জন রোগী ফিরে যেতে দেখা যায়।

এদিকে মুগদা হাসপাতালে বেলা ১১টায় শয্যা খালি না থাকায় রোগী ভর্তি করাতে না পারলেও স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দুপুর ১২টা পর্যন্ত হাসপাতালের ৩৫০টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ৭৫টি খালি ছিল। ২৪টি আইসিইউর মধ্যে খালি ছিল ১টি। তবে গতকাল দুপুরে মুগদা হাসপাতালের পরিচালক অসীম কুমার নাথ বলেন, হাসপাতালে ৩২০ করোনা রোগী ভর্তি আছেন। এ মুহূর্তে আরও ৫ থেকে ১০ জনকে ভর্তি করলে অন্য রোগীরা ঠিকমতো অক্সিজেন পাবেন না। চলমান বিধিনিষেধের মধ্যেই করোনা সংক্রমণ হু হু করে বেড়ে চলেছে। বাড়ছে অক্সিজেন ও আইসিইউ চাহিদাসম্পন্ন সংকটাপন্ন রোগীর সংখ্যা। সময়মতো জরুরি চিকিৎসা না পেয়ে অনেকেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছে। গত ২৪ ঘণ্টায় টানা চতুর্থ দিনের মতো দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু দেখেছে দেশ। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩৭ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দেশে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ১৬ জনে। এই সময়ে ৫৩ হাজার ৮৭৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৬ হাজার ২৩০ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩০.১২ শতাংশ যা আগের দিনের চেয়ে ১.৬৮ শতাংশ বেশি। দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ১০ হাজার ৯৮২ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৮৮৪ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২৩৭ জনের মধ্যে ১৪৯ জন ছিলেন পুরুষ ও ৮৮ জন নারী। ৭০ জন ঢাকা, ৬২ জন চট্টগ্রাম, ২১ জন রাজশাহী, ৩৪ জন খুলনা, নয়জন বরিশাল, ১৮ জন সিলেট, ১৬ জন রংপুর ও সাতজন ময়মনসিংহ বিভাগে মারা গেছেন। এ ছাড়া দেশের অধিকাংশ হাসপাতালে করোনা রোগীর পাশাপাশি প্রতিদিন উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অনেকের মৃত্যু হচ্ছে। এমনকি গতকাল সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে গিয়ে ইকবাল হোসেন (৪৩) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জানা গেছে, ইকবাল হোসেন এক সপ্তাহ ধরে করোনা উপসর্গে ভুগছিলেন। গতকাল নমুনা পরীক্ষার জন্য লাইনে অপেক্ষমাণ অবস্থায় অচেতন হয়ে পড়েন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

সর্বশেষ খবর